সোয়েব সাঈদ, রামু:

বনপ্রহরীর চাহিদা মোতাবেক টাকা না দেয়ায় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কলা বাগান সহ বিপুল ফলজ বাগান।  রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল পানিরছড়ার এলাকায় বুধবার (১১ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে। কষ্টে গড়া বাগানের এ দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন এসব বাগানের হতদরিদ্র মালিকরা। এ ঘটনায় জনমনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রামুর বাঁঘখালী রেঞ্জের বন প্রহরী ফরহাদ হোসেন প্রায় ২ বছর পূর্বে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকেই তিনি হতদরিদ্র বাগান মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে আসছেন।

সম্প্রতি বনপ্রহরী ফরহাদ হোসেন মনিরঝিল পানিরছড়া এলাকায় কলা চাষিদের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে আরো বেশী অংকের টাকা দাবী করে। কয়েকজন চাষি টাকা দিলেও অনেকে দৈন্যতার কারনে টাকা দিতে পারেননি। যারা টাকা দেননি তাদের বাগানে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বন প্রহরী ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে ব্যাপক বৃক্ষ নিধন। ৭/৮ জন বাগান মালিকের প্রায় ১০ একর জমিতে রোপন করা বিপুল পরিমান কলাগাছ ছাড়াও পেয়ারা, আম এবং জুমচাষ (ধানক্ষেত) কেটে তচনছ করে দেয়। এসময় বনকর্মীরা বাগানের ঘেরা-বেড়া, পাহারাঘরও গুড়িয়ে দেয়।

বাগান মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে বাগানে গেলে তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান বনপ্রহরী ফরহাদ হোসেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় সবাইকে ফাঁসিয়ে দেয়ারও হুমকী দেন তিনি। এসময় বাগান মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বাগানে কলাগাছ সহ ব্যাপক বৃক্ষ নিধনের দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

জালাল আহমদের মেয়ে শাহানারা বেগম ও ছৈয়দ আহমদের মেয়ে সালেহা বেগম জানান, এখানে তাদের কলা বাগানের হাজারো কলাগাছ বনপ্রহরী ফরহাদ হোসেন ও তার সাথে আসা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা কেটে দিয়েছে। এতে তাদের ৬০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বাগান ছিলো তাদের আয়ের একমাত্র সম্বল। বনপ্রহরী ফরহাদ হোসেন দুই মাস ধরে তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবী করে আসছিলো। টাকা না দেয়ায় সে পরিকল্পিতভাবে বাগানের সব গাছ কেটে দিয়েছে।

কাদের হোছনের ছেলে বাগান মালিক জসিম উদ্দিন জানান, বনকর্মী ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় ভাড়াটে লোকজন সহ ১৫ জনের অধিক লোকজন তান্ডব চালিয়েছে। যারা ফরহাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে তাদের বাগানে কোন গাছ কাটা হয়নি। কেবল যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের বাগানেই গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে।

স্থানীয় ছুরুত আলমের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানিয়েছেন, বিভিন্নভাবে হুমকী দিয়ে বনপ্রহরী ফরহাদ হোসেন তার কাছ থেকে সম্প্রতি ১০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছে। তাই অনেকের বাগানের গাছ কেটে দিলেও টাকা নেয়ায় তার বাগানে কিছুই করেনি। বনপ্রহরী ফরহাদের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ বলে তিনি জানান।

একই এলাকার বদি উজ্জামানের ছেলে নুরুল ইসলাম প্রকাশ ইউসুফ জানান, তার কাছ থেকেও বনপ্রহরী ফরহাদ হোসেন সম্প্রতি ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। তিনি হুমকীতে বাধ্য হয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। টাকা নেয়ার কারনে তার বাগানেও কোন গাছ কাটা হয়নি বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত বনপ্রহরী ফরহাদ হোসেন কলা বাগান কেটে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, কেবল বন বিভাগের জমি দখলমুক্ত করার জন্য জঙ্গল কাটা হচ্ছে।

বন বিভাগের বাঁঘখালী রেঞ্জের এর বিট কর্মকর্তা জাকের আহমদ জানিয়েছেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন বিভাগের রোপন করা চারা কেটে স্থানীয়রা কলা বাগান করেছে। তাই সেই জমি দখলমুক্ত করার জন্য বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এখানে কলাগাছ রোপন করা নিষিদ্ধ। তিনি বনপ্রহরীর ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কলা চাষিদের কাছ থেকে টাকা নেয়া ও চাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, এভাবে নির্বিচারে ফলজ বাগান উজাড় করার বিষয়টি দুঃখজনক। বাগান মালিকরা সবাই হতদরিদ্র। তিনি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বন বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন জানান, বন প্রহরীদের কাজ বন রক্ষা করা। এখানে বনকর্মীদের তেমন কোন কর্মকান্ড চোখে পড়ে না। এখন তারা উল্টো নিরীহ, হতদরিদ্র মানুষের একমাত্র আয়ের সম্বল কলা সহ বিভিন্ন ফলজ বাগান কেটে দিলো। এটা খুবই দুঃখজনক। নিশ্চয় এখানে কোন রহস্য থাকতে পারে। এর কারন খুজে বের করতে হবে।