জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম :

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি গঠিত হয়েছে। দুটি কমিটিকেই জেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে বিরাজ করছে উত্তেজনা।

ছাত্রলীগের দুপক্ষই সাতকানিয়া উপজেলায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। গত কয়েকদিন আগে উপজেলা কমিটি ঘোষণা হতে না হতেই, ২৪ঘন্টায় পাল্টা কমিটি। ফলে অনেকে এতে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন নেতা-কর্মীরা।

সূত্র জানায়, গত ২০ জুন গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুসারে আব্দুল মন্নান কে সভাপতি ও তোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী (তুহিন) কে সাধারণ সম্পাদক করে সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।

খুব অবাক করা কান্ড এক দিনের মাথায় এই কমিটি না মেনে পুনরায় পাল্টা কমিটি ঘোষনা করে জেলা ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ।

যে অংশটি দাবি করছে তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও সাতকানিয়া উপজেলার মিনহাজ পক্ষের অনুসারী। তবে দক্ষিণ জেলা সাঃ সম্পাদকের সাথে বারংবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে গত ২১শে জুন শফিউল আলম সোহেল কে সভাপতি ও ইয়ামিনুর রহমান ইমন কে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয়।

যেটা জেলা ছাত্রলীগের একপক্ষ অনুসারী। এতে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান ও তাওহীদুল ইসলাম জেকী এবং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও মোঃ বদরুদ্দোজা।

কমিটি প্রকাশের পরপরই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। কেননা যাদেরকে সভাপতি, সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে তারা দুজনেই বিবাহিত ও ৩০ বছরের বাহিরে বয়স। সামাজিক সাইটে তাদের বিবাহের ছবিও দেখা যায়।

এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও হাস্যকর গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কমিটি বলে দাবি করে ছাত্রলীগের আরেক পক্ষ (বোরহান-তাহের অনুসারী)। অনেক অনুসারীরা নতুন পাল্টা ঘোষিত কমিটিকে সাতকানিয়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের এই পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে বর্তমানে দক্ষিণ জেলায় বিরাজ করছে মৃদু ও চাপা উত্তেজনা। যদিও চট্টগ্রামের পুরা দক্ষিণ জেলা বোরহান ও তাহের নেতৃত্বাধীন পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করছেন।

পাল্টাপাল্টি কমিটি বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের একটি অংশ অভিযোগে জানায়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাঃ সম্পাদক ছাড়া আর কারো এখতিয়ার নাই কমিটি দেয়ার। এমনকি অবিবাহিত, ছাত্রত্ব থাকা,বয়স ২৯ ও বৈধ কমিটির মেয়াদ এক বছর,কমিটি দিচ্ছে ২ বছরের যা কোনটাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়নি বলে দাবি তাদের।

জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, “ছাত্রলীগের নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে,গঠনতন্ত্র মোতাবেক সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কারো কমিটি দেয়ার এখতিয়ার নাই। এসব অসাংগঠনিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কার্যকলাপের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই”।

পাল্টা কমিটি দেওয়া সহ-সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম জেকি বলেন,“আমরা মাঠের তৃণমূল ও জামাত শিবিরের সাথে যুদ্ধ করা ছাত্রদের মুল্যায়ন করেছি আর ওদেরটা পকেট কমিটি। সাংগঠনিক ভাবে সহ-সভাপতি ও যুগ্ন সম্পাদক কমিটি দিতে পারে”।

এছাড়াও পাল্টা কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি বিবাহিত কিনা এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে বলেন,“ছবি ইডিট করে আজকাল অনেক কিছু করা যায়। তবে বিবাহ ফেক্টর না বয়সটা ঠিক রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি”।

এবিষয়ে সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দীন বলেন, “এ কমিটির কোন ভিত্তি নেই। সম্পুর্ণ ভুয়া এবং প্রকৃত ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ কমিটি দিয়েছে বলে আমি মনে করি। পাল্টা কমিটির দুজনেই বিবাহিত এবং জামাত বিএনপির সাথে জড়িত। এ কমিটি নিয়ে কোন কথা বলার যুক্তিক রয়েছে বলে আমি মনে করিনা। কেননা আমরা সকলের সাথে যোগাযোগ করেই যে কমিটি দিয়েছি তা বৈধ”।

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মোতালেব জানান, “ছাত্রলীগের সভাপতি সেক্রেটারি যে কমিটি দিয়েছে সেটাই বৈধ। এছাড়া বাকিটা অবৈধ আর ভুয়া। আমরা পুর্বেটা বৈধ হিসেবে মানবো”।

একটি অংশ ওই পাল্টা কমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুসারী বলে দাবি করলেও তিনি জানান, “এ কমিটি বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং কেহ কমিটি দেওয়ার আগে যোগাযোগ করেনি”।

আরো জানান, “ঈদের কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের উপজেলা কমিটি বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে যোগাযোগ করে পরে কমিটি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন”।