সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সুলতানা আলভী।

মহসীন শেখ:

“মেঘালয়ের মেঘ সরেনি এখনো, যে ইতিহাসের খুবই মর্মান্তিক-বেদনাদায়ক দিন। এই শোকের বাড়িটির ভিতর-বাহির চারদিকে এখনো শোনশান নিরবতা বুকজুড়ে শোকবাহ কষ্টের বসবাস। এভাবে কেটে গেলো ৬টি বছর। শুধু কাটেনি জমে থাকা স্মৃতিময় সেই মেঘগুলো। চিরচেনা সেই হাসির ঝিলিক। যেন সূর্যের আলোতে ও অন্ধকার। নিরবে কান্না করি প্রতিনিয়তে। সারা জীবন শুধু কেঁদেই যাবে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে থাকা পরিবারগুলো।”

আজ সেই মর্মান্তিক সকড় দূর্ঘটনায় একই পরিবারের সাতজন ও গাড়ি চালক সহ ৮টি তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার ঘটনার দিন। এই মৃত্যুর মিছিলটি আজও ভুলতে পারছেননা নিহতের পরিবার ও কক্সবাজারবাসী। তবুও থেমে নেই গাড়ি চালকদের দৌরাতœ। সড়ক দূর্ঘটনায় একের পর এক নিহতের ঘটনায় লেগেই আছে মৃত্যুর মিছিল। তবুও সড়ক পরিবহণ সেক্টরে গাড়ি চালকদের দৌরাতœ সহক অনিয়ম বন্ধে জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের টনক নড়ছেনা বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের। দিনের পর দিন তাজা প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে আনাড়ি গাড়ি চালক। আর অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা প্রশাসন।

২০১২ সালের ০১ জুন একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজার ইউনিয়নের মালুমঘাটা এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় মুহুর্তেই ঝরে যায় দুই বছরের শিশু কন্যা সহ ০৮টি তাজা প্রাণ। এ ঘটনায় হলো- কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার মৃত আবদুল আলিমের ছেলে কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা শেখ মর্তুজা হোসেন(৭০), তার ভাই কক্সবাজার শহরের সিকদার মহলে অবস্থিত হোসেন ব্রাদার্সের মালিক শেখ ইর্তেজা হোসেন (৫০), শেখ মর্তুজা হোসেনের স্ত্রী শেফায়েতুল আলম রেনু (৬০), শফিউল আলমের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম(৪০), জেলার বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ সুরত আলমের প্রকাশ আলম সাহেবের কন্যা (শেখ মর্তুজা হোসেনের নাতনী) কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজের এইচএস পরিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা আলাভী (১৭), শাহেদুজ্জামান শাহীনের স্ত্রী কক্সবাজার প্রি ক্যাড়েট মডেল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা আফরিন লিপি ও কন্যা আভা (২)। অপর জন হলো মাইক্রোবাসের চালক শহরের বাহারছড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর পূত্র শাহজাহান (৩৫)।

মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় সড়ক দূর্ঘটনার কবল থেকে গুরুতর আহতবস্থায় প্রাণে বেচে যাওয়া রেবেকা সোলতানা আইরিন এখনও মেনে নিতে পারছেননা সেই মৃত্যুর ঘটনা। তিনি বলেন, “ঘটনায় আমি বেচে যাবো তার কোন সম্ভাবনা ছিলোনা। এমনকি আতœীয় স্বজনরা আমার মৃত্যু হয়েছে শুনতে পেয়ে তার জন্যও পরিবাবের অন্যদের পাশে কুড়ে রেখেছিলেন। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। সেদিন আমার পরিবারের ৭জন সদস্যই সেদিন মৃত্যুবরণ করেন। যেই এখনও মনে করলে বুক ফেটে যা। কারও জীবনে যেন এমন মর্মান্তিক মৃত্যু যেন আর কোন পরিবারে না আসে সেই কামনা স্বজনহারা আমি। তবুও তাদের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে এখনও চোঁখের জলকে সম্ভব হিসেবে নিয়ে বেঁচে আছি। সারাজীবন এ কষ্ট বুকে নিয়ে বেচে থাকতে হবে।” নিহতদের স্বরণে তাদের পরিবাবে কোরআন তেলোয়াত ও কবর জিয়াফতের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আইরিনের দাবি, তার পরিবারের ৭জন সহ এরই মধ্যে বহু তাজা প্রাণ ঝরলেও বেপরোয়া গাড়ি চালক এবং অবৈধ যান চলাচল বন্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। সড়কে আনাড়ি গাড়ি চালক এবং অবৈধ যানবহাণ বন্ধে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

তিনি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তাদের জান্নাতবাসী করতে আল্লাহর কাছে সকলের প্রতি দোয়া কামনা করেছেন।