শাহেদ মিজান, সিবিএন:
ইয়াবা ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য নিয়ে কোন্দলের জের ধরে গুলিবিদ্ধ মরছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪মে) দু’গ্রুপের গোলাগুলিতে দু’জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একজন মহেশখালীতে। অন্যজন কক্সবাজার শহরের আদর্শগ্রামে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছে কক্সবাজার শহরের আলোচিত ইয়াবা ডন ছৈয়দ করিমের সহযোগি মোহাম্মদ হাসান (৩৫)। ইয়াবা ডন ছৈয়দ করিমের নেতৃত্বে তার শহরের উত্তরণ এলাকাস্থ কাটাপাহাড় আস্তানাতেই খুন হন তার সহযোগি মোহাম্মদ হাসান। বৃহস্পতিবার দিবাগত সাড়ে তিনটায় তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ। নিহত হাসান কলাতলী আদর্শগ্রাম এলাকার মৃত খুইল্যা মিয়ার পুত্র।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার জানান, ইয়াবা ব্যবসার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’গ্রুপের গোলাগুলি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় একদল পুলিশ। অভিযানের খবর টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. হাসানের লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে একটি দেশীয় বন্দুক ও দু’রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল, লারপাড়া কেন্দ্রিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান গড়ফাদার ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ছৈয়দ করিমের ‘ডানহাত’ ছিলো মোহাম্মদ হাসান। দীর্ঘদিন তারা সিন্ডিকেট করে কক্সবাজার শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করে আসছিল। মূলত হাসান ছিলো ইয়াবা পাচারের মূল কারিগর। এই ইয়াব ব্যবসার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ছৈয়দ করিমের সাথে হাসানের কোন্দল সৃষ্টি হয়। এই কোন্দলকে কেন্দ্র করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে তারা। গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় মোহাম্মদ হাসান। তার বুকে দুটি ও পিটে একটি গুলি লাগে।

তবে নিহত হাসানের বড় ভাই শহর মুল্লুক দাবী করেন, গত মঙ্গলবার সেহেরী খাওয়ার সময় বাড়ি থেকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক হাসানকে তুলে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে নিজের চিকিৎসা করতে গেলে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান তিনি। প্রতিপক্ষরা হাসানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবী করেন নিহতের স্ত্রী আমেনা খাতুন।

গোয়েন্দা সূত্র মতে, গড়ফাদার ছৈয়দ করিমে ‘ডানহাত’ হলেও ইয়াবা পাচার কেন্দ্রিক আরেকটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে নিহত মোহাম্মদ হাসানের। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে, কলাতলী আদর্শগ্রাম এলাকার রবিউল, মুহিবুল্লাহ, ইলিয়াছ, আতাউল্লাহ, মো. ফারুক, মো. সোহেল, হেলাল, রাসেল ও নাসির। এদের বিভিন্ন ইয়াবা গড়ফাদারের ইয়াবা বিভিন্ন স্থানে পাচার ও খুচরাভাবে বিক্রি করে মোহাম্মদ হাসান। এছাড়াও শ্যামলী পরিহন কেন্দ্রিক আরো একটি সিন্ডিকেট রয়েছে হাসানের। এই দু’সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসান ইয়াবা গড়ফাদার ছৈয়দ করিম, ডিককুলের ইদ্রিস, লারপাড়ার শাহজাহান, বাসটার্মিনালের কালাম ও কবির এবং নিজের বড়ভাই শহর মুল্লুকের ইয়াবা শ্যামলী পরিবহণে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। ঢাকা সায়দাবাদ বাস স্টেশনে ইয়াবাগুলো গ্রহণ করে হাসানের বোন ও ভগ্নিপতি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার বলেন, ইয়াবা ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে কোন্দলের জের ধরে প্রতিপক্ষের সাথে গোলাগুলিতে হাসান নিহত হয়। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামের ইয়াবা মামলা রয়েছে।

এদিকে মহেশখালীতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে মোস্তাক আহামদ (৩৭) নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) রাত ১০টার দিকে উপজেলার বড়মহেশখালী ইউনিয়নের দেবেঙ্গাপাড়া পাড়াতলী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত মোস্তাক আহামদ ওই ইউনিয়নের মুন্সিরড়েইল গ্রামের আনোয়ার পাশার ছেলে।

সত্যতা নিশ্চিত করে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’গ্রুপের গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী মোস্তাকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় চারটি দেশীয় তৈরি বন্দুক এবং সাত রাউন্ড গুলি ও ৩০ রাউন্ড গুলি খোসার উদ্ধার করা হয়েছে।

ওসি জানান, নিহত ইয়াবা ব্যবসায়ী মোস্তাকের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় তিনটি মামলা খুঁজে পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়ক থেকে উখিয়া টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বেয়াই (তালতো ভাই), টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আকতার কামালের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার পাওয়া গেছে। এই সময় ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা, বন্দুক ও গুলি উদ্ধার করা হয়। আখতার কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবার গডফাদার।

মেরিনড্রাইভ রোডের হিমছড়ি পুলিশ ফাড়ির আইসি পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভোরে মেরিনড্রাইভ রোডের দরিয়ানগর ২ নাম্বার ব্রিজ এলাকায়  গোলালাগুলির খবর পেয়ে তারা ঐ এলাকায় যান। এই সময় রাস্তার পাশে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড় থাকতে দেখেন। মরদেহের পাশথেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা , ১টি এলজি ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানিয়রা মৃতদেহ দেখে সেটি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আকতার কামালের বলে সনাক্ত করে। আকতার কামাল উখিয়া টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বড়বোন শামসুননাহারের দেবর। সে তালিকাভূক্ত ইয়াবার গডফাদার।

হিমছড়ি পুলিশ ফাড়ির আইসি পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম  প্রতিপক্ষের গুলিতে এই ব্যক্তি মারা গেছেন।