শাহিদ মোস্তফা শাহিদ,কক্সবাজার সদর:

ঘটাও করে বিয়ের সব আয়োজন করা হয়েছে। একটু পরেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতে যাত্রা করবে কিশোরী শারমিন ও সুমাইয়া। নিজেদের অনিচ্ছা স্বত্বেও নিরুপায় শারমিন ও সুমাইয়া জান্নাত
বধু সাজতে ঈদগাঁও বাজারের দুটি পার্লারে তখন। বাকি শুধু বর পক্ষের লোকজন আসা। ঠিক ওই সময়ে হাজির হন ইউএনও। সব আয়োজন পণ্ড করে থামিয়ে দেন শারমিন ও সুমাইয়ার অন্ধকার ভবিষ্যতে যাত্রার। গল্পটা বলছিলাম কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী কালু ফকিরপাড়া আদর্শ বালিকা মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শারমিন আক্তার (১৪) ও ঈদগাঁও মধ্যম মাইজ পাড়ার হাজেরা খাতুনের মেয়ে সুমাইয়া জান্নাত (১৪) এর কথা। যাদের আজ শুক্রবার দুপুরে অপরিণত বয়সে বধু সেজে শশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী শারমিনের বাল্যবিয়ের খবরটি দৈনিক সকালের কক্সবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল হাসানের নজরে আসে। এছাড়া অন্যান্য মাধ্যমেও বাল্যবিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন ইউএনও।স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের উত্তর মাইজপাড়া এলাকার মো. আলীর কিশোরী মেয়ে শারমিন আক্তারের সাথে বিয়ে ঠিক হয় ইসলামাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ খোদাইবাড়ী এলাকার মোহাম্মদ বশিরের ছেলে মো. রুহুল আমিন। বিয়ের কাবিননামা করার জন্য কনের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ভূয়া জন্ম সনদও তৈরী করা হয়। ওই জন্ম সনদ দিয়ে ইতোমধ্যে কাবিননামা সম্পন্ন করা হয়।চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াজ করিম বাবুল বলেন, ‘শারমিন নামের ওই কিশোরীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি বৃহস্পতিবার আমি জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানায়। পরে আজ শুক্রবার দুপুর ১২ টায় ইউএনও স্যার উপস্থিত হয়ে এই বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন। পরে ওই কিশোরীকে আমার জিম্মায় দেন।
পরে তিনি ঈদগাঁও ইউনিয়নের মধ্যম মাইজপাড়া এলাকায় সুমাইয়া জান্নাতের বাসায় যান। পরে তার বয়স কম হওয়ায় মা হাজেরা খাতুনের জিম্মায় বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না দিতে অঙ্গিকারনামা নেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল হাসান মুঠোফোনে জানায়, খবর পেয়ে চৌফলদন্ডীর মাইজপাড়া এলাকায় কনের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় অভিযান টের পেয়ে কনের বাবা ও অভিভাবকেরা পালিয়ে যায়। পরে কিশোরী শারমিনকে চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে শারমিনের বিয়ে হবে না। তার পূণরায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হবে। একই সাথে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
কিশোরী শারমিনের কাবিননামা সম্পন্ন করে ইসলামাবাদের কথিত কাজী আবু বক্কর । আবু বক্করের বিষয়ে ইউএনও বলেন, তাকে (কাজী) ফোন দেওয়া হয় বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার জন্য। কিন্তু তাৎক্ষণিক তিনি ফোন বন্ধ করে দেন। তার (কাজী) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চৌফলদন্ডী কালু ফকির পাড়া আদর্শ বালিকা মাদ্রাসার সুপার মৌলানা মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, শারমিনকে জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে চেয়েছিল তার পরিবার। বাল্যবিয়ে বন্ধ করায় ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।