আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া থেকে:

অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যায় ইন্দোনেশিয়ানদের পরেই বাংলাদেশিদের অবস্থান রয়েছে বলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুকে সেরি মোস্তাফার আলী।

এ অভিযানে কতজন বাংলাদেশি আটক হয়েছেন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ৪’শ জনের অধিক বাংলাদেশি আটক হয়েছেন।

Malesia

রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে মেগা-থ্রি নামে এই অভিযান শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক মোস্তফার আলী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া। এরপর ১৬ সালের ১৫ আগস্ট নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত চলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া।

এ প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই অবৈধদের জন্য ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে ইমিগ্রেশন বিভাগ। ৩০ আগস্টের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত না গেলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে।

Malesia

মোস্তাফার আলী জানান, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ব্যাপক অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া যেসব মালিকরা অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ দিয়েছেন বা পুনঃনিবন্ধন করায়নি তাদেরকেও গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হবে।

তিনি বলেন, দেশে অবৈধ অভিবাসীর স্রোত ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নিতেই হচ্ছে। এ সময় ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক আরও জানান, গত জানুয়ারির ১ তারিখ জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত মোট ১৯ হাজার ৯৭৯ জন বিদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৫৩৬ জন মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৯ হাজার ৮৫৮ জন অবৈধ অভিবাসীকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। বাকিদেরও শিগগিরই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তিনি জানান, আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ইন্দোনেশিয়ান। প্রতিবেশি এই দেশটির ৬ হাজার ৮৯৫ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ। ৬ মাসে ৩ হাজার ৯৭৫ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। ১ হাজার ৯৯৫ জন মিয়ানমারের নাগরিক।

Malesia

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে জনশক্তি রফতানি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক পাড়ি দিয়েছে। আরও প্রায় ৫০ হাজার যাওয়ার অপেক্ষায়। তবে এ সময়ের মধ্যে দুই দেশের ইমিগ্রেশনকে ‘ম্যানেজ’ করে এক মাসের এন্ট্রি নিয়ে শত শত নামধারী লোক বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে ঢুকছে।

যার বেশিরভাগই পরবর্তী সময়ে পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে মানবেতর জীবন কাটিয়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছে। এখনো অনেক বাংলাদেশি দেশটির ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক হয়ে রয়েছে। তারপরও অবৈধপথে লোক যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে চিহ্নিত চক্রগুলো দুই দেশের ইমিগ্রেশনের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আদম পাচারের মতো কাজ এখনো নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে।

এখনই তাদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বৈধপথে জনশক্তি রফতানির পথ দিন দিন রুদ্ধ হতে থাকবে। এসব অনিয়মের কারণে হুন্ডি বাড়ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।