এমপিদের লাইব্রেরিতে টানতে কোটি টাকা বিনিয়োগ

জাগো নিউজ:

সংস্কার হচ্ছে জাতীয় সংসদের গ্রন্থাগার। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে এ কাজ। কেনা হচ্ছে তিন লাখ টাকার বই। গবেষণার জন্য সব সুবিধাসহ নির্মিত হচ্ছে কাঁচঘেরা নিরিবিলি চেম্বার। তবুও সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, পড়ালেখা ‘বিমুখ’ এমপিদের টানতে পারবে কি লাইব্রেরি?

সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ ভবনের আমব্রেলা প্রকল্পের আওতায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সংসদের লাইব্রেরি সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। গত ডিসেম্বরে এ কাজ শুরু হয়। তবে কী কী সংস্কার হবে স্থাপত্য অধিদফতরের সহকারী প্রধান স্থপতি বেগম সাইকা বিনতে আলম একটি পাওয়ার পয়েন্টে সেগুলো উপস্থাপন করেন। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুমোদন দিলে কাজ শুরু হয়।

কোটি টাকা প্রজেক্টের লাইব্রেরিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি কর্নার থাকছে। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনেরও (সিপিএ) কর্নার রাখা হয়েছে। বই যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য থাকছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। বইয়ের দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য বইগ্রহীতার কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার পর জীবাণুমুক্ত করতে Book sterilize Machine -এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এছাড়া সংসদ লাইব্রেরির বইয়ের অনলাইন ক্যাটালগের জন্য Koha Library Software ইনস্টল করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৮১টি শিরোনামের মোট ১২০০ পুস্তকের ক্যাটালগ ইনপুট দেয়া হয়েছে। আউট সোসিংয়ের মাধ্যমে লাইব্রেরির ৪০ হাজার পুস্তক অন লাইনে ইনপুটের কাজ চলছে। ২০১৪ সাল থেকে ই-নিউজ ক্লিপিংসের কাজ নিয়মিতভাবে চলছে। সংসদ বিতর্ক সার্চের জন্য মার্চ ২০১৪ হতে D Space (Digital Repository Software) এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে অষ্টম ও নবম সংসদের বিতর্ক থেকে যে কোনো তথ্য সার্চ করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধশালী হিসাবে দেখতে চান। এজন্য তিনি বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকী বছর বছর বাজেটও বাড়াচ্ছেন।

এ বিষয়ে সংসদ লাইব্রেরির পরিচালক (গ্রন্থাগার ও গবেষণা) মোশতাক আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, সংসদ কমিশন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই কিনতে কত টাকা প্রয়োজন তা জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম ১০ লাখ টাকা হলেই চলবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ টাকা দিয়ে হবে না। আরও টাকা নিন। আমি সংসদের সব জায়গায় বই দেখতে চাই। যেখানেই এমপিদের জায়গা আছে সেখানেই বুক সেলফ বসান। লাইব্রেরির সব জায়গায় যেন বই থাকে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এতকিছুর পরও কি লাইব্রেরি টানতে পেরেছে এমপিদের?

জাতীয় সংসদের লাইব্রেরিতে রাখা এমপিদের উপস্থিতি খাতা থেকে জানা গেছে, ২০১৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত ৩৭২ বার সংসদের লাইব্রেরি ব্যবহার করেছেন এমপিরা। প্রথম লাইব্রেরিতে যান সাবেক এমপি ও খুলনার মেয়র আবদুল খালেক।

কয়েকজন এমপিই বারবার সংসদে গেছেন। তারা হলেন- পিরোজপুরের এমপি রুস্তম আলী ফরাজী, পঞ্চানন বিশ্বাস (খুলনা-৫), সংরক্ষিত নারী আসনের আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, অধ্যাপক আলী আশরাফ (কুমিল্লা-৭), শওকত আলী (শরীয়তপুর-৩) ও আবদুল মজিদ খান (হবিগঞ্জ-৩) নিয়মিত লাইব্রেরিতে যান।

এমপিদের লাইব্রেরি ব্যবহার না করায় অসন্তুষ্ট সেখানকার কর্মরতরাও। নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা জানান, এমপিরা তো নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন। বই ও পত্রিকা পড়ায় তাদের আগ্রহ কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুস্তম আলী ফরাজী জাগো নিউজকে বলেন, ‘লাইব্রেরিতে বিভিন্ন দেশের সাংবিধানিক বই আছে। লাইব্রেরি ছাড়া একজন রাজনীতিক অসম্পূর্ণ থেকে যান। মাঠে বক্তব্য দেয়া এক জিনিস আর পার্লামেন্টে স্পিচ (বক্তব্য) অন্য জিনিস। সেজন্য লাইব্রেরি ভেরি মাস হেল্পফুল। এ কারণেই আমি লাইব্রেরিতে যাই।

বেশির ভাগ এমপি কেন লাইব্রেরিতে যান না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘তারা কেন যান না সেটা জানি না। তবে রাজনীতির একটা গুণগত পরিবর্তন দরকার। রাজনীতিবিদদেরই রাজনীতি করা দরকার। রাজনীতিকরা যদি ব্যবসা বেছে নেন তাহলে তাদের চিন্তাটা ব্যবসার দিকে যায়। কত টাকা ইনভেস্ট করলে কত মুনাফা আসবে…। তখন তিনি আর রাজনীতিবিদ থাকেন না। এ কারণেই হয়তো অনেকে অনীহা দেখান।’

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি জাতীয় সংসদের লাইব্রেরিকে নতুনভাবে সাজাতে, যাতে এমপিরা আকৃষ্ট হন। কারণ তারা যদি লাইব্রেরিতে না যান, পড়াশোনা না করেন, তিনি কখনও ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হতে পারবেন না।’