ডেস্ক নিউজ:
কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারসহ দেশের মোট ৬৮টি কারাগারে আটক মুসলমান বন্দীদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ সাহরি এবং ইফতার দেয়ার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এবার সরকারিভাবে সাধারণ একজন বন্দীর জন্য ইফতারে ২৭ টাকা ২০ পয়সা এবং প্রথম শ্রেণীর একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর জন্য ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

পুরনো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আটক আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে আদালতের আদেশে তাকে প্রথম শ্রেণীর বন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তাই ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে সরকারিভাবে তার জন্যও একই টাকা ইফতারের বরাদ্দ রয়েছে। তবে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর ক্ষেত্রে দৈনন্দিন খাবারের মেনুতে পরিবর্তন হবে কি-না সেটি বন্দীর চাহিদার ওপর নির্ধারণ হয়ে থাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কারা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, কারাগারে আটক বন্দীরা যাতে প্রতিবারের মতো এবারো সুন্দর ও সুস্থভাবে রোজা পালন করতে পারেন, সেজন্য আমরা আগেভাগেই কারাগারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। বন্দীদের কাছে যাতে যথাসময়ে সাহরি ও ইফতার সুষ্ঠুভাবে পরিবেশন করা যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের যতœবান হওয়ার পাশাপাশি সর্তকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কারা অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ বন্দীদের কাছে মোট সাতটি পদের ইফতার দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মুড়ি ০.৪০ গ্রাম, ছোলা .০৫০ গ্রাম, পিয়াজু .০৪০ গ্রাম, সবরি কলা একটি, জিলাপি .০৪০ গ্রাম, গুড় .০৩০ গ্রাম, খেজুর .০৩০ গ্রাম। গুড় দিয়ে শরবত তৈরি করা হবে। সব মিলিয়ে একজন বন্দীর জন্য মোট ২৭ টাকা ২০ পয়সা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ইফতারসামগ্রী তৈরি করতে তেল, পিয়াজ, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য পণ্যের টাকাও রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণ বন্দীদের যে পরিমাণ ইফতার দেয়া হবে তার চেয়ে সব আইটেমে পরিমাণে একটু করে বেশি বরাদ্দ দেয়া হবে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীদের। এ জন্য ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর ইফতারে প্রতিজনের জন্য ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ হওয়ার সরকারি আদেশ পেয়েছি। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর মধ্যে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক একমাত্র ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী বেগম খালেদা জিয়া। তার ইফতার ও সাহরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই সূত্রগুলো এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তারা শুধু এটুকুই বলছেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীদের খাবার একটু উন্নতমানের হয়ে থাকে। তবে ইফতার ও সাহরির মেনু প্রতিদিন কিন্তু একরকম হয় না। বন্দীর চাহিদা অনুয়ায়ী একই টাকার মধ্যে দেয়ার নিয়ম রয়েছে।

গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে এই কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মুসলমান বন্দী ৯ হাজার ৫০ জন, হিন্দু বন্দী ১৫৫ জন, খ্রিষ্টান বন্দী ১২, আর বৌদ্ধ ১০ জন। এর মধ্যে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর সংখ্যা আটজন।
গতকাল রাতে কারা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার শুধু রোজাদার বন্দীদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করে থাকেন। তবে বন্দীদের সকালে প্রতিদিন যে নাস্তা দেয়া হতো সেটির পরিবর্তেই সন্ধ্যার আগে ইফতার দেয়া হয়। আর দুপুরের খাবারের পরিবর্তে সাহরির খাবার দেয়া হবে। এবার যাতে বন্দীরা ভালো মানের ইফতার ও সাহরি খেতে পারেন সে ব্যাপারে সরবরাহের সময় ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সাধারণ বন্দীদের রাতের সাহরিতে ডাল, ভাত, সবজি, গোশত দেয়া হবে। তবে খালেদা জিয়াকে প্রথম রোজা রাখার জন্য সাহরিতে কী কী ধরনের মেনু দেযা হবে সে ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি উর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা।

পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার ইফতার ও সাহরি কারাগারের অভ্যন্তরে চৌকার মধ্যে প্রতিদিন তৈরি করা হবে। এরপর সেটি কারা ডাক্তার ও কারা কর্মকর্তারা পরীক্ষা করে দেখবেন। এরপরই সেটি তাকে সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে তিনি হাঁটুর সমস্যা ও অন্যান্য অসুস্থতার জন্য দোতলার ডে-কেয়ার সেন্টারে অবস্থান করছেন। তার দেখভালের জন্য তার নিজস্ব গৃহপরিচারিকা ফাতেমা ছাড়াও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুুটি জেলার শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে ১০ সদস্যর মহিলা কারারক্ষী সার্বক্ষণিক পালা করে ডিউটি করছেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি অনেক আগেই কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর হলেও ওই কারাগারের জেলার মাহাবুব আলম এবং সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির পালা করে ডিউটি করছেন। এ ছাড়াও ভেতরে বাইরে সার্বক্ষণিক অস্ত্রধারী কারারক্ষী ছাড়াও পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ডিউটি করছেন রাত দিন।