বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম ঈদগাঁও বাজারে খাস কালেকশানের নামে লাখ লাখ টাকা লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের এক শ্রেনীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে একটি সিন্ডিকেট স্বাভাবিক নিলাম স্থগিত রেখে ফায়দা লুটছে বলেও অভিযোগ। বাজারের নিয়মিত ইজারার স্বার্থে সদ্য বিদায়ী কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেনের পরামর্শে ইজারাদার রাশেদুল হক চৌধুরী রিয়াদ নিজ উদ্যোগে রিট আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু এরপরও বাজারটি নিয়মিত ইজারা না দেয়ায় একদিকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনে ভূক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গত ১ জুলাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে।

ভূক্তভোগীদের ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জানা যায়, গত ১৪২৪ বাংলা অর্থসনে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বাজারটি ইজারা পান রাশেদুল হক চৌধুরী রিয়াদ। ওই অর্থসনের শেষ দিকে পুনরায় বাজারটি ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে ইজারাদার রাশেদুল হক চৌধুরী রিয়াদ ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করেন। ওই প্রেক্ষিতে বাজার নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায় এবং এক মাসের মধ্যে ইজারাদারের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এতে প্রকাশিত ইজারা বিজ্ঞপ্তির মধ্যে শুধুমাত্র ঈদগাও বাজার ব্যতিত কক্সবাজার সদর উপজেলার সকল বাজার চলতি বছরের ১৫ মার্চ ইজারা হয়ে যায়। ফলে ১ বৈশাখ থেকে ঈদগাও বাজারে খাস কালেকশান শুরু হয়। উক্ত খাস কালেকশানে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জনবল সংকটের অজুহাতে বৈশাখ মাসের জন্য রফিক উদ্দিনকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় ইজারা দেয়। জৈষ্ঠ্য মাসের ইজারার জন্য গত ১৪ মে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৭টায় উন্মুক্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বোচ্চ ডাককারি রমজানুল আলম ১৭ লাখ টাকা, দ্বিতীয় রাশেদুল হক চৌধুরী রিয়াদ সাড়ে ১৫ লাখ টাকা, ৩য় আবদুর রাজ্জাক সাড়ে ১৪ লাখ টাকা দর দেন। এতে সর্বোচ্চ ডাককারি হিসেবে রমজানুল আলমকে জৈষ্ঠ্য মাসের জন্য খাস কালেকশানের সাব ইজারা দেয়া হয়। ইজারা না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে ওই দর বহাল থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে রিটকারি রাশেদুল হক রিয়াদ সদ্য বিদায়ী কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেনের পরামর্শে নিয়মিত ইজারায় যাওয়ার জন্য নিজ উদ্যোগে রিট প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে রিট খারিজের সার্টিফাইড কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে জমা দিতে গেলে ইউএনও এসিল্যান্ডের সাথে আলাপ করলে এসিল্যান্ড বাজারের বিষয়ে আরও একটি রিট আছে বলে জানান। অথচ ওই রিটের সাথে বাজার ইজারার কোন সর্ম্পক নেই। এমনকি রিট আবেদনকারীর সাথে বাজার ইজারার কোন সম্পর্ক নেই, তিনি কোন প্রকার সংক্ষুব্দ বা ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষও নন। এ অবস্থায় অতিগোপনে কাউকে না জানিয়ে সেই রমজানুল আলমকেই আষাঢ় মাসের জন্য বাজারটি ইজারা দেয়া হয়। বর্তমানে রমজানুল আলম পরবর্তী ১০ মাসের জন্য ওই বাজারটি ইজারা নিয়েছেন বলে প্রচার করছেন। সবাইকে জানিয়ে বাজারটি সাব ইজারা দেয়া হলে রাজস্ব আরও বৃদ্ধি পেত বলে উল্লেখ করা হয়।

ভূক্তভোগীরা জানান, তারা ঈদগাও বাজারের খাস কালেকশানের সমস্ত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা, সরকারি টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন এবং দ্রুত প্রকাশ্যে নিয়মিত বার্ষিক ইজারা দিয়ে সরকারি রাজস্ব আদায়ের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন জানিয়েছেন।