বিদেশ ডেস্ক:

পূর্ব ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আগামীকাল (রবিবার) থেকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ও আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরবের নারীদের গাড়ি চালাতে দেখা যাবে। শুক্রবার (২২ জুন) ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে নারীদের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। সৌদি যুবরাজ সালমান বিন মোহাম্মদের কথিত সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত বছর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতিকে সামনে রেখে শো-রুমে নিজের সম্ভাব্য গাড়িটি বেছে নিতে চাইছেন এক সৌদি নারী, গত মে মাসে রয়টার্স সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়েন তিনি।বিশ্বে সৌদি আরব হলো একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর আজ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। তরুণ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি তার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে নানামুখী সংস্কার-কার্যক্রম হাতে নেন। এই সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত ছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এক ডিক্রিতে নারীদের রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন। তিনি ঘোষণা দেন ২০১৮ সালের ২৪ জুন থেকে নারীরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জুন মাসে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে শুরু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সম্ভাব্য হাজারো সৌদি নারী চালকেরা রোববার গাড়ি চালাতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সৌদিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়ার পদক্ষেপটি দেশটিতে সামাজিক গতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন। সৌদিপন্থী চিন্তন-প্রতিষ্ঠান অ্যারাবিয়া ফাউন্ডেশনের নাজাহ আল-ওতাইবি বলেন, এটা একটা স্বস্তি। সৌদি নারীরা সুবিচার পাওয়ার বিষয়টি অনুভব করছেন।’

ইফফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান হাইফা জালালালি ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে হারিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত দেশ। তাই নিরাপদে গাড়ি চালানোটা খুব জরুরি এখানে। পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দেয়, পুরুষের তুলনায় নারীরা গাড়িচালক হিসেবে বেশি সতর্ক’।

নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসহ কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সৌদি সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও এখনও দেশটিতে নারীদের জন্য অন্যতম বড় বড় কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ সালমানকে ওই পরিকল্পনার নেপথ্য ব্যক্তি বলে মনে করা হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ তেল নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতি বহুমুখী করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
নারীদের পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা প্রচলিত। আইন অনুযায়ী নারীদের পড়াশুনা, ভ্রমণ বা অন্য কোনও কাজের জন্য বাবা, স্বামী বা ভাইয়ের অনুমতির দরকার পড়ে। সৌদি অ্যাকটিভিস্টদের দাবি নারী অধিকারের লড়াইয়ের জন্য এই অভিভাবকত্ব একটি বড় ইস্যু। ২০১১ সাল থেকে প্রায় ৩০ জন অ্যাকটিভিস্ট ও বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সৌদি আদালত। এইচআরডব্লিউ এর মতে এদের অনেককেই ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এই কয়েকদিন আগেও যুবরাজের সংস্কার নিয়ে সংশয়ী বেশ কয়েকজন নারী অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়।