শাহেদ মিজান, সিবিএন:
ইয়াবা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে নিয়ে কক্সবাজারে আরো পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) র‌্যাবের বিশাল বহরের বর্ণাঢ্য টহলের মধ্যে দিয়ে এসব নতুন ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়। কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত এই টহল টহল দেয়া হয়। এতে অংশ নেয় আগের দু’ক্যাম্প ও নতুন পাঁচ ক্যাম্পের র‌্যাব সদস্যরা। টহলে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেহেদী হাসান।

র‌্যাবের দেয়া তথ্য মতে, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি ইয়াবা ব্যবসা। ইয়াবার রাজ্য কক্সবাজারে র‌্যাব আরো শক্তিশালী হওয়া দরকার। তাই এবার ইয়াবা ঠেকাতে কক্সবাজারের টেকনাফে নতুন করে পাঁচটি ক্যাম্প করেছে র‌্যাব। সাধারণ থানার চেয়ে বেশি জনবলের এসব ক্যাম্পে মাদক শনাক্তকরণে ডগ স্কোয়াডও থাকছে।

সাগরঘেঁষা টেকনাফের ওপারেই মিয়ানমার। সীমান্তে পাহারার জন্য বিজিবি এবং নৌপথ পাহারার জন্য কোস্টগার্ড রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে পুলিশ। তারপরও ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়নি। অবশ্য অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত বলে তা বন্ধ হচ্ছে না। এই অবস্থায় নতুন ক্যাম্প করছে র‌্যাব।

কোম্পানি কমান্ডার মেহেদী হাসান জানান, নতুন ক্যাম্পগুলো টেকনাফের স্থাপন করা হয়েছে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ সদর, বাহারছড়া ও হোয়াইক্যংয়ে। মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় লিংকরোড় থেকে র‌্যাবের আনুষ্ঠানিক যৌথ টহল দিয়ে এসব ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। টহলে অংশ নেয় র‌্যাবের কক্সবাজার অঞ্চলের সাত ক্যাম্পের ২৪টি টহল দল। মহড়াটি লিংকরোড় থেকে প্রথমে কক্সবাজার শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে মেরিনড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফে উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বিকাল পাঁচটা নাগাদ টেকনাফে গিয়ে শেষ হয়।

তথ্য মতে, শাহপরীর দ্বীপের ক্যাম্পটি হাজি বশির আহমদ উচ্চবিদ্যালয়ে। এটি নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরঘেরা এলাকা। মিয়ানমার থেকে নদী ও সাগরপথেই ইয়াবার চালান বাংলাদেশে আসে। এ পথে বিভিন্ন সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বড় বড় চালান আটকও করেছেন। এখানে নাফ নদীর তীরসংলগ্ন এলাকায় বিজিবির একটি সীমান্তচৌকি ও পুরান বাজার এলাকায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি স্টেশন আছে। সাবরাংয়ের ক্যাম্পটি হচ্ছে সাবরাং ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে। এর পূর্ব দিকে নাফ নদী ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। নাফ নদীর তীরে নয়াপাড়া এলাকা ও খুরেরমুখে বিজিবির দুটি সীমান্তচৌকি রয়েছে। তারপরও নাফ নদীসংলগ্ন নয়াপাড়া, আছারবনিয়া, ঝিনাপাড়া, মগপাড়া, হারিয়াখালী ও সাগরসংলগ্ন খুরেরমুখ, বাহারছড়া, আলীরডেইল এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ইয়াবার চালান আটকের নজির আছে। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ক্যাম্পটি হচ্ছে ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে। এই এলাকায় বিজিবির একটি ব্যাটালিয়ন, একটি সীমান্তচৌকি ও কোস্টগার্ডের একটি স্টেশন রয়েছে। এ ইউনিয়নের নাজিপাড়া, মৌলভীপাড়া, খাংকারপাড়া, হাবিবপাড়া, বরইতলি, কেরুনতলি, মহেষখালীয়াপাড়া, লেঙ্গুরবিল, লম্বরী, হাতিয়ারঘোনা এলাকার বিভিন্ন পথ দিয়ে ইয়াবার চালান মিয়ানমার থেকে আসছে। এ ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন। বাহারছড়ায় ক্যাম্পটিও হচ্ছে উপকূলীয় এলাকায়। সেখানে পুলিশের একটি ফাঁড়ি, কোস্টগার্ডের একটি সিজি স্টেশন ও বিজিবির একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকি রয়েছে। পরের ক্যাম্পটি হচ্ছে হোয়াইক্যং তেচ্চিব্রিজ মোহাম্মদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ ক্যাম্পের পাশেই পুলিশের একটি ফাঁড়ি ও বিজিবির দুটি সীমান্ত ফাঁড়ি রয়েছে। টেকনাফে আগে থেকেই র‌্যাবের একটি ক্যাম্প ছিল। নতুন পাঁচটি হওয়ার কারণে সেখানে ক্যাম্পের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়ে।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, টেকনাফের শীর্ষ ২০ জন দেশে মোট ইয়াবা ব্যবসার ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন। কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন সরাসরি ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন, যাঁদের মধ্যে টেকনাফ সদরে তালিকাভুক্ত বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন ১৯৩ জন। টেকনাফের শীর্ষ ২০ জন মোট ইয়াবা ব্যবসার ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন।