মহসীন শেখ॥

বহুবার মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হলাম একরাম হত্যার লোমহর্ষক অডিও ক্লিপটি। পিতার জন্য মরিয়া তার কন্যার কোমল সূরে আর্তনাদ জড়ানো বাবা বাবা শব্দটি শোনলে যেনো নিজের পরিবারের কন্যা সন্তানদের চেহারা চোখে ভেসে উঠে।তবুও বহু কষ্টে ধৈর্য্য ধরে নিরালায় কোলাহল মুক্ত হয়ে শোনে রিসার্চ করার চেষ্টা করলাম অডিও ক্লিপটি।

রেকর্ডটি শোনে যতটুকু বুঝলাম অডিওটি ভাইরাল না হলে বিভিন্ন সরকারী বাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তারের হানাদার বাহিনী ও রাজাকারের পেতাতœারা একরামুলের মতো ক্রসফায়ার নাটকটি বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যেতো আর বাকী সব ক্রসফায়ারের ঘটনার মত চাপা পরে থাকতো। একরাম মৃত্যুর পূর্বে শেষবার যখন তার আদরের মেয়ের সাথে কথা বলছেন তখন হয়তো তার মনে একটাই আশা ছিলো তার দুই কন্যা সন্তান আর স্ত্রীর সাথে শেষবার একটু দেখা করে জড়িয়ে ধরে বলবে তোমাদের কিছুই রেখে যেতে পরলামনা। কিন্তু ব্যর্থ আাশা। কারণ মিশন বাস্তবায়নের বলি হতে

হবে তাকে। এক কথায় যার কন্যা সন্তান আছে সে বুঝতে পারবে এ ব্যথা।

যে যাই বলুন আজ একটি অডিও রেকর্ড টক অব দ্যা ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। একটি লোমহর্ষক ঘটনার জ্বলন্ত স্বাক্ষি অডিও রেকর্ডেই থমকে দিলো সাঁজানো বন্দুকযুদ্ধ মিশন।

তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পিতৃহারা। তার পিতা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকেও একই বুলেটে ঝাঝরা করে হত্যা করা হয়েছিলো। তিনি নিশ্চয় একরাম হত্যার বিষয়টি আমলে নিবেন সকলেরই এই প্রত্যাশা।

এবার আসি আসল জায়গায়- র‌্যাব ঘটনার র্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্যমতে ‘নিহত একরামকে নিয়ে তারা মেরিন ড্রাইভে মাদকের সন্ধানে যায়। সেখানে আগে থেকে উৎপেতে থাকা একরামের সহযোগীরা তাদের উপর হামলা করলে দুই পক্ষের গুলি বিনিময় হয়। এতে অপর গ্রুপের গুলিতে একরামের মৃত্যু হয়।’ বাহ দারুণ কাহিনী সাঁজানো হলো। তবে অডিও ক্লিপ শোনে যা বুঝা গেলো তা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাত ১১ টায় একরাম জমি সংক্রান্ত কাজের কথা বলে ঘর থেকে বের হয়। বের হয়ে সে দেখা করতে যায় ‘মেজরের সাথে। দেখা করতে গেলে সাথে সাথেই একরামকে মেজরের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা গাড়িতে তুলেন। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় সন্ধ্যার পর আর্মি এবং পুলিশের চেকপোস্ট ব্যতীত জনমানব শুণ্য মেরিন ড্রাইভ সড়কে।

শেষবার যখন একরামের সাথে মেয়ের কথা হয় তখন চলন্ত গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। ঠিক সেই মুহুর্তে একরাম যখন বুঝতে পারলো তাকে হত্যা করা হবে এবং তার স্ত্রী কন্যাদের আর কখনও দেখতে পাবেনা তখনই মেয়ের সাথে কথা বলবার সময় একরামের গলা ধরে আসে। তখনই মেয়ে জিজ্ঞাসা করে’-আব্বু তুমি কান্না করতেছো যে?

তবে কথা হলো একরামের রিসিভ করা অবস্থায় থাকে কিভাবে এবং শেষ পর্যন্ত কেন কল কেটে দেওয়া হয়নি? আমার মতে একরামকে হত্যার পেছনে ছিলো মোটা অংকের মিশন। এ মিশন বাস্তবায়ন করতে তারা এমন মরিয়া হয়ে উঠেন যে দিন দুনিয়ার কোন খবর ছিলোনা। এটা সৃষ্টিকর্তার হুকুমে পাপের একটি চিহ্ন রেখে যাওয়ার মতো ঘটনা বলা যায়। হয়তো ঘটনার দিন অথবা এরকিছু মুহুর্ত পর্যন্ত একরামের পরিবার জানেননা পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি তাদের মোবাইলে রেকর্ড হয়ে গেছে। আর যখনই জানতে পারেন তখনই শেষ আদালত হিসেবে পরিচিত মিডিয়ার আশ্রয় নেন

একরামের পরিবার।একরামের হাতে মোবাইল দেখতে পেয়ে হয়তো কেড়ে নিয়েছিলের কিলিং মিশনের দায়িত্বরত কোন এক কর্মকর্তা। রেকর্ডে বার বার যার কন্ঠে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ শোনা যাচ্ছিলো। মোবাইলটি রিসিভ করা অবস্থায় সেই কর্মকর্তার শরীরে ছিলো। যা ওই কর্মকর্তার ¯পষ্ট শব্দে বুঝা যায়। আর এই অডিও ক্লিপটিই হয়তো সৃষ্টিকর্তার গায়েবী শক্তির নিদর্শন।

অডিও রেকর্ড অনুযায়ী মেরিন ড্রাইভে আসার পর গাড়িতে হাত বাঁধা অবস্থায় একরামকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। অডিওর ২ মিনিট ২২ সেকেন্ডে গাড়ির দরজা খোলার আওয়াজ শোনা যায়। এরপর শোনা যায়, কেউ একজন একরামুল কে জিজ্ঞাসা করছে, -তাইলে তুমি তুমি জড়িত না? একরাম জবাব দিচ্ছে, -না আমি জড়িত না। অতঃপর আর্মস লোড করার শব্দ, তারপর পর পর দুইটা ফায়ার এবং একরামের গোঙ্গানির শব্দ। তারপর নিস্তব্ধ একরাম!

এরপর হত্যার মিশনে রূপ দিতে শুরু হয় ক্রসফায়ার নাটক। একরাম যখন গুলি খেয়ে মাটিতে পরে মৃত্যুরর কোলে ঢলে পড়ছেন তখন অন্য পাশে ৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের বন্দুকযুদ্ধের নাটক। নাটকের স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ওই মিশনে উপস্থিত অন্য র‌্যাব সদস্যরা ননস্টপ হুইসেল বাজাচ্ছিলো। অন্যরা কিছুক্ষন পর পর ফাঁকা গুলি ছুড়ছে ছুড়ছে। আবার আরেকজন বাতাসকে কাল্পনিকভাবে অকথ্য ভাষায় গালমন্ধ করছিলো। একইভাবে “ধর ধর” বলে ব্যাপক হাঁকডাক দেয়া শুরু করে। নাটকের অংশটা এমন ছিলো যে একরামকে ইয়াবা উদ্ধার করতে নিলে অন্য একটি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের উৎপেতে থাকা গ্রুপ তাদের উপর গুলি চালায়। আর সেখানেই নিজেদের মধ্যে গুলি বিনিময়ে একরামের মৃত্যু হলো। সেসময় উপস্থিত র‌্যাব সদস্যরা একরামের উপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেন। বাহ। কি দারুণ।

মহসিন শেখ

যাই হোক ১০মিনিট ৩০সেকেন্ডে তাদের কেউ একজন নির্দেশ দিচ্ছেন একরামের লাশের হাত খুলে দিতে। ১১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে একই ব্যাক্তি নির্দেশ দিচ্ছেন একরামের লাশের পাশে এলজির খোসা ও ২/৩টা পিস্তল রেখে পকেটে ইয়াবা দিয়ে দেয়ার জন্য। অডিও ক্লিপটি শোনে বুঝতে পারলাম মৃত্যুর সাথে যখন একরাম পাঞ্জা লড়ছিলো তখনও তার হাত বাঁধা ছিলো। তাহলে ধরে নিতে হয়- একরাম এমন এক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি যিনি হাত বাঁধা অবস্থাতেও দারুণভাবে গুলি চালাতে পারে।

আজ এভাবে একজন একরামের জীবন তার কন্যার সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলতে অনেকটা লাইভ দেওয়ার মতো করেই শেষ হয়ে গেলো। আর অপর দিকে দেশের শীর্ষ তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদারদের কেউ প্রশাসনের নাকের ঢগা দিয়ে বৃদ্ধাক্সগুলী দেখিয়ে দেশ ত্যাগ করছে। আবার শীর্ষ ইয়াবা গডফাদাররা প্রকাশ্যে কক্সবাজার শহরে ঘুরছে। আর মাঝখানে তোপের মূখে রয়েছে প্রশাসনকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তথ্য দিয়ে বিপাকে পড়া সাধারণ মানুষ।