নিজস্ব প্রতিবেদক :

কক্সবাজার শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে অনিয়মটিই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দুর্নীতি ভারে ন্যুয়ে পড়েছে শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম। একের পর এক দুর্নীতির দায়ে সরকারি কার্যালয়টি প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে বার বার। গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যালয়টির কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় বহন করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে সমাজসেবা কার্যালয়টির নাম নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বার বার সাধারণ মানুষের দাবি উঠছে দুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ সমাজসেবা বান্ধব করে গড়ে তোলায় এই কার্যালয়কে।

কিন্তু কার কথা কে শুনে? একবার নয় বার বার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কার্যালয়টি নিয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। কক্সবাজার শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের আশা-আকাংখা পূরণের স্তম্ভ হলেও বর্তমানে এটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মূলতঃ সংস্থাটির সাথে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টি স্বচক্ষে দেখেও চোখ সরিয়ে রেখেছেন বলে ক্ষোভ রয়েছে অনেকের। শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে, শহর সমাজসেবা কার্যালয়কে দুর্নীতিগ্রস্থ ও নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করার দুঃসাহস দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্তারা পায় কোথা থেকে?

খবর নিয়ে জানা গেছে, শহর সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সাধারণ মানুষের কল্যাণে বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। বিধবা ভাতা, প্রতিবন্দ্বী ভাতা, বয়স্ক ভাতা তার মধ্যে অন্যতম। রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের বিভিন্ন প্রকল্প কার্যক্রম। অতি দরিদ্র সাধারণ মানুষ এই সেবা গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু সরকারের এই মহতী উদ্যোগকে ম্লান করে তুলেছে মোর্শেদ আলী রায়হান নামে শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের এক অফিস সহকারী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন, মোর্শেদ আলী রায়হান নামের ওই অফিস সহকারীর কাছে মূলতঃ পুরো শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা জিম্মি। সরকার থেকে প্রদত্ত বিভিন্ন ভাতার বিষয়ে অফিসে সার্বক্ষনিক বিভিন্ন বয়সের লোকজনের আনাগোনা থাকে ওই অফিসে। অফিসে আগত প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবকদের প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার নাম করে এবং বয়স্ক ভাতা তালিকায় নাম এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দরিদ্র লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকেন ওই মোর্শেদ আলী রায়হান।

অভিযোগ উঠেছে, মোর্শেদ আলী রায়হান নামের ওই অফিস সহকারী নারী কেলেংকারির সাথে সম্পৃক্ত। তার কাছে ছোট থেকে বয়স্ক যেকোন ধরণের মহিলারা ওই কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কাজে যেতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এরকম রুচিহীন, নারী কেলেংকারী ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে আসীন হওয়ায় পুরো কার্যালয় জুড়ে আতংক বিরাজ করছে।

এর আগেও ওই পদে ব্যক্তির বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছিল। এনিয়ে ফৌজদারী অভিযোগ এনে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ২৬/২০১৭ নং মামলা দায়ের হয়। যা ওই আদালত অফিস সহকারির বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৩০৪/৩৪ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধের অভিযোগে পিটিশন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয়। ওই কার্যালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা ও অফিস সহকারির বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি দমন আইনের ৫ এর ১ ধারা সহ দন্ডবিধির ৩০৪/৩৪ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনকে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন কক্সবাজার জেলা স্পেশাল জজ আদালত। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার জেলা জজ মীর শফিকুল আলম ২০০ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করে উক্ত মামলার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিক প্রমানিত হওয়ায় মামলার অপরাধ আমলে নিয়ে অপরাধের তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে সমাজসেবার এডি ও অফিস সহকারীকে কক্সবাজার থেকে শান্তিমূলক বদলী করা হয়। মূলতঃ এসব দুর্নীতির ব্যাপারে অফিসিয়ালি কোন ধরণের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কক্সবাজারে দুর্নীতির মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে কক্সবাজারবাসীকে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মোর্শেদ আলী রায়হানের অফিসিয়াল কাজে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই অফিসের আসা সংশ্লিষ্ট মহিলাদের শারীরিক হেনেস্থা করারও অভিযোগ নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মোর্শেদ আলী রায়হান নামের ওই ব্যক্তি প্রকাশ্যে অফিস স্টাফদের হুমকি-ধমকি দিয়ে অফিস কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে বলেও জানা গেছে। মোর্শেদ আলী রায়হান সরকারি চাকরীর পাশাপাশি একটি প্রকল্পের অধীনে চাকরী করেও আলাদাভাবে বেতন উঠাচ্ছে।

সমাজসেবা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের কয়েকজন প্রশিক্ষনার্থী অভিযোগে জানান, কোর্স শেষ করে সনদ গ্রহণ করতে গেলে অফিস সহকারি মোর্শেদ আলী রায়হান বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সনদ দিতে বিলম্ব করে। মূলত অফিস সহকারির হাতেই ট্রেনিং সেন্টারের সনদগুলো থাকে।তাকে আলাদাভাবে টাকা না দিলে সনদ না দিয়ে বিভিন্ন তালাবাহানা করে। তার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযোগ করলেও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা করে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, অফিস সহকারি মোর্শেদ আলী রায়হানের বিভিন্ন আপত্তিকর কর্মকান্ডের জন্য জেলার কোন অফিসে তাকে গ্রহণ করতে চায় না। তারপরও জনবল সংকটের কারনে তাকে কোথাও না কোথাও যোগদান করাতে হয়। সম্প্রতি নারী কেলেংকারী সংশ্লিষ্ট যে কর্মকান্ড ঘটিয়েছে তা নিয়ে আমরা নিজেরাও বিব্রত।

এসব বিষয়ে মোর্শেদ আলী রায়হান এর ব্যক্তিগত ০১৮১৬-০৫৭৮২৬ নং মোবাইলে ফোন করে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমি কোন ধরণের দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আমি কারও কাছ থেকে অনিয়ম করে টাকা-পয়সা লেনদেন করি নাই। আমি কাউকে কোন ধরণের হুমকি-ধমকি দিই নাই। আমার অফিসে আসা কোন মহিলাকে আমি কোন ধরণের হেনস্থা করি নাই। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তবে আমি ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মোর্শেদ আলী রায়হান সম্প্রতি ওই পদে আসীন হয়েছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট পরিষদ ইতিমধ্যে একই অফিসের দুই জনের কাছ থেকে দুটি অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে একজন মহিলা ও একজন পুরুষ। নারী সম্পর্কিত ব্যাপার হওয়ায় আমরা তা প্রকাশ করছি না। সংশ্লিষ্টদের সাথে আমরা ইতিমধ্যে ওই মোর্শেদ আলী রায়হান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষদের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই একটি সুরাহা হবে।