বার্তা পরিবেশক :

কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল ধূমকেতুর মতো। দরিদ্রতার মধ্যে তার শৈশব কেটেছে। দারিদ্র্যকে তিনি ভ্রƒকুটি হেনেছেন। অভাব-অনটনকে হাসিমুখে সহ্য করেছেন। সমাজের বাধা-নিষেধ, বিদেশি শাসকদের শাসনদ-, কারাবাসের নির্মম অত্যাচার কোনোটাই তাকে হতোদ্যম করতে পারেনি। তার বাল্যশিক্ষা শুরু হয় পিতার কাছে, তারপর মক্তবে। মাত্র আট বছর বয়সে পিতাকে হারান। দশ বছর বয়সে মক্তবের পাঠ শেষ করে তিনি ওই মক্তবেই এক বছর শিক্ষকতা করেন। আসানসোল শহরে এসে পাঁচ টাকা মাইনেতে এক রুটির দোকানে ময়দা মাখার কাজ শুরু করেন। রেলগার্ডের বাসায় বাবুর্চিগিরি, মসজিদে ইমামগিরি, মাজারে খাদেমগিরি এবং লেটোর দলে গান রচনা, সৈনিক হিসেবে বাঙালি পল্টনে যোগদান ইত্যাদি সবই করেছেন নিজের এবং পরিবারের সমস্যদের দু’মুঠো অন্ন জোগাতে।

মাত্র বার বছর বয়সে তিনি লোটোর দলে গান লিখে ও গান গেয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন। আর তখন থেকেই তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি সৈনিক হিসেবে ৪৯ বাঙালি পল্টনে (১৯১৭-১৯) দুবছরের জন্য করাচিতে সেনাজীবন কাটান, আর এ সময় তিনি সৈনিক জীবনের কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ব্যস্ততার মধ্যেও কাজের ফাঁকে কবিতা ও গান লিখা শুরু করেন। আর তখন থেকেই তার কবি প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। প্রখ্যাত চুরুলিয়ার দুখু মিয়া একদিন বাংলা সাহিত্যের অসামান্য প্রতিভার বিমূর্ত প্রতীক হবে সেটা কারো কল্পনায় ছিল না। কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, রোমান্টিক কবি, গানের কবি, সর্বোপারি যুগ সচেতন দ্রোহের কবি। প্রেম ও বিদ্রোহ পৃথক সত্তা, অথচ নজরুলের একই অঙ্গে দুটি রূপ দীপ্যমান। বিদ্রোহী কবিতায় তিনি লিখলেন- ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর এক হাতে রণ তূর্য।’ তিনি এক দিকে যেমন প্রেমিক অন্যদিকে তেমনই বিদ্রোহী। নজরুলের ২২টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আমরা তার মানস প্রতিমা বিশ্লেষণ করে দেখলে একদিকে রয়েছেÑ প্রমত্ত বিদ্রোহ ও পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তেমনি রয়েছে মানবতাবাদ, জাতীয়তাবোধ, সাম্যবাদ, রোমান্টিকতা।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর উদ্যোগে ১১ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৫ মে ২০১৮ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্ম-জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।

বক্তাগণ বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাল্যকাল ও কৈশোর সুখকর ছিল না। নজরুল কাব্যে প্রেম আছে, ব্যর্থ প্রেমের বিষাদাত্মক অনুভূতি আছে— আছে বিদ্রোহের সুর। তবুও তাঁর কবিতায় আসাম্প্রাদায়িক চেতনা, মানবিকবোধ এবং নির্যাতিত মানুষের কথা এসেছে বারবার। এসবের মূলে ছিল ব্যক্তি নজরুলের জীবনের বঞ্চনা, সংগ্রাম ও দারিদ্র। নজরুলের কবিতার মতো তাঁর সমকালের অন্য কোনো কবি কবিতায় এ-রকম আবেগি সুরে শ্রমজীবী মানুষের কথা কেউ বলেন নি।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর উদ্যোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম-জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম। কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন একাডেমীর অর্থ সচিব কবি মোহাম্মদ আমিরুদ্দীন।

পুরো অনুষ্ঠানটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা, কবিতাপাঠ, গান নিয়ে সাজানো ছিলো।

কবির জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা করেন, একাডেমীর স্থায়ী পরিষদের চেয়ারম্যান কবি সুলতান আহমদ, একাডেমীর সহ-সভাপতি কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ছড়াকার মো. নাসির উদ্দিন, এডভোকেট নুরুল হক, একাডেমীর নির্বাহী কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গল্পকার সোহেল ইকবাল, নির্বাহী ছড়াকার নুরুল আলম হেলালী, কবি আবুল কাসেম, গুলশান আরা বেগম বিউটি ও সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল।

কবিতা পাঠ করেন কবি সিরাজুল কবির বুলবুল। কবির কবিতা আবৃত্তি করেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়ন্তী ভট্টাচার্য ও রবিবা জান্নাত আতিকা।

পরে নুরুল আলম হেলালী ও সায়ন্তী ভট্টাচার্য সঙ্গীত পরিবেশ করে সভায় এক ভিন্ন মাত্রার যোগ করে।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১৭ তম সাহিত্য সভা ১লা জুন

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১৭তম সাহিত্য সভা আগামী ১লা জুন ২০১৮ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের হাসপাতাল সড়কের হলিচাইল্ড স্কুলে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সাহিত্য সভায় কক্সবাজারের আলোকিত মানুষ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের আগুনে দৈনিক সংবাদ অফিসে অঙ্গার হয়ে শহীদ হওয়া শহীদ সাবেরের জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা করা হবে। অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।