তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:

রাত পার হলেই চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে ঘিরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। শেষ মুহুর্তে পার্থীরা নিজের যোগ্যতাকে জানান দিতে ভোটারদের সাক্ষাৎ ও ফোনে আলাপ সারছেন। একজন আরেকজনের সাথে হাত মেলাচ্ছেন, কোলাকুলি করে শুভকামনা জানাচ্ছেন। ৪৩ বছর পর এ নির্বাচনে হচ্ছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চার সকল অন্ধকার দূর করা সম্ভব বলে জানান শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। পদধিকার বলে তিনি চট্টগ্রাম জেলঅ শিল্প একাডেমির সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এজন্য সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটির মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে অপূর্ণতা বিরাজ করছে তা পূরন হবে বলে আমার বিশ্বাস। আগমীকাল শনিবার ২১জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। চারটি পদে ৫২জন প্রার্থী প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করবে। ১৫ জনের এ পর্ষদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন ১০ জন। এর মধ্যে পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক, কোষাধ্যক্ষ পদে জেলা কালচারাল কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসন মনোনীত তিনজন সদস্যদের সমন্বয়ে এ পর্ষদ গঠিত হবে। ভোটার রয়েছে মোট ৬৭১ জন।

শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে গত ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত সহভাপতি পদে ৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন, যুগ্ম–সম্পাদক পদে ৯ জন এবং কার্যকরী সদস্য পদে ৩২ জনসহ মোট ৫২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করেন। প্রার্থীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাবিবুর রহমান এবং সদস্য সচিব ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মুনীর হোসাইন খানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রথম বারের মতো হতে যাওয়া এ নির্বাচনে কার্যকরী কমিটির সহসভাপতি পদে ২ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ১ জন, যুগ্ম–সম্পাদক পদে ২ জন ও কার্যকরী সদস্য পদে ৫ জন নির্বাচিত হবেন।

এদিকে সহসভাপতি পদে লড়ছেন রিজোয়ান রাজন, মওদুদুল আলম, জাহাঙ্গীর কবির, এস কে এস মাহমুদ (আলোক মাহমুদ), রনজিৎ রক্ষিত, তাপস শেখর, সাহাবউদ্দিন আহমদ ও স্বপন কুমার দাশ। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন এবিএম রাশেদুল হাসান (রাশেদ হাসান), সাইফুল আলম বাবু ও সাংবাদিক মো. সরোয়ার আমিন। এছাড়া যুগ্ম–সম্পাদক পদে মো. জামশেদ উদ্দিন, এসএম সাঈদ সুমন, মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, মো. মঈন উদ্দিন কোহেল, কমল দাশ, প্রণব কুমার চৌধুরী, আলাউদ্দিন তাহের ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং কার্যকরী সদস্য পদে সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল, দেবাশিষ রুদ্র, সাংবাদিক সাইদুল ইসলাম, বাপ্পা চৌধুরী, ইনতেখাব আলম মান্না, মো. ইকবাল হোসেন, এ কে এম জয়নাল আবেদীন, মোহাম্মদ আলী, মোস্তফা কামাল যাত্রা, মো. আবদুল মতিন (শাহীন মাহমুদ), উত্তম কুমার বিশ্বাস, মুহাম্মদ সাহিদ এমরান, এমএ আজাদ ফিরোজী (শাওন পান্থ), জসিম উদ্দিন মিঠুন, নুবুয়াত আরা সিদ্দিকা রকি, হিলোল রায়, সামশুল হায়দার তুষার, আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী, মো. শহিদুল করিম চৌধুরী নিন্টু, মোহাম্মদ লিপটন, দীপেন কান্তি চৌধুরী, শাখাওয়াত উলাহ চৌধুরী সৌরভ, রুবেল দাশ প্রিন্স, প্রবীর পাল, কামরুল আযম চৌধুরী টিপু, জালাল উদ্দিন সাগর, জাহেদ হোসেন, নিশাত হাসিনা শিরীন, অঞ্চল কুমার চৌধুরী, কঙ্কন দাশ, সাজ্জাদ বিন খালেদ সুমন ও দিদারুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সহসভাপতি প্রাথী রিজোয়ন রাজন বলেন, দীর্ঘ দিন নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচন চট্টগ্রামের সাংস্কৃতি অঙ্গনে ইতিবাচক মাইলফলক হবে। তিনি জয়ের প্রতি শতভাগ আশবাদী।

নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বনিতা করা নাট্য নির্দেশক সাইফুল আলম বাবু বলেন, তিনি ভোটারদের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল। জয়ের ব্যাপারেও তাই শতভাগ আশাবাদী।

প্রসঙ্গত: এডহক কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম। তিন বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালনা কমিটি করার নিয়ম থাকলেও গত ১৬ বছর ধরে কোনো নির্বাচনই হয়নি চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে এডহক কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনার ভার ১৫ সদস্য কার্যনির্বাহী কমিটির ওপর ন্যস্ত করার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয়নি। চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের প্রায় সব জেলাতেই ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলেও চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো নির্বাচন হয়নি। ফলে চট্টগ্রামের শিল্প–সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে এ নিয়ে নানা অসস্তোষ ও ক্ষোভ ছিল। অবশেষে কার্য নির্বাহী কমিটির আওতায় আসতে চলেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রাম। এর ফলে ১৬ বছর ধরে চলে আসা অ্যাডহক কমিটি বিলীন হতে যাচ্ছে।

প্রাপ্ত তর্থমতে, ২০১৫ সালের শেষ দিকে শিল্পকলা একাডেমির অ্যাডহক কমিটির অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে প্রতিবাদ করে একজন নাট্যকর্মী ১৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কার্যকর কমিটি গঠনের দাবি তোলেন। এর পর থেকেই কার্যকরী কমিটি গঠনের চিন্ত ভাবনা শুরু করে জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ৩০ মে দুটি পত্রিকায় জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সদস্যভুক্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এসময় ১২৫ জনকে সদস্য ভুক্ত করা হয়। তবে সদস্য ভুক্তি নিয়ে অ্যাডহক কমিটির উপর ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। প্রকৃত সংস্কৃতি কর্মীদের বাদ দিয়ে সদস্যভুক্ত করার অভিযোগে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে তৎকালনী জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফীন সদস্য ভুক্তির জন্য দ্বিতীয়বার বিজ্ঞপ্তি দেন। সেইবার ৫৬৪ জনকে সদস্য করা হয়।