# অর্থপাচার রোধ, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুদ হার কমিয়ে আনতে হবে # নির্বাচনী উত্তেজনা সামাল দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজেট অর্থায়ন নিশ্চিত করাও কঠিন হবে # কর্মমুখী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নিতে হবে বাস্ততমুখী নানা পদক্ষেপ

ডেস্ক নিউজ:

বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে শুরু হলো নতুন অর্থবছর (২০১৮-১৯)। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বাজেট বাস্তবায়নের প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের রয়েছে আলাদা মনোযোগ। তবে এ বাজেট বাস্তবায়নে পুরো অর্থবছরেই বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

এবারের বাজেটে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বাজেট বাস্তবায়নে পুরো অর্থবছর জুড়েই বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সরকারকে। এর মধ্যে রয়েছে- চলমান অর্থপাচার রোধ করা, আর্থিক খাতে সুশাসন তথা ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, সুদ হার কমিয়ে এনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো, সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, কর্মহীন প্রবৃদ্ধির তকমা থেকে বেরিয়ে আসতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নির্বাচনকালীন উত্তেজনা সামাল দিয়ে বাজেট অর্থায়ন নিশ্চিত করা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সময়ে দেশ অস্থিতিশীল থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম না হওয়ার সম্ভবনা কম। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চাপ পুরোটাই অর্থনীতির উপর আঘাত আনে। এছাড়া নির্বাচনের বছর অর্থপাচারের হার বেড়ে যায়।

বর্তমান সরকারের পুরো দু-মেয়াদেই ব্যাংকি খাতে চলেছে অরাজকতা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হয়েছে লোটপাট, বেড়েছে খেলাপি ঋণ। নানা পক্ষ থেকে ব্যাংকিং খাতের এসব সমস্যা সবাধানে ব্যবস্থা নেয়ার নেওয়ার দাবি করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

সর্বশেষ তথ্যানুসারে, গত মার্চের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এ হার ক্রমেই বাড়ছে। বাজেটের পর ব্যাংকিং খাত সংস্কারে কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে সেটিও এ বছর আর করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

বাজেটে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের কর্পোরেট কর হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সুদ হার কমবে -এমনটা আশা করছে সরকার। সুদ হার কমলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ খরা অনেকটা কাটবে বলে আশা মুহিতের। কিন্তু বাস্তবতা প্রেক্ষাপটে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা বড় কঠিন। এতে আমানত ও ঋণের মধ্যে এক ধরনের ভারাম্যহীনতার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এর বাইরে এ বছর জলবায়ুর প্রভাবজনিত কারণে ঝড় বৃষ্টি ও বন্যার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৩ কোটি মানুষ জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। অর্থাৎ বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস হলে দেশে খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি। এছাড়া বৈশ্বিক খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বাড়বে আমদানি খরচ। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতির প্রতিও বিশেষ নজর দিতে হবে সরকারকে।

নতুন অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে সরকারের ঘোষিত ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়বে পরবর্তী সরকারের। জানুয়ারি থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচিত নতুন সরকার। এর মাঝে কিছু দিনের জন্য বাস্তবায়নে থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনী সরকার। ফলে পুরো বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকারের।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, নির্বাচনী বছরে নিঃসন্দেহে এটি বাস্তবায়ন বড় চ্যলেঞ্জ। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রতিবছরই ফেল করে। আবার তা সংশোধন করা হয়। এ অবস্থায় এতো বড় একটি টার্গেটের রাজস্ব আদায় হবে বড় চ্যালেঞ্জ। এডিপি বাস্তবায়নের সরকার শতভাগ দক্ষ নয়। এটিও প্রতি বছর সংশোধন করা হয়। এডিপি বাস্তবায়ন বাজেটের অন্যতম চ্যলেঞ্জ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামগ্রিক ক্ষেত্রে আমাদের যে অবস্থা তাতে শুধু ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট কর হার কমানোর সুবিধা দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। তারপরও কমানো হয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি; ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়িত। ফলে মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণেও এক ধরনের মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটতে পারে। আগামী দিনে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তবে প্রবৃদ্ধি অর্জন তথা বাজেট বাস্তবায়নে খুব বেশি সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রেণে রাখতে চাল ও শস্য মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক ডামাডোলে বাজেট বাস্তবায়ন বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে না। এটা স্বাভাবিক গতিতেই চলতে থাকবে। আগে এমনটিই দেখা গেছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনও হবে। এটা হবেই, আমি আগেই বলে দিলাম।