ডেস্ক নিউজ:
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান এইচ সরকারগণজাগরণমঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, বুধবার বিকালে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আইনশঙ্খলা বাহিনী তাকে মাদকবিরোধী অভিযানের যৌক্তিকতা বোঝাতে চেয়েছে। তিনি বলেন, ‘যেসব প্রশ্ন করতে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেসব প্রশ্ন শাহবাগে দাঁড়িয়েও করা যেত। গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, যে প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়া সিনেমাটিক স্টাইলে নিয়ে যাওয়াও কাম্য নয়।’

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘তারা আমাকে মাদকবিরোধী অভিযানের যৌক্তিকতা বোঝাতে চেয়েছেন। আমিও তাদের বলেছি আমরা মাদকের বিরুদ্ধে। আমি এও বলেছি কেন আমরা বিচার বহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে। অভিযানের প্রতি আমাদের শতভাগ সমর্থন আছে। কিন্তু অভিযানের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিচার করতে চাইলে সরকার আলাদা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করেও করতে পারে।’

ইমরান আরও বলেন, ‘শাহবাগে সমাবেশের অনুমতি আমাদের আগে থেকেই নেওয়া ছিল। পুলিশ কমিশনার এবং শাহবাগ থানায়ও অবহিত করা হয়েছিল। সমাবেশের অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন করা র‍্যাবের এখতিয়ারে নেই। পুলিশ চাইলে অনুমতির ব্যাপার খতিয়ে দেখতে পারে। আমি এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে গাড়িতে তোলা হয়। সেখানে সমাবেশের লোকজন পর্যন্ত জড়ো হয়নি, এমন সময় আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার চোখে কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় এবং হাতে হাতকড়ি পরানো হয়। আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তা আমি প্রথমে বুঝিনি। পরে সেখান থেকে ফেরার পথে বুঝতে পারলাম কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’

ইমরান অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে র‍্যাবের অংশ আছে। কারণ বেশিরভাগই র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এখন ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তারা তুলে নিয়ে গেছে কিনা এটাও একটা প্রশ্ন। কারণ তারা আমাকে সেখানে নিয়ে যা প্রশ্ন করেছে এগুলো শাহবাগে দাঁড়িয়ে করা যেত। অযথা হামলা করে আহত করে সমাবেশ করতে না দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা আমি দেখি না। নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্র নেতাদের যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যেভাবে পেটানো হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। প্রতিবাদ করা নাগরিকের সমাবেশে যদি বাধা দেওয়া হয় সেটা খুবই দুঃখজনক। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, কোনও মামলা নেই তারপরও আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি এম জিলানী শুভ বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত সমাবেশের আগেই মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে কোনও প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়াই আটক করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছয় ঘণ্টা আইন বহির্ভূতভাবে তাকে আটক রেখে রাত ১১টায় ছেড়ে দেয়। যথাযথ অনুমতি থাকা সত্ত্বেও গণজাগরণ মঞ্চের বিকালের সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ ধারা অনুযায়ী সমাবেশ করার অধিকার সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ‘মৌলিক অধিকার’ অংশ দ্বারা রক্ষা করা হয়েছে। গতকাল শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের পূর্ব ঘোষিত সমাবেশের সুনির্দিষ্ট অনুমতি ছিল। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অস্ত্রের জোরে যেই তাণ্ডব চালিয়েছে তা নজিরবিহীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু রাষ্ট্র তার সিদ্ধান্ত কখনই আইন বহির্ভূতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে না। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে না যাওয়ার কারণে বড় বড় অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে আসছে। সুনির্দিষ্ট আইন থাকার পরেও বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এসব প্রশ্ন করা আমাদের অধিকার। মাদক ব্যবসায়ীদের যেসব সিন্ডিকেটের কথা আমরা গনমাধ্যমে জানতে পারি তাতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে রাঘব বোয়ালদের নাম যেন প্রকাশিত না হয় সে কারনেই কি বিনা বিচারের হত্যাকান্ড?’

মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, ‘আমরা দেখেছি বিশ্বের সব জায়গায়তেই মাদকবিরোধী অভিযানে রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু অভিযানের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করা যাবে না। অপারেশন সার্চ লাইটের সময় থেকে আমরা বলছি বিচারিক আদালতের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের কি বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা নেই? গতকাল নাটকীয়ভাবে হ্যান্ড শেক করার বাহানায় ইমরান এইচ সরকারকে ধরে নিয়ে গেছে। পত্রিকায় র‍্যাবের বক্তব্য দেখলাম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। র‍্যাবের এখতিয়ারে নেই সমাবেশের অনুমতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার। সেটা পুলিশের কাজ। আমরা মাদকবিরোধী অভিযানের পক্ষে, কিন্তু বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড আমাদের সংবিধান পরিপন্থী। ইমরান ধরে নিয়ে গেলেও কিন্তু আমরা ভীত হচ্ছি না, আমাদের সংগ্রাম চলমান থাকবে।’

গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (৭ জুন) বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।