আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তার নাম আজমল হক। বয়স ৫১। ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন দেশটির নিরাপত্তার দায়িত্বে। নিজের দায়িত্ব থেকে অবসর পেয়েছেন ২০১৬ সালে। অথচ অবসরের ২ বছরের মাথায় তার জন্মভূমি আসামের রাজ্য সরকার বলছে, তিনি নাকি সেদেশের নাগরিক নন। এমন অবস্থায় এসে তিনি পড়েছেন বিপদে। বলছেন, এটা এখন জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন। প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ দাবী আর আপত্তি জানানো ছাড়া তার হাতে আর কোন বিকল্প নেই।

ভারতের আসাম রাজ্যে এরকম অসহায় মানুষের সংখ্যা এখন ৪০ লাখ। সম্প্রতি ভারতীয় নাগরিকত্বের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ দিয়েছে রাজ্য সরকার।

গত সোমবার আসামের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) কর্তৃপক্ষ এ তালিকা প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এই তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষেরা আর এদেশের নাগরিক নন। আর নাগরিকত্ব খুইয়ে এই মানুষগুলোর মাথায় হাত পড়েছে। তারা দিকভ্রান্ত হয়ে গেছেন। নিজেদের পরিচয় সংকটে ভোগা এই মানুষ গুলোর একজন এই আজমল হক।

আসামের কামরুপ জেলার ছায়াগাও শহরের বাসিন্দা আজমল। তার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় সেনাবাহিনীতে ব্যয় করেছেন তিনি।

১৯৬৬ সালের নির্বাচনী তালিকায় তার বাবার নাম ছিল। কিন্তু ৫২ বছর পর এসে দেশটিতে নাগরিকত্ব আর নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য এখন লড়তে হচ্ছে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে। তার সাথে তার ১৬ বছরের ছেলে ইলিয়াস আর ১৪ বছরের মেয়ে সাজেদাকেও একই অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়েছে। বাবার সাথে তাদের নামও আসেনি প্রকাশিত নাগরিক তালিকায়।

তবে অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তার মা রহিমুম নেছা ও স্ত্রী মুমতাজ বেগমের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ২০১৬ সালে অবসর নেওয়ার আগে বাংলাভাষী আজমল হক সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকানিক্যাল কোরের জুনিয়র কমিশনড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অনেকটা আক্ষেপ আর অসহায়ত্ব নিয়ে আজমল হক বলেন, ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকা আর ১৯৪৭ সালের জমি সংক্রান্ত কাগজপত্রে আমার বাবার নাম ছিল। একজন সাবেক সেনাকর্মকর্তার পরিচয় কি আমার এবং আমার পরিবারের নাগরিকত্ব যাচাই করার জন্য যথেষ্ট নয়?

তিনি জানান, পরিবারের সদস্যদের যাচাইয়ের সময় তাদের কাছাকাছি থাকার জন্য তাকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ দাবী আর আপত্তি জানানো ছাড়া আমাদের হাতে আর কোন বিকল্প নেই। এটা এখন আমাদের জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন।

আজমল আরো একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, গত বছর নির্বাচনের সময় পুলিশ তাকে একজন সন্দেহভাজন ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে অবশ্য নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অভিযোগ তুলে নেয় তারা। কিন্তু একজন সেনাসদস্য হয়ে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়া খুবই লজ্জার ব্যাপার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে তিনি সংগ্রাম করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘একজন ভারতীয় হিসেবে আমার এবং আমার পরিবারের জাতীয়তা প্রমাণ করার জন্য সমস্ত রকম দলিল আমার কাছে আছে। আর এর জন্য যত টাকা লাগে সেটা ব্যয় করতেও প্রস্তুত আমি। কিন্তু এটা কি ধরণের কষ্ট। একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সত্বেও আমাকে আমার জাতীয়তার প্রমাণ দিতে হচ্ছে। কিন্তু যারা দিনমজুর তাদের কথা চিন্তা করেন তারা এর কারণে একটা অনিবার্য ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে?