শাহেদ মিজান, সিবিএন:
প্রার্থীতার কয়েকদফা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শেষ ধাপে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের ৮৬জন বৈধ প্রার্থী। আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে এতদিন আড়ালে-আবডালে প্রচারণা চালালেও গতকাল বুধবার প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণার মাধ্যমে চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েছে প্রার্থীরা। আগামী ২৫ জুলাই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মনোয়নয়ন বৈধ হওয়া ৮৬ প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে জেলা নির্বাচন অফিস। এতে পাঁচ মেয়র, ১৭ সংরক্ষিত ও ৬৪ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতীক পেয়ে মোট ৮৬জন প্রার্থী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান মেয়র (বরখাস্ত) নাগরিক কমিটির প্রার্থী সরওয়ার কামাল পেয়েছেন নারিকেল গাছ, আওয়ামী লীগের মুজিবুর রহমান নৌকা, বিএনপির রফিকুল ইসলাম ধানের শীষ, জাপার রুহুল আমিন সিকদার লাঙ্গল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র জাহেদুর রহমান পেয়েছেন হাতপাখা। এছাড়াও ৮১জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন।

প্রতীক পাওয়ার পর সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন সহকারে গণসংযোগ করেছেন প্রার্থীরা। একই সাথে মাইকিং, পোস্টারিংসহ সব ধরণের প্রচারণার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, এবারের পৌরনির্বাচন ঘনিয়ে আসার সময় থেকে তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান। তপশীল ঘোষণা আগে থেকে নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি। গত রমজানে প্রতিদিন তিনি ভোটারদের সাথে গণসংযোগ করেছেন। তপশীল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাতদিন জোরেসোরে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম আগে থেকে নির্বাচনী মাঠে না নামলেও তপশীল ঘোষণার পর জোরেসোরে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। একই ভাবে বর্তমান মেয়র (বরখাস্ত) সরওয়ার কামাল ও জাতীয় পার্টির রুহুল আমিনও তপশীল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনে মাঠে নেমে পড়েন। সেই থেকে মাঠে থেকে সব প্রার্থী অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা চালিয়ে গতকাল বুধবার প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণার মাঠে নেমে পড়েছেন।

তথ্য মতে, দলীয় মনোনয়নের এই পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। দলের কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনি সরকারি দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। গতবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা রাসেদুল ইসলাম ও আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেক। সে বারে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বর্তমান মেয়র (বরখাস্ত) সওয়ার কামালের সাথে মাত্র দুই হাজার ভোটের ব্যবধানের হেরেছিলেন মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান। তারপরও বরাবরই মাঠে ছিলেন তিনি। সব হিসেবে এবার জেতার ব্যাপারে গতবারের চেয়ে এবার তার সম্ভাবনা অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, জামায়াত সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী বর্তমান (বরখাস্ত) মেয়র সরওয়ার কামালের জনপ্রিয়তা এখনো কোনো অংশে কম নয়। শহরের স্থায়ী ভোটার ছাড়াও সাতকানিয়া-লোহাগড়ার একটি ভোটব্যাংক সওয়ার কামালের রিজার্ভ আছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসব ভোটাররা একটাও ভোটও অন্য প্রার্থীকে দেবে না বলে শোনা যাচ্ছে না। সাতকানিয়া-লোহাগড়ার এসব ভোটার তাঁর জয়ের ব্যাপারে ফ্যাক্ট হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী রফিকুল ইসলামও কোনো অংশে কম নয়। বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত কক্সবাজারে বিএনপির একটি ভোটব্যাংক নিয়ে জয়ের ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী এই প্রার্থী। তিন বারের জনপ্রিয় কাউন্সিলর ও জেলা বিএনপি ও জেলা শ্রমিকদলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ায় রফিকুল ইসলামের একটা বিশেষ প্রভাব ভোটের মাঠে রয়েছে। তাছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের ‘অন্ধভক্ত’ একটি ভোটব্যাংকও রফিকুল ইসলামের জয়ের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে বলে সাধারণ মহল মনে করছেন। তবে গতবারের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের একক সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন সরওয়ার কামাল। কিন্তু এবার দু’দলের আলাদা প্রার্থী হওয়ায় ভোটের হিসাবও আলাদা হতে পারে।

রিটার্নিং অফিসার ও কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রার্থী ও ভোটারসহ সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।’