বাংলাদেশ জার্নাল :
ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের সাবেক শিক্ষক অদ্বৈত কুমার রায়কে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায় একটি সিন্ডিকেট করে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ বিক্রি করছেন। তার সাথে রাজধানীর উত্তরার দুটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও ঢাকা শিক্ষার্বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের একজন নেতা জড়িত। এই চক্রের আরেক প্রভাবশালী সদস্য বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতা ও বোর্ড অফিসেই গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত।

ঝিনাইদহ জেলা শহরের কেসি কলেজ পাড়ার বাসিন্দা অদ্বৈত কুমার রায়। এলাকায় তিনি পরিতোষ নামে পরিচিত। সরকারি কেসি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সাবেক শিক্ষক তিনি। তারা ৩ ভাই। ঝিনাইদহে ৩ তলা বিশিষ্ট বাড়িতে অন্য দুই ভাই থাকেন। নিজের অংশ বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে অদ্বৈত ঢাকার রাইফেল স্কোয়ারের পাশে একটি বাসাতে থাকেন।

অদ্বৈত কুমারের ভাই অচিন্ত কুমার জানান, গত ৫/৬ বছর তিনি বাড়িতে থাকেন না। ঢাকার কোথায় বাসা তা স্পষ্ট করে না বললেও তিনি জানান, রাইফেল স্কোয়ারের পাশে কোথাও থাকেন। তাদের সাথে যোগাযোগ কম বলে জানান।

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. বিএম রেজাউল করিম জানান, ২০০৯ সালে কেসি কলেজ থেকে প্রমোশন পেয়ে তিনি অন্যত্র বদলি হন।

কলেজটির উপাধ্যক্ষ প্রফেসর অশোক কুমার মৌলিক জানান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগে তাকে কিছুদিন সহকর্মী হিসাবে দেখেছেন। তবে এমন কোন ঘটনার সাথে আগে জড়িত থাকার কথা শোনেননি।

আর এমন ঘটনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন কলেজের প্রধান সহকারী মো. আসাদুজ্জামান ।

এদিকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা জানান, তদন্ত করে সত্য প্রমাণিত হলে যথাযথ শাস্তি চান। এই শিক্ষককে নিয়ে ফেসবুকেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকে। অদ্বৈত কুমার রায়ের নৈতিক চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেকে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি কলেজ শাখায় পদায়ন পান সরকারি কলেজের শিক্ষক অদ্বৈত কুমার রায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকরণের অযোগ্য শিক্ষককেও যোগ্য মর্মে প্রতিবেদন দেন অদ্বৈত। আবার সমিতি, ফোরাম ও নো বিসিএস নো ক্যাডার স্লোগানধারীদের সুনজরে থাকতে সরকারের কলেজ জাতীয়করণ ও আত্তীকরণ বিরোধী সভা-সমাবেশ ও মামলা-মোকদ্দমারও বড় ডোনার তিনি।

২০১৩ সালের ২৩ জুন শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক পদে প্রেষণে যোগ দেন অদ্বৈত কুমার। এই যোগদানের পেছনে কলকাঠী নাড়েন শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক একজন এপিএস ও তৎকালীন একজন যুগ্ম-সচিব। ২০১৭ সালে বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ বাগান অদ্বৈত। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি অদ্বৈতকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও কালো পোশাক পরিহিত একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষা মাফিয়া ডনের তদবিরে অদ্বৈত কুমারের বদলির আদেশ স্থগিত হয়। আজও তিনি ওই পদেই রয়েছেন।

জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক পিএস এবং বর্তমানে একজন অতিরিক্ত সচিবও অদ্বৈতকে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। তবে জিপিএ-৫ বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে অদ্বৈত কুমার এসব ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেছেন।

২০১৭ সালে এইচএসসিতে রাজধানীর ডেমরার আইডিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ থেকে মাত্র চার জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। একই এলাকার ঢাকা চার্টার্ড কলেজ থেকে অংশ নেয় মাত্র তিনজন। ধানমন্ডির নিউ ক্যাসেল কলেজ থেকে ৬ জন ও জাস্ট ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে চার জন। এইসব কলেজের অনুমতি থাকার কথা নয়। কিন্তু অদ্বৈত কুমার ও তাদের সিন্ডিকেটের সহায়তায় টিকে রয়েছে এসব কলেজ। প্রয়োজন না থাকলেও প্রতিষ্ঠা হচ্ছে নতুন নতুন কলেজ। এমন অসংখ্য অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।