আলমগীর মাহমুদ :

রিফুইজি পূর্ণবাসনে প্যানোয়া/পালংক্যি/বাকোলী নাম বাদ দিয়ে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নাম ধারনে বাধ্য হওয়া, সেই ভাগ্যহত জেলাটিই কক্সবাজার। রিফুইজির ভার বইতে গিয়ে হারাতে হারাতে তাঁর আর কিছুই নেই হারাবার।গায়ে লেগে থাকা স্বকীয় সংস্কৃতির নামটিও তাকেঁ দিতে হয়েছে বিসর্জন।তারপরও , মুক্তি মিলেনি ।১৭৯৯ সাল থেকে আজ অবদি।

আমরা যারা তারঁ ভূমিপুত্র সয়ে সয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে বেঁচে আছি।দুখের ভার বইবার শক্তি হারালে গরম নি;শ্বাস ছেড়ে আকাশের পানে তাঁকিয়ে বলেছি ”অ..মুণিব, এত মন্দভাগ্য কেন কপাল লিখন করে পাঠালে? এমন চিন্তায় অভিমান করে করে জানিয়েছি…
“দু;খ যদি দাও হে প্রভু
বক্ষ দিও সহিবারে”

রোয়াইঙ্গা ক্যাম্পের বাঁশবোঝাই ট্রাক টমটম,সি,এন,জিতে চাপা পড়ে রুটি রুজির সন্ধানীরা হারিয়েছে প্রাণ।নিষ্পাপ শিশু পড়েছে মৃত্যুর কোলে।কেঁদে উঠেছে জাহান।রব উঠেছে “এ দুখ নয় কপাল লিখনের” এ দুখ সিষ্টেমের ” আমরা বাঁচতে চাই।’নিরাপদ বাঁচা’ আমার অধিকার,আমার পাওনা। রাষ্ট্রযন্ত্র আমার পাওনা আমাকে ফেরত দিন। “আমি বাঁচতে চাই”

বৃটিশরা ১৭৯৯ সালে আরাকানি রিফুইজি পূর্ণবাসনে যে মেধা, প্রজ্ঞা,দূরদর্শীতা রেখে গেছেন তার একটা পৃষ্টাও যদি আমাদের নীতিনির্ধারকদের কর্ণে পৌঁছাত বাঁশ বাঁশই থাকতো, খুনির খাতায় উঠতো না তার নাম,।এই দুর্গতি রোয়াইঙ্গা রিফুইজি পূর্ণবাসনে গলদেই সৃষ্ঠ।

বৃটিশ সরকার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে ১৭৯৯ সালে আরাকানি রিফুউজি পূর্ণবাসনের দায়িত্ব দিয়ে বাকোলী অঞ্চলে পোষ্টিং দেন।তিনি জঙ্গলাকীর্ণ, দুর্গম,কষ্টসাধ্য সমস্ত অঞ্চল ঘুরে আরাকানী রিফুইজি পূর্ণবাসনে কোম্পানীর করণীয় ‘ সুপারিশ রিপোর্ট পেশ করেন।

বর্তমান আমাদের সরকারের এশিয়ান হাইওয়ে ,যাহ ঘুং্ধুম হয়ে মায়ানমারের সংযোগের কাজ চলমান।আমাদের সরকারের হাতে প্রাণ পাওয়া রামুর নান্দনিক সেনানিবাসটি ‘কোম্পানির করণীয় সুপারিশ রিপোর্টে হিরাম কক্সেরই দেখা স্বপ্ন ” যাহ বৃটিশ সরকারকে ১৭৯৯ সালেই প্রয়োজনীয়তা জানান দিয়ে যান তিনি।

রামু থেকে বালুখালী পর্যন্ত একটি রাস্তা করার সুপারিশ ল্যাফটেনাণ্ট ব্রগহামই প্রথম বৃটিশ সরকারকে তাগাদা দেন।হিরাম কক্স ও এই রোড়ের কথা সুপারিশ রেখে, রাস্তার দুধারে পাঁচমাইল ব্যাসার্ধে রামু থেকে বালুখালী পর্যন্ত রিরুইজিদের দিয়ে জমি বের করে তাতে পূর্ণবাসন,প্রথম তিন বছর বিনে খাজনায়, চতুর্থ বছর থেকে কানিতে বোর্ড অব রেভেনিউ দুই টাকা খাজনা নির্ধারনের পক্ষে মত দেন।

আরাকানি রিফুইজিদের দিয়ে রাস্তাটি নির্মানের ঈঙ্গিত করেন,তাদের দিয়ে কাজ শুরুও করান।অতিরিক্ত খাটুনিতে ম্যালেরিয়ায় কক্স সাহেব মারা গেলে মি; কারের হাতে দায়িত্ব বর্তায়।তিনি রিফুইজিদের দিয়ে রাস্তাটির নির্মান সমাপ্তি করান।

সাতসমুদ্র তেরনদীর পাড়ের বৃটিশরা প্রয়োজনীয়তায় দুইশত বছর পরেও যদি কারো কাছে নমস্য কোন চিন্তা রেখে যেতে পারে, আমরা কেন বাঁশ বোঝাই বাহনকে পারছি না নিরাপদে পৌঁছাতে? চমটম,সি,এন,জিতে রিজিক সন্ধানীদের পারছি না নিরাপদের নিশ্চয়ন করতে?

আমরা যে দীর্ঘচিন্তার ধার ধারিনা, সিষ্টেমের তোয়াক্কা করি না, ট্যাবলেট ক্যাপসুল বাদ দিয়ে মলমেই ক্ষত সারাতে চাই!! .. ‘——-‘আসুন ভাবি’ -“বেওয়ারিশ লাশ হবার আগেই “…

লেখক ;- বিভাগীয় প্রধান।সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া কলেজ কক্সবাজার।
alamgir83cox@gmail.com