শফিকুল ইসলাম

রবীন্দ্রনাথ কি আসলেই বিশ্বকবি না পশ্চিমবঙ্গের কবি এ বিষয়টি ভাবতে গেলে স্বভাবতই নীচের প্রশ্নগুলো মনে আসেঃ-

১। ঢালাওভাবে বাংলাদেশে রবীন্দ্রজয়ন্তী যেভাবে পালিত হয় বিশ্বের সর্বত্র কি রবীন্দ্রজয়ন্তী এভাবে পালিত হয়? এমন কি ভারতের সর্বত্রও রবীন্দ্রজয়ন্তী ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হয় না।

২। পশ্চিমবঙ্গের কবি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য বিশ্বের কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য? কিংবা কটি দেশে রবীন্দ্র চর্চা হয়? যেমন ইংরেজ কবি শেক্সপীয়ার বিশ্বে আলোচিত ও বহুলপঠিত একজন কবি।

৩। নোবেল পুরস্কার দেয় ইউরোপের সুইডেন নামক একটি দেশের নোবেল কমিটি। এটি বিশ্ব সংস্থা বা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান নয়। তাছাড়া উক্ত কমিটিতে বিশ্বের সকল দেশের প্রতিনিধি নেই।

৪। ইউরোপের সুইডেন দেশের নোবেল কমিটি তাদের পছন্দের আরো অনেক কবিকে নোবেল পুরস্কার দিয়েছে, তাই বলে তারা নিজেদের বিশ্বকবি দাবী করেননি। তাছাড়া এটি নোবেল কমিটির কিছু লোকের ভাললাগা/মন্দলাগার বিষয়টি জড়িত, এটি বিশ্ববাসীর মতামতের প্রতিফলন নয়।

৫। কোন প্রতিষ্ঠানের পুরষ্কার টাকার অংকে বেশী হলেই উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সাহিত্যের মান সর্বোচ্চ একথা বলা যায়না। প্রতি বৎসর নোবেল কমিটি অনেক প্রতিভাবান সাহিত্যিককে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করে। তাছাড়া সারাবিশ্বে গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের কত কপি বিক্রি হয়েছে, তা থেকে কাব্যগ্রন্থটির জনপ্রিয়তা যাচাই করা যেতে পারে। নাকি এটির (ইংরেজী ভার্সন) সুইডিশ লাইব্রেরীর যাদুঘরের এককোণায় পড়ে আছে?

৬।তাছাড়া তৎকালীন কলিকাতার জোড়াসাকোর প্রভাবশালী ঠাকুর পরিবারকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে প্রভাব বিস্তার করেছিল বলে শুনা যায়। ইংরেজ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস গীতাঞ্জলীর মুখবন্ধ লিখে দিয়েছিলেন বলেই নোবেল কমিটি গীতাঞ্জলীকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন।

৭। গীতাঞ্জলীতে ঈশ্বর বন্দনার পাশাপাশি ঔপনিবেশিক শোষকগোষ্ঠী ইংরেজ বন্দনাও প্রাধান্য পেয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের এদেশীয় দালাল জমিদার (খাজনা আদায়কারী)।

৮। রবীন্দ্রনাথ বাংলাভাষায় লিখিত গীতাঞ্জলীর জন্য নয়, ইংরেজী ভাষায় লিখিত গীতাঞ্জলীর জন্য (Songs Offering) নোবেল পুরস্কার পান। সেই অর্থে বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের একটি পুরস্কার অর্জন করা উচিৎ ছিল।

৯। অনেকেই বলে থাকেন বাংলাভাষায় লিখিত গীতাঞ্জলী কোন উৎকৃষ্ট কাব্যগ্রন্থ নয়। বরং বাংলাভাষায় লিখিত রবীন্দ্রনাথের আরো উৎকৃষ্ট কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

১০। তাছাড়া গীতাঞ্জলীতে ঈশ্বরের কাছে আত্মনিবেদনের নামে কবি যেভাবে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছেন, এ যুগের অর্থে কেনা গণিকারাও এভাবে দেহমন বিলিয়ে দেয় না। ঈশ্বরের কাছে এভাবে অসম আত্মবিসর্জনের মাধ্যমে মানবিক মর্যাদা চরমভাবে ভুলুন্ঠিত হয়েছে।

১১। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলী কি আসলে একটি মৌলিক কাব্য সাহিত্য নাকি বিশ্বের মরমী সুফীবাদী কবি যেমন ইরানের কবি ওমর খৈয়াম ও কবি হাফিজের চুরি-করা ভাবসম্পদে পরিপূর্ণ।

লেখক- শফিকুল ইসলাম, উপসচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়। কবি, গীতিকার ও ব্লগার।