ডেস্ক নিউজ:

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে শিক্ষার্থীদের চাপা দেওয়া বাস জাবালে নূরের (ঢাকা মেট্রো ব-১১৯২৯৭) পরিচালক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের শ্যালক মো. নান্নু মিয়া (৫০)। একই সঙ্গে তিনি মন্ত্রীর খালাতো ভাইও। থাকেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকায়। জাবালে নূর পরিবহনের সঙ্গে মাহমুদ হোসেন নামে নৌপরিবহনমন্ত্রীর আরেক আত্মীয়ও জড়িত আছেন বলে জানা গেছে।
বিআরটিএ’র তথ্যমতে, জাবালে নূর পরিবহনের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তিনি সরাসরি কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও মন্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। পরিবহনটি মো. নান্নু মিয়ার প্রভাবেই সড়কজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে পরিবহন জগতে প্রভাবশালী পরিচালক হিসেবেও নান্নু মিয়ার পরিচিতি আছে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম সজীব ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন আরও ৮-১০ জন শিক্ষার্থী। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলমও একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা। মহাখালী বাস টার্মিনালের এই পরিবহন শ্রমিক নেতা একটি পরিবহন কোম্পানির বাসেরও চালক। স্বাভাবিকভাবে এ দুর্ঘট্না নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যেও ক্ষোভ কাজ করছে। তবে নান্নু মিয়ার কারণে কেউ মুখ খুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহনের মালিক ও শ্রমিক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আগারগাও, মিরপুর ১০, কালশী, বিশ্বরোড, এয়ারপোর্ট, উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুর রুটে জাবালে নূর পরিবহন এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে। বর্তমানে এই রুটে কোম্পানিটির ৫০টির মতো বাস চলছে। বাস মালিক সমিতির বিভিন্ন বৈঠকে এই পরিবহনের চালকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও নৌপরিবহনমন্ত্রীর শ্যালক নান্নু মিয়ার কারণে কেউ উচ্চবাচ্য করেন না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে জাবালে নূরের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন কেটে দেন। চেষ্টা করে নান্নু মিয়ারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য নিতে রবিবার রাতে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে দুর্ঘটনার পরপরই রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকরা নৌপরিবহনমন্ত্রীকে বলেন, চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় সড়কে নিয়মিত প্রাণ ঝরছে। আজও ঢাকার কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে এদের (চালক-হেলপার) আপনিই প্রশ্রয় দেন। আপনার প্রশ্রয়ে তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে।
এর জবাবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘যে অপরাধ করবে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। এই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতা করার কারও কোনও সুযোগ নেই।’
এসময় তিনি অনেকটা চালকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘ভারতের মহারাষ্ট্রে এক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছে, তা নিয়ে কোনও হইচই নেই। অথচ বাংলাদেশে সামান্য কোনও ঘটনা ঘটলেই হইচই শুরু হয়ে যায়।’
মহারাষ্ট্রের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে কুর্মিটোলার সড়ক দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিক বলছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘আগে চুক্তিটা হোক, তারপর বলছি।’ চুক্তি শেষে তিনি এ বিষয়ে আর কোনও কথা না বলে বের হয়ে যান।