তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

সাংবাদিক কন্যা শিশু রাইফার মৃত্যুত দায়িত্বরত তিন চিকিৎসকের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি। গতকাল শুক্রবার (৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু কন্যা রাইফা খান যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ঐ সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এরকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার দক্ষতা বা জ্ঞান কোনটাই তাদের ছিলো না। শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফাকে অসুস্থতার জন্য ম্যাক্স হাসাপাতালে জরুরী বিভাগে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে শেষ চিকিৎসা পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অভিভাবকদের ভোগান্তি চরমে ছিলো। শিশুবিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি এবং ডাক্তার দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডাক্তার শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদান করেননি বলে শিশুর পিতা মাতা অভিযোগ উত্থাপন করেছে, যা সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। তদন্তে স্পষ্ট হয় যে, হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি প্রকট। চিকিৎসক ও নার্সদের সেবাপ্রদানে সমন্বয়হীনতা ও চিকিৎসাকালীন মনিটরিংয়ের অভাব দেখা যায়। অদক্ষ নার্স ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ফলে কাঙ্খিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অনেক দূর্বল রয়েছে। বিশেষত, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞের সার্বক্ষনিক উপস্থিতি সংকটটি প্রবল। প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও তুল ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো- চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। ম্যাক্স হাসপাতালের সার্বিক ক্রটিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অতিদ্রুত সংশোধন করা অপরিহার্য। কর্তব্যরত নার্সগন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিপ্লোমাধারী থাকার নিয়ম থাকলেও উক্ত হাসপাতালে তা নেই। ডিপ্লোমা নার্স দ্বারা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সার্বক্ষনিক দ্রুত ও আন্তরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং রোগীর অভিভাবককে যথাসময়ে রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বশেষ পরিস্থিতি অবগত করতে হবে। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন দিবাগত রাত ১২টায় নগরীর বেসরকারী ম্যাক্স হাসপাতালে সমকালের ক্রাইম ও স্পোর্ট রিপোর্টার রুবেল খানের একমাত্র কন্যা রাফিদা খান রাইফা মারা যায়। অভিযোগ ওঠে ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় মৃত্যু হয় রাইফার। রাইফার মৃত্যুর পর থেকে অভিযুক্ত ডাক্তার, ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ বিএমএ’র চট্টগ্রামের সাধঅরন সম্পাদক ফয়সাল ইকবালের সনদ বাতিলের দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল।

এদিকে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্ছ শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছে সাংবাদিক সমাজ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল বলেন, যেহেতু সিভিল সার্জনের তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রাইফা অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে। সেখানে আর দেরি নয় দোষিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা। সিইউজে’র সাধারন সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, সময়ক্ষেপন না করে দোষিদের আইনের আওতায় আনা হওক। সিইউজে’র সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, রিপোর্টে রাইফার চিকিৎসায় গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে। আমরা চাই এর দ্রুত বাস্তবায়ন।