স্পোর্টস ডেস্ক:
বিস্ময়ের পর বিস্ময়ই উপহার দিচ্ছেন ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সী ফুটবলার কাইলিয়ান এমবাপে। বিস্ময়ের জন্মটা দিয়েছেন ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে। শুরুতে তাকে যখন রিয়াল মাদ্রিদ ১৬০ কি ১৭০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল। তখনই সবার নজরে আসে, মোনাকোয় খেলা এই বিস্ময় বালক কে, যার জন্য টাকার বস্তা নিয়ে হাজির রিয়াল মাদ্রিদের মত ক্লাব!

রিয়াল শেষ পর্যন্ত এমবাপেকে কেনেনি। তবে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোয় মোনাকো থেকে তাকে ধার (লোন) নিয়েছে পিএসজি। যারা ২২২ মিলিয়ন ইউরোয় বার্সা থেকে কিনেছে নেইমারকে। পিএসজির হয়ে নিজেকে চেনান এমবাপে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তার ওপর স্পট লাইটটা ছিল অনেক বেশি। তরুণ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে কী করেন, সেটাই ছিল দেখার।

সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার, ব্রাজিলের কালো মানিক পেলেকে কিন্তু চিনিয়েছে বিশ্বকাপই। ১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপ দিয়েই সারা বিশ্বের নজরে আসেন তিনি। আর কাইলিয়ান এমবাপে বিশ্বকাপে পা রাখার আগেই তোলপাড় করা এক ফুটবলার। রাশিয়ায় পা রাখার পর পাদপ্রদীপের আলো পুরোটাই নিজের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হলেন এই তরুণ প্রতিভা।

মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ফ্রান্সের মত দলের ১০ নম্বর জার্সি পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু কোচ দিদিয়ের দেশম জানতেন, তার মধ্যে কী আছে। মাত্র ১৯ বছর বয়স হলেও, কতটা প্রতিভাবান তা এমবাপের খেলা না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন। গ্রুপ পর্বে যাই খেলুন না কেন, নকআউটে এসে এমবাপে নিজেকে যেন পুরোপুরি মেলে ধরলেন।

লিওনেল মেসিকে ম্লান করে দিয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে করলেন জোড়া গোল। এ ক্ষেত্রেই পেলেকে ছুঁয়ে ফেলার কাজটি করলেন ফরাসি এই তরুণ। পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে জোড়া গোল করলেন এমবাপে। ৬০ বছর পর পেলের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হলো কারো নাম। এটা তো কম গৌরবের নয়!

তবে, এমবাপের ঝলক দেখানো যেন আরও বাকি ছিল। প্রতিপক্ষের রক্ষণ সীমানায় যেভাবে ওঁত পেতে থাকেন, তাতে স্বস্তিতে থাকার কথা নয় কোনো শক্তিশালী ডিফেন্সেরও। ক্রোয়েশিয়ারও ছিল না। তবুও, এমবাপে ঝলক দেখিয়ে দিলেন। ফাইনালে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় করলেন দুর্দান্ত এক গোল। সে সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় নতুন করে আরও একবার নাম লেখা হলো এমবাপের। এবারও পেলের সঙ্গে। বিশ্বকাপের ফাইনালে পেলের পর প্রথম কোনো টিনএজার গোল করার কৃতিত্ব দেখালেন। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন পেলে। এবার এমবাপে করলেন একটি। যদিও পেলের বয়স ছিল তখন মাত্র ১৭ বছর। অন্যদিকে এমবাপের বয়স ১৯ বছর।

তবুও, পেলে কিন্তু হুমকিই মানছেন ফ্রান্সের এই তরুণ ফুটবলার এমবাপেকে। যেভাবে ফরাসি তারকা খেলে যাচ্ছেন, তাতে পেলের রেকর্ড না আবার ভেঙে দেন তিনি! এই চিন্তায় যেন ঘুম হারাম পেলের। ফরাসি তারকাকে উল্লেখ করেই টুইটারে পেলে লিখলেন তার সেই ভয় মেশানো কথা-বার্তা।

সেখানে পেলের লিখলেন, ‘যদি এভাবেই একের পর এক আমার রেকর্ডে ভাগ বসাতে থাকে এমবাপে, তাহলে নিশ্চিত আমার ধুলো পড়া বুটগুলো পরিস্কার করে আবারও মাঠে নামতে হবে। এভাবে একের পর এক রেকর্ড গড়তে থাকলে, নিশ্চিত ধুলো পড়া বুট পরিস্কার করার জন্য আমাকে আবারও ডাস্ট হাতে নিতে হবে।’

পেলের এই কথায় কিন্তু শ্লেষ মেশানো ছিল না। ছিল এক তরুণকে বরণ করে নেয়ার মানসিকতা। নতুনের আগমণি বার্তা ঘোষণা করা। এমবাপের উচ্চসিত প্রশংসা করা। তার আগেই এমবাপে যখন গোল করেছিলেন, তখনই পেলে টুইটারে লেখেন, ‘দ্বিতীয় টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল পেলেন এমবাপে। এই ক্লাবে নাম লেখানোর জন্য স্বাগতম এমবাপেকে। এ ধরনের সঙ্গী পাওয়া খুবই আনন্দের।’