৩ আসামী ছিনতাই

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

কাঠ চুরি বাঁধা দিতে গিয়ে হামলায় রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ ৭জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা ৩ জন কাঠ চোরকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এসময় আতœরক্ষার্থে গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। টেকনাফের উপকূলীয় বাহারছড়ার শীলখালী ঝাউ বাগানে ২৮ মে গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযানে গিয়ে হাতে-নাতে একজনকে আটক করে সাজা প্রদান করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০০৮ সালে সৃজিত টেকনাফের উপকূলীয় বাহারছড়ার শীলখালী ঝাউ বাগানে ২৮ মে গভীর রাতে স্থানীয় কাঠ চোরেরা ঝাউ বাগান উজাড়ের সংবাদ পেয়ে উপকুলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা লোকজন নিয়ে অভিযানে গিয়ে ৩ জন কাঠ চোরকে হাতেনাতে আটক করেন। ধৃত কাঠ চোরদের টেকনাফে আনার পথে ৭০-৮০ জনের সংঘবদ্ধ কাঠ চোর হামলা চালায়। এতে উপকুলীয় বন বিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ অফিসার শ্যামাপদ মিশ্র (৪৮), বিশেষ টহল বাহিনীর সহ-অধিনায়ক আহসানুল কবির (৩৮), উপকুলীয় বন বিভাগের শীলখালী ক্যাম্প ইনচার্জ মাহফুজুল আলম (৩০), ফরেস্ট গার্ড মোহাম্মদ ইউসুফ আলী (৫২), ফরেস্ট গার্ড নুরুজ্জামান (৩৬), ফরেস্ট গার্ড শীপন রেজা (৩৩), ফরেস্ট গার্ড নন্দ দুলাল রায় (২৭) আহত হন। আহতদের মধ্যে বিশেষ টহল বাহিনীর সহ-অধিনায়ক আহসানুল কবির ও ফরেস্ট গার্ড ইউসুফ আলীর অবস্থা গুরুতর। এসময় বিশেষ টহল বাহিনীর সহ-অধিনায়ক আহসানুল কবির আত্মরক্ষার্থে ৫ রাউন্ড ফাঁকাগুলি বর্ষণ করলে কাঠ চোরেরা ধৃত ৩ জনকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছিনিয়ে নেয়া ধৃত ৩ জন কাঠ চোর হলেন বাহারছড়া উত্তর শীলখালী গ্রামের আলী হোসেনের পুত্র মোঃ রহিমুল্লাহ (৩২), আবুল কাসেমের পুত্র মনসুর আলম (২২), আবুল কালামের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (৩০)।

এদিকে বিষয়টি ২৮ মে সকালে উপকুলীয় বন বিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ অফিসার শ্যামাপদ মিশ্র টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) অবহিত করলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করেন। দুপুর ২টার দিকে একদল যুবক উক্ত বাগানে মাদক সেবনের আড়ালে আবারও গাছ কর্তনের খবর পেয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশণার (ভূমি) প্রণয় চাকমা অভিযানে গিয়ে উক্ত বাগানের গাছ কর্তনকালে উত্তর শিলখালীর আবুল কাশেমের পুত্র আবুল হাশেমকে (৩০) হাতে-নাতে আটক করেন। তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে ৩ মাসের সাজা প্রদান করা হয়। এরপর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট উপকূলীয় বাগান পরিদর্শন করে উজাড় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট প্রণয় চাকমা উপকূলীয় বাগান রক্ষায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে একজনকে আটক করে সাজা প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

উপকুলীয় বন বিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ অফিসার শ্যামাপদ মিশ্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ২৮ মে গভীর রাতে জানান, আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সরকারী কাজে বাধা প্রদান, কাঠ চুরি ও হামলার অভিযোগে ২৮ মে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এতে বাহারছড়া উত্তর শীলখালী গ্রামের আলী হোসেনের পুত্র মোঃ রহিমুল্লাহ (৩২), আবুল কাসেমের পুত্র মনসুর আলম (২২), আবুল কালামের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (৩০), শেখ আহমদ শেকু (২৯), ওবাইদুল হাকিমের পুত্র গুরা মিয়াসহ (২৮) ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ১৮ মে ঝাউ বাগান নিধনের অভিযোগে উপকূলীয় বন বিভাগের লোকজন অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ শীলখালী চৌকিদারপাড়া মনির আহমদের পুত্র মমতাজুল ইসলাম (২৭) এবং ২৭ মে চৌকিদারপাড়ার ঝুমপাড়া মৃত শামসের আলীর পুত্র মামুনুর রশিদ (৩২) নামে ২জনকে হাতেনাতে আটকের পর বন মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। উল্লেখিত ৩টি ঘটনায় কাঠ চোরেরা উপকুলীয় বন বিভাগের প্রায় ৬ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হবে।