এম আবুহেনা সাগর, ঈদগাঁও:

গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ঈদগাঁও বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিন্মাঞল এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে, হাজার হাজার ঘরবাড়ী এখনো পানিবন্ধি অবস্থায় রয়েছে। সর্বশ্রেনী পেশার লোকজনের মাঝে জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে বললেই চলে।

১২ জুন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বন্যার পানিতে জেলা সদরের বৃহৎ বানিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁও বাজারের প্রধান ডিসি সড়কসহ অলি গলি জুড়ে হাঁটু পরিমান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এমনকি বাজারের নিউ মার্কেট,বেদার মার্কেট, মাতবর মার্কেট, হাজী মার্কেট, হাসপাতাল সড়ক,চাউল বাজার সড়ক,স্বর্ণপল্লী এলাকা,বাজারের পশ্চিমগলি,শহীদ মিনার সড়ক,মসজিদ সড়ক,কাপড়ের গলি,মাছবাজার সড়ক,ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ,ইউনিয়ন ভূমি অফিস,ঈদগাঁও উপ ডাকঘর ও তরিতরকারী বাজারে হাটু পরিমান পানিতে নিমজ্জিত ছিল। ঈদগাঁও নদীতে ঢলের পানি বৃদ্বি আর টানা বৃষ্টিপাতে লোকজন চরম আতংকে রয়েছে। পাশাপাশি জেলা সদরের ঈদগাঁও বাজার ছাড়াও পার্শ্ববতী বৃহত্তর ঈদগাঁওর অন্যান্য ইউনিয়নের নিন্মাঞল এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তৎমধ্য ইসলামাবাদ ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রাম প্রবল বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে এখনো ২/৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দক। আবার উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পোকখালীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামাঞ্চল ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে ৪/৫ শত পরিবারের প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার লোকজন পানিবন্দি রয়েছে। সে সাথে গোমাতলীতে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে

৫/৬টি মাছের প্রজেক্টে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও জেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ উদ্দিন খোকা।
এদিকে আরেক উপকূলীয় ইউনিয়ন চৌফলদন্ডী এলাকায় বেশ কিছু বাড়ীঘর পানিবন্দি হয়ে পড়ে বলে জানান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি এহেচানুল হক। তবে এসব পানিবন্দি এলাকার অসহায় লোকজনের মাঝে আসন্ন ঈদের আনন্দ নিরানন্দে কাটবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেন অনেকে।

অপরদিকে চলতি ব্যবসায়ীক মৌসুমে ঈদগাঁও বাজারে প্লাবিত হওয়ায় ঈদের কেনা কাটা করতে ক্রেতারা মাকের্টমুখী হতে না পারায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়েছেন। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত থামছেনা। এদিকে প্রবল পানির তোড়ে গুরুত্বপূর্ণ পোকখালী যাতায়াত সড়কের জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে জন ও যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কদিন ধরে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ঈদগাঁও বাশঁঘাটা হয়ে ইসলামাবাদ যাতায়াতের দীর্ঘদিনের একমাত্র কাঠের সেতুটি। সেখানে বর্তমানে কর্মমুখী লোকজন নদীর এপার ওপার হচ্ছে নৌকা দিয়ে।জাহানারা বিদ্যালয়ের সামনে বিশাল অংশ ভেঙ্গে পোকখালী সড়কে বর্তমানে চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পোকখালী ও ইসলামাবাদের প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষজন চলাফেরায় সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে। দ্রত সময়ে যদি এ ভাঙ্গন সংস্কার করা না হয় তাহলে আরো ব্যাপক আকারে ভাঙ্গনের আশংকা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। আবার সুষ্ট ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ঈদগাঁওর জাগির পাড়া,জালালাবাদ সওদাগর পাড়ায় বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে একাকার হয়ে পড়েছিল। ঈদগাঁও ইউনিয়নের বৃহত্তর মাইজপাড়ায় ভরাখালের উপর কতিপয় লোকজন দোকান নির্মান আর ক্ষেত্র খামারের নামে খাল দখল করার কারনে ভরাখালটি দিনদিন সংকীর্ণ হওয়ায় বৃষ্টির পানি চলাচল করতে না পারায় খালের নিকটবর্তী বাড়ীঘরের উঠানে পানিবন্ধি হয়ে পড়ে। দূর্ভোগ আর দূর্গতিতে পড়ছে মহিলারা। রান্নারকাজেও কষ্ট পাচ্ছেন বলে জানান গৃহবধুরা।

ঈদগাঁওর চাউল বাজার সড়কের ব্যবসায়ী বাবুল রুদ্র আজকের ককসবাজারকে জানান, ঈদগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম ভোমরিয়াঘোনা,রুদ্র পাড়া, চৌধুরী পাড়া,কুলাল পাড়ার বাড়ীঘর প্লাবিত হয়ে পড়ে। পানিবন্দি হওয়া লোকজন অতিকষ্টে দিনপার করে যাচ্ছে বলেও জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার আবদুল হাকিম, তাঁর এলাকায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এখনো পর্যন্ত অসহায় লোকজনের মাঝে ত্রান সামগ্রী পৌছেনি বলে জানান। অন্যদিকে পালপাড়ার মেম্বার প্রিয়তোষ পাল মুন্নার মতে, তাঁর ওর্যাড়ে ৪/৫ শতাধিক পরিবার বন্যার পানিতে প্লাবিত। অধ্যবদি পর্যন্ত ও সরকারী বা সেসরকারী কোন সংস্থার পক্ষ থেকে পানিবন্দিদের জন্য এলাকায় ত্রান আসেনি।

এদিকে ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ছৈয়দ করিম এ প্রতিনিধিকে জানান,বাজারে টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বেডিবাঁধ না হওয়ায় প্রতিবছর ঈদগাঁও বাজারবাসীকে মরন দশায় পড়তে হচ্ছে। যদি ডেনেজ ব্যবস্থা ও বেড়িঁবাধ নির্মান করা হল, তাহলে পানি থেকে রক্ষা পাবে বাজারের ব্যবসায়ীসহ সাধারন লোকজন।