শাহেদ মিজান, সিবিএন:
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমান তাঁর নির্বাচনী ২০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।  বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এসব ইশতেহার ঘোষণা করেন। দলের জেলা কার্যালয়ে সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিব্বুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সংবাদ সম্মেলনে মুজিবুর রহমান তাঁর ইশতেহার পাঠ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, কক্সবাজারকে ভালোবেসে উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। এই প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকারে দলের মানুষ দরকার। বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে প্রধামন্ত্রী জনবান্ধব নেতা মুজিবুর রহমানকেই কক্সবাজার পৌরসভার জন্য যোগ্য বলে মনে করেছেন। তাই মুজিবুর রহমানকে নৌকার প্রার্থী করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছেন। একই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় নির্বাচনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তিনি চান জনগণের মন জয় করে মুজিবুর রহমান বিজয়ী হোক। তাঁকে বিজয়ী করতে কেন্দ্র থেকে আমাদের পাঠিয়েছেন। আমরা সকলে মিলে নির্বাচনী যুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে মুজিবুর রহমানকে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে কক্সবাজারের মেয়র পদটা উপহার দেবো। ভোটারদের উদ্দেশ্য বলতে চাই, ধ্বংত্মক রাজনীতির জবাব ব্যালেটের মাধ্যমে দিয়ে কক্সবাজারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।’ সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার নওফেল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।


সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড ফরিদুল ইসলাম, এড. আমজাদ হোসেন, এড. বদিউল আলম সিকদার, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, সাবেক সাংসদ এথিন রাখাইন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আবছার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম মুকুল, এড. রনজিত দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা মোস্তফা কামাল, রাসেদুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলামসহ আরো অনেকে।

২০ দফা ইশতেহার

‘আধুনিক পর্যটন শহর হবে কক্সবাজার’ শ্লোগানে ঘোষণা করা মুজিবুর রহমানের ২০ দফা ইশতেহার গুলো হলো-
১. কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলে পৌরবাসীর উন্নত ও সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা।
২. সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কক্সবাজার পৌরসভা অনতিবিলম্বে সিটি করপোরেশনের রূপান্তরিত করা
৩. সকল পেশাজীবি প্রবীণ-নবীন সমন্বয়ে দলমত ওয়ার্ডভিত্তিক উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে উন্নয়ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
৪. শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ মতে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা।
৫. কক্সবাজার শহরকে মাদক ও সন্ত্রামুক্ত করা হবে। এই জন্য সকল পেশার মানুষকে মাদক প্রতিরোধ ও বাস্তবায়ন কমিটি করা হবে। এবং অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভির আওতায় আনা হবে।
৬. পৌরসভার সকল খাল ও নালা দখলমুক্ত করে খনন করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা।
৭. নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে শহরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। এই কাজ তদারকির জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করা হবে।
৮. পৌর শহরের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ পুর্নবাসন নিশ্চিত করা হবে।
৯. পর্যটন শহরকে যানজটমুক্ত করা হবে এবং এর জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ নিয়ে সড়কের পরিকল্পিত সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে।
১০. পর্যটন শহরের একটি আধুনিক শুটকি পল্লী গড়ে তোলা হবে। সেখানে মৎস্য ব্যবসায়ীরা মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করে স্থানীয় চাহিদা পূরণ এবং বিদেশেও রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।
১১. পৌরবাসীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে প্রতি ওয়ার্ডে ‘পৌর সার্ভিস সেন্টার’ করা হবে। ‘হ্যালো পৌরসভা’ নামে কল সেন্টার স্থাপন করে নাগরিক সেবা প্রদান করা হবে।
১২. অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ‘হেলথ ফান্ড’ গঠন করা হবে। একই সাথে প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘পৌর স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ করা হবে। সেখানে পৌরবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।
১৩. সিটি করপোরেশনের মতো পৌরসভাকে আধুনিকায়ন করা হবে। জবাবদিহিতার নিশ্চিত করতে পৌরসভায় ই-গভর্নেস প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
১৪. ডিজিটাল সার্ভে স্কিম দ্রুত বাস্তবায়ন করে পৌরসভা প্রতিটি ওয়ার্ড ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
১৫. পৌরকরসহ সকল বিল পরিশোধে নাগরিক দুর্ভোগ কমামে ‘স্মার্ট কার্ড’ প্রকল্প চালা করা হবে।
১৬. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যসেম ও পৌরসভার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিশেষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান নিশ্চিত করা হবে।
১৭ ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ এ বিশ্বাসকে ধারণ করে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে প্রতি ওয়ার্ডে ‘ডিজিটাল শিক্ষালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
১৮. কক্সবাজার পৌরসভা হবে দুর্নীতিমুক্ত। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালু করা হবে।
১৯. প্রতি ওয়ার্ডে উন্নয়ন পরামর্শ সভা করা হবে। নাগরিকদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করা হবে। নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল বা পরামর্শ কমিটি গঠন করা হবে।
২০. কক্সবাজার শহরের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিবেশ দূষণ রোধ, পানি সংকট নিরসন, জলাধার রক্ষা, এতিমদের জন্য সুব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকট নিরসন, ধর্মীয় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখা, কর্মসংস্থান ও শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা, ক্রীড়া ও বিনোদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, তথ্য-প্রযুক্তি, নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রান্তিক মানুষের সুবিধা বৃদ্ধি, আধুনিক কসাইখানা স্থাপন, দুর্যোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দারিদ্র বিমোচনে নানা প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।