নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিতব্য কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জেলাজুড়ে এক সপ্তাহের লাগাতার হরতালের ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামাল। মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন। এসময় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়াসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘সরকারি দলের প্রার্থীর অবৈধ প্রভাব, নীলনকশা প্রণনয়ন আর পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমান ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, বান্দরবান থেকে সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং জেলা বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ-ডাকাত, খুনী ও মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ভাড়া এনে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেলে জড়ো করেছেন। এসব বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আজ রাতের মধ্যেই গ্রেফতার করতে হবে। তা না হলে নীলনকশার অংশ হিসেবে এসব সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালেট ডাকাতি করবে।’

মেয়র সরওয়ার কামাল আরো বলেন, ‘ভোট ডাকাতি হলে আমরা কোনোভাবেই ছাড় দেবো না। কেন্দ্র দখল করা হলে আমরা ভোটারদের নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করবো। তা না পারলে আন্দোলনের মাধ্যমে কক্সবাজারকে অচল করে দেয়া হবে। আমরা চাই ভোট সুষ্ঠু হোক। ভোট সুষ্ঠু না হলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে অবস্থান করা তিন হাজারের বিদেশীসহ পুরো কক্সবাজারের মানুষের সমস্যা সৃষ্টি হবে। আমরা ওই পথে যেতে চাই না। তাই প্রশাসনের প্রতি আমাদের প্রাণের দাবি, ভোট সুষ্ঠু করুন। যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশ রক্ষীবাহিনীর ভূমিকায় কাজ করছে। তারা সরকারি বাহিনী হয়েও রাজনৈতিক আচরণ করছে। পুলিশ বিনা অপরাধে আমাদের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, দমন-পীড়ন ও এজেন্টদের বাড়িতে তল্লাশীসহ নানা হয়রানি করছে। আগত ২৩ জুলাই আমার শেষ পথসভায় বাধা দিয়ে তা পন্ড করার চেষ্টা করে। এসময় আমাকে গাড়ি চাপা দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশের অতি উৎসাহী সদস্যরা। আমাদের ১৫জন সমর্থককে লাঠিচার্জ করে আঘাত করে।’

তিনি বলেন, ‘পৌরবাসী নীরব ভোট বিপ্লবের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই সরকারি দল দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারি দলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় প্রভাব প্রয়োগ করে পুলিশ ব্যবহার করে আমাদেরকে দমন করার চেষ্টা করছে। সরকারি বাহিনী হয়েও পুলিশ নির্লজ্জভাবে আওয়ামী লীগের পেটুয়া বাহিনীর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে ভোটারসহ সাধারণ মানুষ পুলিশের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।’

সরওয়ার কামাল অভিযোগ বলেছেন, শুরু থেকেই সরকারি দলের প্রার্থীর লোকজন তাঁর নারিকেল গাছ মার্কার সমর্থকদের বাধা, মাইকিংয়ে বাধা, ব্যানার-পোস্টার লাগাতে বাধা এবং লাগানো ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। সর্বশেষ সোমবার ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে কেন্দ্রের আশেপাশের লাগানো ব্যানার-পোস্টারও ছিঁড়ে নিয়েছে। কিন্তু বিএনপির লোকজনও সোমবারের এই ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি।’

নাগরিক কমিটির এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, আমি ১৯৯৩ ও ২০০২ সালে পরপর দুইবার পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হই। একবার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করি। ২০১১ সালে জনগণের ভোটে আমি পৌর মেয়র নির্বাচিত হই। দল মতের উর্ধে উঠে আমি কাজ করি বিধায় সর্বশ্রেনীর মানুষের মাঝে আমার একটা সম্মানজনক অবস্থান রয়েছে। পৌরবাসী আমাকে খুবই ভালবাসে। এই বারের নির্বাচনে সেই অবস্থান আরো সুসংহত হয়েছে। আমার প্রতীক নারিকেল গাছ মার্কার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, বর্তমান পুলিশ বাহিনী ১৯৭৩ সালের ‘রক্ষি বাহিনীর’ স্থান দখল করেছে। তাদের উপর মানুষের আস্থা নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনা বাহিনী মোতায়েনের বিকল্প নেই। সংবাদ সম্মেলনে মেয়রপ্রার্থী সরওয়ার কামালের নির্বাচন পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে ৫ মেয়র পদপ্রার্থীসহ মোট প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ৮৬ জন। ১২ টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৪৪ হাজার ৩৭৩ জন ও মহিলা ভোটার রয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন। ১২ ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ৩৯ টি।