মো. নুরুল করিম আরমান, লামা :

বন্যহাতির তান্ডবে বান্দরবানের লামা উপজেলায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এক গ্রামের প্রায় ১ হাজার মানুষ। আবার অব্যাহত তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে ৫০টি বসতঘর। সন্ধ্যা নামলেই হাতিগুলো এলাকায় তান্ডব শুরু করে। আর এ তান্ডব চলে রাতভর। উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি ফখিরাখোলা গ্রামে ১০-১২টি বন্যহাতি এ তান্ডব চালায়। এ সময় আহত হন ৫ বসতঘর মালিক। এছাড়া হাতিগুলো স্থানীয়দের ২০০ কাঁঠাল ও আম গাছ উপড়ে ফেলে ক্ষতিসাধন করে। হাতির পালটি বর্তমানে ওই এলাকায় অবস্থান করায় চলতি মৌসুমে ৫০ একর ফসলি জমি অনাবাদিসহ আতংক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে কেউ কেউ ঘরবাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। হাতির তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি ফখিরাখোলা গ্রাম। এটি লামা উপজেলা ও পাশের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজার জেলার খুটাখালী এলাকার সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত। ১৯৬৫ সাল থেকেই এ গ্রামে জন বসতি শুরু হয়। গ্রামটির অবস্থান সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন খুটাখালী সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বন্যহাতির পাল প্রতিরাতেই লোকালয়ে নেমে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫জুন প্রথম ফখিরাখোলার গ্রাম সর্দার আবদুল গণির বসতঘর ভাংচুর করে। এরপর পর্যায়ক্রমে একই পাড়ার আবদুর রহিম, নুরু ছিদ্দিক, মোবারক হোসেন, সাহাব উদ্দিন, নুরুল কবির, অলি আহমদ, নুরুল আলম, মো. শফি ও আনোয়ার হোসেনের বসতঘর সম্পূর্ণ ও ৪০টি বসতঘর আংশিক তছনছ করে দেয় হাতির পাল। এ সময় বসতঘরে রক্ষিত ধান ও চাল খেয়ে ফেলে। এদিকে কুমারী কবিরার দোকান এলাকায় আবদুল গফুরের বসতঘর ভাংচুর করে বন্যহাতি। পরদিন হাতির হামলায় আহত হন কুমারী এলাকার শাহিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূ।

স্থানীয় নুরুল আলম, আনোয়ার হোসেন ও গ্রামের সর্দার আবদুল গণি জানান, হাতিগুলো প্রথমে বাড়ীর চারিদিকে ঘেরাও করে ফেলে। বিশেষ করে ঘরের দরজা জানালার পাশে পাহারাদারের মত দাঁড়িয়ে থাকে। আর ঘর ভাঙ্গা শুরু করে। পরে ঘরে থাকা ধান চাল খেয়ে চলে যায়। তাড়াতে গেলে পাল্টা আক্রমণ চালায়। সন্ধ্যার পর আর ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা। রাতজেগে বাড়ি ঘর পাহারা দিয়ে হাতির আক্রমন থেকে রক্ষার চেষ্ঠা চালাচ্ছে স্থানীয়রা। তারা আরও বলেন, গত ১৫ দিনের তান্ডবে ৫ বসতঘর মালিক আহত হয়েছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মামুন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে ও ঢোল পিটিয়ে চিৎকার করেও বন্য হাতির দলকে সরানো যায় না। বেশি ভয় দেখালে হাতির পাল গায়ের দিকে তেড়ে আসে। এ কারণে চেয়ে দেখা ছাড়া স্থানীয়দের পক্ষে কিছুই করার থাকেনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

হাতির তান্ডবে ঘরবাড়ি ভাংচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, বন্যহাতিগুলো এলাকায় অবস্থান করে প্রতিরাতেই ফখিরাখোলা গ্রামে হানা দেওয়ার কারণে লোকজন এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

এ বিষয়ে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমদ জানান, ফখিরাখোলা গ্রামে বন্যহাতির হামলার ঘটনা কেউ জানায়নি। খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল ও খাবার দিনদিন কমে যাওয়ার কারণে হাতির পাল এখন লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।