বিশ্বকাপে চোখ রাখুন এই ১০ জনে

অপেক্ষার প্রহর শেষ করে রাশিয়া বিশ্বকাপ এখন দরজায় কড়া নাড়ছে। বিশ্বকাপের উন্মাদনায় বুঁদ পুরো ফুটবল বিশ্ব। যদিও এখন ক্লাব ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল বাকি আছে। এই ম্যাচ শেষেই প্রত্যেকদল গুছিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে তাদের বিশ্বকাপ যাত্রার। প্রত্যেক দলেই কিছু মূল্যবান বা স্টার খেলোয়াড় থাকে। এবারের বিশ্বকাপেও এমন কিছু নামি-দামি খেলোয়াড় খেলবেন, মূলতঃ যাদের উপরই তাদের দলের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করবে।

এবারের বিশ্বকাপে এমন সেরা ১০ খেলোয়াড়কে নিয়ে আজকের এই আয়োজন…

Messi

অবধারিতভাবে এখানে নাম্বার ওয়ানে মেসিই থাকবনে। বিশ্বের সেরা অ্যাটাকিং লাইনআপসহ মোটামুটি একটা দল পেয়েও মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা যেন কল্পনা করা দায়। বিশ্বকাপের মূল পর্বে ওঠার লড়াইয়ে প্রায় বাদই পড়তে চলেছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার দেশ। শেষে ওই মেসিই দলের ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত। ডু-অর-ডাই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে দলকে পাইয়েছেন রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেই প্রমাণ হয়েছিল মেসি কি আর্জেন্টিনার জন্য। একাই দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনাল পর্যন্ত।

১৭-১৮ মৌসুমে দলীয় সাফল্যর সাথে সাথে ব্যক্তিগত সাফল্যও হাতে এসে ধরা দিয়েছে মেসিকে। দলীয়ভাবে জিতেছেন লা-লিগা আর কোপা দেল রে ট্রফি। জিতেছেন লা-লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পিচিচি ট্রফি ও ইউরোপের সর্বোচ্চ গোল দাতার পুরস্কার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু।

এবারও তাই হোর্হে সাম্পাওলির আর্জেন্টিনার দলের ত্রাতা-প্রাণ সবই ওই এক লিও মেসি। দীর্ঘ ৩২ বছরের বিশ্বকাপ না পাওয়ার আক্ষেপ মেটাতে এই মেসির কাঁধে ভর করেই রাশিয়া যাচ্ছে আর্জেন্টিনা বাহিনী। হবে নাকি দীর্ঘ ৩২ বছরের আক্ষেপের অবশেষ? নামটা যেহেতু সর্বকালের অন্যতম সেরা লিও মেসি! অসম্ভব কিছুই না! বিশ্বের কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের চোখ এখন ওই একজনের দিকেই, কেননা জাদুকরী মেসির এক জাদুই পারে ম্যাচের ফলাফল পরিবর্তন করে দিতে।

২. মোহামেদ সালাহ :

salah

এই মৌসুমে যেন এক আশ্চর্য হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন এই লিভারপুল উইঙ্গার। সাবেক এই রোমা খেলোয়াড় কাটাচ্ছেন খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা সময়। জাতীয় দলকে নিজ হাতে করে তুলেছেন এই রাশিয়া বিশ্বকাপে। হয়ে গেছেন মিশরের জাতীয় হিরো। খেলার ধরণ অনেকটা মেসির মত বিধায় অনেকে তাকে ‘দ্বিতীয় মেসি’ বলে ডাকছে। তবে সালাহ তো সালাহই! সালাহ একটাই!

এবারের লিগ মৌসুমে করেছেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৩২ গোল, সাথে ঝুলিতে আছে ১০টি গোল করানোর কীর্তি। কেভিন ডি ব্রুইনকে হারিয়ে জিতেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ১০ গোল আর ৪ অ্যাসিস্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্সলিগেও দুর্দান্ত মিশরের এই রাজা। সালাহের এই অতিমানবীয় খেলায় তাই এবার এক অন্যরকম স্বপ্ন বুনছে মিশরবাসি। এবারের বিশ্বকাপে তাই মিশরীয় রূপকথা ঘটলেও ঘটতে পারে!

৩. রোনালদো :

ronaldo

২০১৭-১৮ মৌসুমের শুরুটা যেন ভুলেই জেতে চাইবেন বর্তমানের ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এরকম বাজে মৌসুম শুরু এর আগে ক্যারিয়ারে কখনও হয়েছে কিনা হয়তো মনে করতে পারবেন না রোনালদো নিজেই। অনেকে তো পর্তুগিজ যুবরাজের শেষই দেখে ফেলেছিলেন। তবে ধীরে ধীরে রোনালদো খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। সেরা খেলা উপহার দিয়ে দলকে নিয়ে গেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। বাজেভাবে মৌসুম শুরু করলেও লিগ শেষ করেছেন ২৬ গোলের সাথে ৫ অ্যাসিস্ট নিয়ে। আর চ্যাম্পিয়ন্সলিগের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হয়ে ১২ ম্যাচে করেছেন ১৫ গোল আর ৩টি অ্যাসিস্ট!

বিশ্বকাপে এই রোনালদোকে পেয়ে হয়তো অনেকটা হাফ ছেড়েই বেঁচেছেন পর্তুগিজ বস ফার্নান্দো সান্তোস। কেননা দলের এক এবং একমাত্র সেরা খেলোয়াড় যে এই রোনালদোই!

৪. নেইমার :

neymer

ব্রাজিলিয়ান দলের প্রাণভ্রমরা। ছিলেন নিজেদের ঘরে ২০১৪ বিশ্বকাপের দলের প্রধান খেলোয়াড়। তবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ইনজুরিতে পরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পরেন ব্রাজিলের এই সেনসেশন। এরপরই বিশ্বকাপ থেকে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে হেরে বিদায়ের লজ্জা দেখেছেন মাঠের বাহিরে বসে। তবে এবারের বিশ্বকাপেও যে ত্রাস ছড়াতে যাচ্ছেন তার প্রমাণ তার এবারের লিগে পারফরম্যান্স। এই মৌসুমে ইনজুরিতে পড়ার আগে ১৯ ম্যাচে করেন ১৯ গোল সাথে ১৩টি গোল বানিয়ে দেওয়ার দারুণ এক কীর্তি। বিশ্বকাপে নিজের সেরাটাই দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়।

২০১৪ বিশ্বকাপের ন্যায় এবারও ব্রাজিলিয়ানদের হেক্সা জয়ের স্বপ্ন নেইমারের কাঁধেই থাকছে। দলে জেসুস, কৌতিনহো , ফিরমিনো, উইলিয়ানদের মত সেরা সেরা খেলোয়াড় থাকতেও ব্রাজিলিয়ানদের হেক্সা জয়ের মিশন তাকে কেন্দ্র করেই। কোচ তিতের ‘মেইন ম্যান’ তো তিনিই!

৫. রবার্তো ফিরমিনো :

firmino

ব্রাজিল কোচ তিতে এই বিশ্বকাপে পড়েছেন এক মধুর সমস্যায়। সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলাবেন কাকে? গ্যাব্রিয়েল জেসুস না ফিরমিনোকে!

দু’জনই নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে কাটিয়েছেন নিজেদের সেরা মৌসুম। অবশ্য এক দিক কিছুটা এগিয়েই থাকবে ফিরমিনো। গোল করার সাথে সাথে আছে গোল বানিয়ে দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা। প্রিমিয়ার লিগ কি ইউরোপিয়ান সেরাদের আসর চ্যাম্পিয়ন্সলিগ দু’জায়গাতেই করেছেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স। ইংলিশ লিগে করেছেন ১৫ গোল সাথে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৭ গোল আর চ্যাম্পিয়ন্সলিগে ১০ গোল করে করিয়েছেন আরও ৮টি।

বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হয়েই এবার রাশিয়াতে যাচ্ছে ফিরমিনো। এই তারকা যে কোনো সময়ে গোল করে খেলার ফলাফল পাল্টে দিলেও থাকবে না অবাক হওয়ার মত কিছুই!

৬. ইস্কো আলার্কন :

isco

নিঃসন্দেহে স্পেনের সেরা খেলোয়াড় হয়ে এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছেন ইস্কো। কি মাঝমাঠ কি আক্রমণ ভাগ! উভয়দিকেই সমান পারদর্শী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। দলে ইনিয়েস্তার মত জীবন্ত কিংবদন্তী থাকলেও মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে যাওয়ার দায়িত্ব থাকবে তার কাঁধেই। এবারের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে ইস্কোকে মাঠে ফ্রি রোলে খেলায় অর্থাৎ যে কোনো পজিশনেই খেলতে তিনি পারদর্শী। মৌসুমে করেছেন ৭ গোল করিয়েছেনও ৭টি।

লা ফুরিয়া রোজা’দের বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধার মিশনে তাই এবার অগ্রণী ভূমিকাই পালন করতে দেখা যাবে ইস্কো আলার্কনকে।

৭. কাইলিয়ান এমবাপ্পে :

ambappe

টানা দ্বিতীয়বারের মত ফ্রেঞ্চ লিগের মৌসুম সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের খেতাব নিজের ঘরে তুলেছেন। আগের মৌসুমে ১৮০ মিলিয়ন দিয়ে মোনাকো থেকে তাকে দলে ভেরায় ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডকে দলে নিয়ে যে মোটেও ভুল করেনি খেলাইফি, তার প্রমাণ এমবাপে দিয়েছেন মাঠেই। তালে তাল মিলিয়ে খেলে গেছেন নেইমার, কাভানি, ডি মারিয়াদের সাথে। জিতেছেন টানা দ্বিতীয়বারের মত সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

ফ্রান্স দলে আছেন পল পগবার মতো তারকা। তবে দলের আক্রমণ ভাগের বড় একটা দায়িত্ব এই তরুণের উপরই বর্তাচ্ছে।

৮. কেভিন ডি ব্রুইন :

de-bruyne

এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় নিঃসন্দেহে এই বেলজিয়ান। ছিলেন এবারের মৌসুমের সিটির মধ্যমনি হয়ে। লিগে ৩৮ ম্যাচের ৩৬ ম্যাচেই নেমেছেন মাঠে। করেছেন ৮ গোল আর সিটি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন রেকর্ড ১৬ গোল। প্রায় প্রতি ম্যাচেই তার জাদুকরী খেলায় পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে পেপ গার্দিওলা শিষ্যরা।

তাই এডিন হ্যাজার্ডের মত সেরা উইঙ্গার দলে থাকতেও বেলজিয়ান দলের সেরা খেলোয়াড় হয়েই এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছেন কেভিন!

৯. পল পগবা :

pogba

জুভেন্টাস থেকে বিশাল ট্রান্সফার ফি’তে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পর থেকে অবশ্য আগের মত আর স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছেনা পগবা। জুভেন্টাসের হয়ে মাঠে যে রকম ত্রাস ছড়িয়ে বেড়িয়েছেন ম্যানইউের হয়ে যেন ততটাই খোলসবন্দি ছিলেন এই মৌসুমে। যদিও ইনজুরি বড় একটা কারণ। কিছু ম্যাচে দারুণ খেললেও পারফরম্যান্সে ছিল না ধারাবাহিকতা। এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে করেছেন ৬ গোল করিয়েছেন ১০ খানা।

তবুও ফ্রান্স দলের কাণ্ডারি পগবাই। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভালো বা খারাপ করা বলতে গেলে পুরোটাই নির্ভর করছে পগবার সেরাটা দেওয়ার উপর।

১০. টনি ক্রুস :

kroos

জার্মানি ফুটবল দল আর লা-লিগা জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের কারিগর ধরা হয় তাকে। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মাঠে তার কোনো বিকল্প নেই। মাঝমাঠের ভারসাম্য আনতে পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এবারের লা-লিগাতে ৯৩.১% পাসিং একুরেসি নিয়ে প্রতি ম্যাচে গড়ে ৭৬.৭টি পাস দিয়েছেন এই জার্মান ফুটবল মেশিন। এছাড়াও প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.৪টি করে কি-পাস দেওয়ার সাথে সাথে আছে ৬.২ টি করে লম্বা পাস দেওয়ার কীর্তি।

মাঝ মাঠ থেকে রক্ষণচেরা পাস বা ৫০-৬০ গজ দূর থেকে বুলেট গতির শটে গোল করতেও দারুণ পটু ক্রুস। তাই এবারের জার্মান দলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছেন এই মিডফিল্ডার।