যারাই রক্ষক তারাই ভক্ষক হলে বন রক্ষা হবে কিভাবে?

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও : কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়িতে বনের কোল ঘেষে এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কটি করাতকল। এইসব অবৈধ করাত কলে বৈধ গাছ ছাড়াও প্রতিদিন বনের গাছ চিরাই করে গোপনে কাঠ পাচার করায় বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত বন দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন না করায় একদিকে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে বন অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। সেই সাথে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার পরিবেশ।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্চের আওতাধীন ফুলছড়ি, মেধাকচ্ছপিয়া, খুটাখালী ,নাপিতখালী, রাজঘাটসহ ৫টি বিটের ১১ টি মৌজায় বনভূমি ও সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এই বিশাল বন ভূমিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আকাশমণি, ইউকিলিপটাস, সেগুন সহ গর্জন বাগান। এই বনের আশ পাশে স্থাপন করা হয়েছে অর্ধডজন করাত কল। এইসব করাতকল ও অতিরিক্ত গাছ চুরির কারণে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান লোপাট হচ্ছে। সম্প্রতি এসব করাত কলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারনে তা ভেস্তে গেছে। অভিযোগ উঠেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, নেই ভূমি অফিসের প্রত্যয়ন পত্র, বনকর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি দিয়েই চলছে এসব করাত কল।

বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও বন কর্মকর্তাদের এককালিন মোটা অংকের সেলামী দিয়ে স’মিল মালিকরা এসব মিল স্থাপন করছে। দেখা গেছে রেঞ্চ অফিস ও বিট অফিসের নাকের ডগায় স’মিল মালিকরা করাতকল স্থাপন করে দিনরাত চোরাই কাঠ চিরাই করছে। সংশ্লিষ্ট রেঞ্চ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেষ্ট গার্ডদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় বছরের পর বছর জুড়ে এসব মিল চালু রয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এসব নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে কোন কর্তৃপক্ষ নেই। বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষার্থে উপজেলায় বন ও পরিবেশ কমিটি থাকলেও এ কমিটির কার্যক্রম চলছে শুধু কাগজে-কলমে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সংরক্ষিত বনের আশে-পাশে লাইসেন্স ছাড়া ঘুষ দিয়ে চলছে এসব করাতকল। যার ফলে যত্রতত্র করাত কল স্থাপন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত বন আজ হুমকির মুখে।

এসব অবৈধ করাত কলের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক স’মিল মালিক জানায়, করাতকল লাইসেন্স বিহীন চলছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বার বার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললে বিগত ক’বছর পূর্বে যে অভিযান হয় তা ছিল নাটকীয়।

এলাকাবাসীরা জানায়, বনের আশ-পাশের এসব করাতকলের মালিকরা কাঠ ব্যবসায়ী। কাঠ চোরদের সাথে মিল মালিকদের রয়েছে সখ্যতা। যারা সর্বদা গাছ চুরি করে তাদের মধ্যেও অনেকে সঙ্গবদ্ধ হয়ে করাতকল স্থাপন করে অবাধে বনের গাছ নিধন করে যাচ্ছে। তাদের কাছে অবৈধ করাত কল কিভাবে চলে জানতে চাইলে জানান, দশজনের মতো করে কর্তৃপক্ষের সাথে মিলে মিশেই চালাই।

অবৈধ করাত কলের বিষয়ে ফুলছড়ি এসিএফ বেলায়ত হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব করাত কল কিভাবে চলে আমি নিজেও জানিনা তবে করাতকল স্থাপনের সাথে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা কিংবা বিট অফিসারের কোন সম্পৃক্ততার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

করাতকল বন্ধ করার বিষয়ে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি চকরিয়া ইউএনও নুর উদ্দীন মু. শিবলী নোমান বলেন, উপজেলা মাসিক মিটিং এ অবৈধ করাতকল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যারাই রক্ষক তারাই ভক্ষক হলে বন রক্ষা হবে কিভাবে?