শাহেদ মিজান, সিবিএন:
একেবারে ঘনিয়ে এসেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার নির্বাচন। সময় মাত্র আর তিনদিন। কিন্তু প্রচারণার সময় আজ আর আগামীকাল। আগামীকাল ২৩ জুলাই রাত ১২টার মধ্যে শেষ হবে সকল নির্বাচনী প্রচারণা। তাই শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থীরা নির্ঘুম তুমুল প্রচারণা চালাচ্ছে। মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সবাই দিন-রাত নিরলস প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে তাদের সমর্থক ও পরিবারের লোকজনও পৃথক পৃথক ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। সব প্রার্থীর একযোগে সমানতালে ভোটার প্রচারণা আর ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় পুরো পৌর এলাকায় উত্তেজনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
তথ্য মতে, আলোচিত কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মুজিবুর রহমান (নৌকা), বিএনপির মনোনিত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম (ধানের শীষ), জামায়াত সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র (বরখাস্ত) সরওয়ার কামাল, জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী রুহুল আমিন সিকদার (লাঙ্গল) ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা জাহেদুর রহমান (হাতপাখা)। এই পাঁচ প্রার্থী সবাই নির্বাচনী মাঠে মুজিবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ও সরওয়ার কামাল জোরেসোরে প্রচারণা চালাচ্ছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুজিবুর রহমান সারা দিন বিপুল নেতাকর্মী সাথে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিশ্রামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালাচ্ছে। মুজিবুর রহমানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে কক্সবাজার এসেছেন প্রচারণা চালিয়েছেন দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় একটি দল ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওফেল। গতকাল শনিবার থেকে প্রচারণা চালাতে এসেছে কেন্দ্রীয় নেতা প্রসান্ত ভূষণ বড়ুয়া। তাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান গত কয়েকদিন প্রচারণা চালিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথক ভাবে তাঁর পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
নাগরিক কমিটির প্রার্থী সরওয়ার কামাল প্রতিদিন বেশ কয়েকটি এলাকায় একযোগে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের বিশাল বহর নিয়ে তিনি একাধারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্ব ছাড়াও আরো দলীয় নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজনের নেতৃত্বে আরো কয়েকটি দল সরওয়ার কামালের জন্য জোরশে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সরকারের দলের প্রার্থীর ইন্ধনে তাঁর নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যার কারণে ১৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার এবং বাকীরাও প্রচারণা অংশ নিতে পারছে না বলে অভিযোগ। তবে তাতেও দমে নেই সওয়ার কামাল। তিনি সাধারণ কর্মীদের সাথে নিয়ে দিন-রাত সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপি মনোনিত প্রার্থী রফিকুল ইসলাও বিরতিহীন ও অবিশ্রান্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দিন-রাত পৌর এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের ঘরে ঘরে ঘুরছেন তিনি। শেষ বারের মতো ভোট প্রার্থণা করছেন। একই সাথে রফিকুল ইসলামের পক্ষে বিরতিহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজ, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না। এই তিন নেতাও নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে রফিকুল ইসলামের পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করছেন। আরো প্রচারণা চালিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক হারুন অর রশীদ ভিপি। গতকাল শনিবার প্রচারণা চালাতে কক্সবাজারে এসেছেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক বাহার উদ্দীন বাহার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদলের সভাপতি এ.এম নাজিম উদ্দীন।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে সব প্রার্থী পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন। সেই থেকে তারা লাগাতার গণসংযোগসহ নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। মূল্যবান ভোটটি পেতে ভোটারদের ঘরে ঘরে হাজির হচ্ছে প্রার্থীরা। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি আর অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন ভোটারদের কাছে। ভোটারদের হাতে ধরে, বুকে জড়িয়ে ধরে আর কুশলবিনিময় করে ভোট প্রত্যাশা করছেন। পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে-গলিতে দিন পেরিয়ে রাত অবধি একটানা প্রচারণা চলছে। একই সাথে মাইকিং আর নানা প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে সমানভাবে।
মুজিবুর রহমান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কক্সবাজারের অনেক উন্নয়ন করেছেন। পর্যটন নগরীর পৌরসভার আরো অনেক উন্নয়ন দরকার। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে উন্নয়নের সে ধারা অব্যাহত রাখবে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে ডিজিটাল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সকল ওয়ার্ডকে সমান গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক সেবা ও উন্নয়ন করা হবে।
সরওয়ার কামালের প্রতিশ্রুতি হলো, তিনি যখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন তখন থেকে পৌরসভা উন্নয়নের গতিধারায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু গত নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে প্রথম দিকে ক্ষমতায় বসতে পারেনি। আবার দু’বছরের মাথায় ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বরখাস্ত হন। সে কারণে তার উন্নয়নের গতিধারা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি এবার মেয়র নির্বাচিত হলে কক্সবাজারকে আবার উন্নয়নের গতিধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।
রফিকুল ইসলাম প্রতিশ্রুতি হলো, কক্সবাজার পৌরসভা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলো। তবে শেষ মুহুর্তে হলেও এই পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করেছে বিএনপির সরকার। এর মাধ্যমে পৌরসভা বর্ধিত করণসহ অনেক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু সে ধারাবাহিকতায় অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, ওয়ার্ডগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানসহ প্রভুত উন্নয়ন করবেন। উন্নয়ন সংক্রান্ত ১৩টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ মোট ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মোট ভোটার রয়েছে। কক্সবাজার পৌর সভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭২৮জন। এতে পুরুষ ভোটার ৪৪ হাজার ৩৭৩ জন ও মহিলা ভোটার ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন। আগামী ২৫ জুলাই ভোট গ্রহণ করা হবে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর সাড়ে সাত বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ভোট দিন ঘনিয়ে এসেছে। এই মুহূর্তে আমরা অনেক সতর্ক। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সাথে ভোট গ্রহণের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।