সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও:

কোনোভাবেই থামছে না ঈদগাঁওর নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন। সরকারিভাবে কোনো অনুমোদন না থাকলেও ঈদগাঁও নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। সদর উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কতিপয় কিছু নেতা অবৈধ বালু উত্তোলন করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

এতে সদরের ঈদগাঁও-ইসলামাবাদ-জালালাবাদ-পোকখালী নদী এলাকায় সড়ক ও নদীর ওপর নির্মানাধিন গুরুত্বপূর্ণ সেতু চরম হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। পাশাপাশি বালু উত্তোলন করে রাজঘাট-গজালিয়া সড়কের পাশে বালুর স্তুপ করায় হুমকিতে পড়েছে সড়কটি। এতে করে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ৪ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নির্মানাধিন বাঁশঘাটা সেতুটি। প্রশাসনের নাকের ডগায় যত্রতত্র এভাবে একক আধিপত্যের সঙ্গে বালু দস্যুদের কর্মকান্ড যেন কেউ দেখেও না দেখার ভান করে আছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বালু উত্তোলনের কারণে জায়গায় জায়গায় ভূমিধসের ঘটনাও ঘটছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ঈদগাঁও নদীর আশপাশ ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। নদী ভাঙনে ৪ ইউনিয়নের কয়েক শতাধিক নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধ বালু উত্তোলনে প্রশাসন কোনো ধরনের উদ্যোগই নিচ্ছেনা। প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় বরাবরই পার পেয়ে যাচ্ছেন বালু ব্যবসায়ীরা। অবৈধভাবে অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে একের পর এক নদীর দুপাশে ভূমি দেবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আর এসব অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কথিত বালুদস্যু ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসিন দলের একাধিক নেতা উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছে। শুধু আওয়ামী লীগের নেতারাই নন, অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতাও নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন।

সরেজমিনে গতকাল দুপুরে দেখা যায়, ঈদগাঁও-ইসলামাবাদ নদীতে গজালিয়া,রাজঘাট,খোদাইবাড়ি,পালপাড়া,হিন্দুপাড়া, তেলিপাড়া, ও বাঁশঘাটা ব্রিজের পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে দিবারাত্রি বালু উত্তোলন করছে বালুদস্যুরা। এছাড়া ভোমরিয়া ঘোনা হইতে পালপাড়া যাতায়াতের একমাত্র সড়কের ঈদগাঁও নদীতে অবস্থিত লাল বিজের গুড়া থেকে বালু উত্তোলন করে সড়কে লোড-আনলোড করছেন শ্রমিকরা। তারা সিন্ডিকেট তৈরি করে বীরবেশে এসব নারকীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যেন উপজেলা প্রশাসন তাদের দেখেও দেখছে না। এই নিয়ে সদর উপজেলা ভূমি অফিসে বার বার অবহিত করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফলে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।

সুত্রে জানা গেছে, ফকিরা বাজার গজালিয়া আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বালু লোড-আনলোড করায় সাধারণ যানবাহন চলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভোমরিয়া ঘোনা, পালপাড়া, বাঁশঘাটা,তেলিপাড়া,লরাবাগ,মুসলিম বাজার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার নদী জুড়ে বালু লুটের মহোৎসব চলছে। স্থানে স্থানে ড্রেজার দিয়ে নির্বিঘেœ বালু উত্তোলন করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫জন,ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৪জন, জালালাবাদ ইউনিয়নের ৩জন, পোকখালী ইউনিয়নের ৪জন বালু ব্যবসায়ীসহ একাধিক নেতা তাদের সাথে জড়িত থেকে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলনের কারণে এসব এলাকা এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এদিকে ঈদগাঁও-কবি নুরুল হুদা সড়ক ও ঈদগাঁও-ভোমরিয়া সড়কের প্রতিদিন শতাধিক বালু বোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। প্রায় ১০ কিলোমিটারের রাস্তায় যেন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। এসব সড়কে অতিরিক্ত লোড-আনলোডে প্রায় ৫ কিলোমিটার প্রিজ উঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় গাড়ির চালকরা।

সড়কের একাধিক সিএনজি চালকরা বলেন, ঈদগাঁও নদীর বালু এত মধু! জিবীকার কিছুটা আয়ের স্বস্থি এ সড়ক। হাইওয়ে পুলিশের হয়রানির কারণে মহাসড়কে সিএনজি চালাতে পারছেন না বলেই অনেকে বেচে নিয়েছেন ঈদগাঁও-কবি নুরুল হুদা সড়ক ও ঈদগাঁও-ভোমরিয়া সড়কটি। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কারণে শেষ পর্যন্ত এ সড়কটিরও শেষ রক্ষা হবেনা।

অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। যদিও নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ তবুও গোপনে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

এদিকে বালু উত্তোলনের ফলে ঈদগাঁও নদীর পাড় ভেঙে গ্রামের অনেক নিরীহ মানুষের জায়গা-জমি ধসে পড়েছে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, বালুভর্তি ট্রাক-ডাম্পার যখন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে, তখন মনে হয় যেন ভূমিকম্প হচ্ছে! নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোমরিয়া ঘোনার কৃষকরা জানান, পাড় ভেঙে তাদের কয়েক শতাংশ জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সদর উপজেলা সহকারি ভূমি কমিশনার নাজিম উদ্দীন বলেন, ঈদগাঁও নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে এবং শ্রমিক দিয়ে বালু উত্তোলন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঈদগাঁও নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।