ইব্রাহিম খলিল মামুন:
পর্যটন শহর কক্সবাজারের রাস্তাঘাট নিয়ে পর্যটকদের অভিযোগের শেষ নেই। যানজট, অপরিকল্পিত অবকাঠামো ও বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেকেই বিশ্বের এ দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণের লোভ সংবরণ করেন। অবশেষে এ শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের এক মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, যানজট নিরসন, পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাস্তবায়নে রয়েছে— কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কক্সবাজার পৌরসভা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজার শহরের ভেতরে-বাইরে চারটি সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্ত করা হবে। সড়কগুলো হলো— প্রধান সড়ক, বাইপাস-কলাতলী সড়ক, সৈকত সড়ক ও বাঁকখালী বিকল্প সড়ক। জুলাই থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে। তবে এর জন্য সড়কগুলোর দুপাশ থেকে অনন্ত চার হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এর মধ্যে অধিকাংশই অবৈধ।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজারকে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শহর কক্সবাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে!

শহরের হলিডে মোড় থেকে বাজারঘাটা হয়ে ঝিলংজা এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রধান সড়কটি সওজ বিভাগের অধীন। পাকিস্তান আমলে অধিগ্রহণকালে এ সড়কের প্রশস্ততা ছিল ৮০ থেকে ১০০ ফুট। অবৈধ দখলের কারণে এখন ১০ থেকে ২৩ ফুটে নেমে এসেছে। সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, কউকের নকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কউকের চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ। সওজের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী এ উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফোরকান আহমদ আরো জানান, সড়কটির দুপাশে তিন হাজারের বেশি ঝুপড়ি দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন রয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা শিগগিরই উচ্ছেদ করা হবে।

এছাড়া শহরতলির লিংক রোড থেকে বাইপাস সড়ক হয়ে কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন হয়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কটিও উন্নীত হচ্ছে চার লেনে। এর জন্য সওজের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৯৪ কোটি টাকা। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, সড়কটির প্রস্থ হবে ৮০ ফুট। এ সড়কের দুপাশের অবৈধ স্থাপনাও সরানো হবে।

এদিকে লিংক রোড বাইপাস সড়ক পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা ঝিলংজা ইউনিয়নের আওতাধীন। এরই মধ্যে সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিস দেয়া হয়েছে জানিয়ে ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, সমুদ্রসৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ১ দশমিক ৯ কিলোমিটারের একটি বহুমুখী সৈকত সড়ক নির্মাণ করছে কউক। কাজটি করবে সেনাবাহিনী। এ সড়কের পাশে থাকবে ওয়াকওয়ে, বাইসাইকেল লেন, ব্রেস্টফিড সেন্টার, লকার, ওয়াই-ফাই জোন ও ফুড কর্নারসহ বিনোদনের নানা ব্যবস্থা। সড়কটি উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন কউক চেয়ারম্যান।

অন্যদিকে শহরের প্রধান সড়কে যানজট নিরসনের জন্য শহরের বাইরে বাঁকখালী নদীর তীর দিয়ে একটি বিকল্প সড়ক করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে যানজট অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানান কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান।