শাহেদ মিজান, কুতুপালং থেকে ফিরে:

উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী এবং টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আসন্ন বর্ষা মৌসুমের জরুরী খাদ্য মজুদ করা হচ্ছে। বর্ষায় অতিবৃষ্টি, ভূমিধ্বস, বন্যাসহ অন্যান্য দুর্যোগকালীন মুহূর্তে খাদ্য সংকট লাঘবের জন্য এসব খাদ্য মজুদ করা হচ্ছে। খাদ্য পণ্য ছাড়াও ওষুধসহ অন্যান্য জরুরী সামগ্রীও মজুদ করা হচ্ছে। উখিয়ার ফলিপাড়ায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) উদ্যোগে নির্মাণ করা গুদামে এসব সামগ্রী মজুদ করা হচ্ছে। উখিয়া কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে স্থায়ীভাবে থাকবে এই গোডাউন।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) দেয়া তথ্য মতে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বর্ষায় অতিবৃষ্টি, ভূমিধ্বস, বন্যাসহ অন্যান্য দুর্যোগকালীন মুহূর্তে খাদ্য সংকট লাঘবের জন্য খাদ্যপণ্য মুজদ করার জন্য উখিয়ার রাজাপালংয়ের ফলিয়াপাড়ায় স্থাপিত করা হচ্ছে বিশাল গোডাউন। এই গোডাউনের জন্য ৯.৯ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। গত এক মাস ধরে এই গোডাউনের নির্মাণ কাজ চলছে। সমন্বিত গোডাউনে ৪০টি গুদাম নির্মাণ হবে সেখানে। তবে প্রথম পর্যায়ে চলতি সময়ে ১৬টি গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৬টি গুদাম প্রস্তুত হওয়ার পথে। এই ১৬ গুদামে ৯ লাখ রোহিঙ্গার জন্য এক মাসের খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী মজুদ রাখা যাবে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) কার্গো ট্রেকিং কর্মকর্তা প্রিয়া প্রধান জানান, বর্ষা ঘনিয়ে আসায় দুর্যোগকালীন সহায়তার জন্য খাদ্য মজুদের উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি)। এই জন্য গোডাউন নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে। পুরো গোডাউনের প্রকল্পে ছক অনুসারে অনুমোদিত ৪০টি গুদামের মধ্যে প্রাথমিক ১৬টি নির্মাণ করা হচ্ছে। গত এক মাসের সময় ধরে স্থানীয় স্থানীয় প্রায় অর্ধশত দক্ষ নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছে। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে গুদামে খাদ্যপণ্য ও অন্যান সামগ্রী তোলা হবে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বর্ষায় অতিবৃষ্টি, ভূমিধ্বস, বন্যাসহ অন্যান্য দুর্যোগকালীন মুহূর্তে খাদ্য ক্যাম্পে খাদ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই আগেভাগেই খাদ্য ও জরুরী সামগ্রী মজুদের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি)। বিভিন্ন দাতা সংস্থার জাতিসংঘভুক্ত সংস্থাসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে দেয়া খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য সামগ্রী মজুদ করা হবে। তৈরি করা ১৬টি গুদামে নয় লাখ রোহিঙ্গার জন্য এক মাসের খাদ্য মজুদ রাখা হবে। যা প্রতি ১৫ দিনে দু’বার করে সরবরাহ করা যাবে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) কর্মকর্তা শিরীণ আকতার বলেন, ‘কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অনেক উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। কিন্তু তা বর্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই মজুদ করা খাদ্যপণ্য সরবরাহের জন্য প্রয়োজনী সড়ক ও কালভার্ট, ড্রেনেজ, গাইডওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজগুলো দ্রত করা হচ্ছে। আশা করি বর্ষার আগেই তা শেষ হবে।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, খাদ্য মজুদের জন্য নির্মাণ করা গোডাউনের গুদামগুলোর নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণ কাজ করছে। শ্রমিকেরা জোরেসোরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়া কয়েকটি গুদামে পণ্যসামগ্রী তোলা হয়েছে। গোডাউনের সাথে ক্যাম্পের সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে ইট বিছানো, গাইওয়াল, কালভার্টের নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টারসেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ’র (আইএসসিজি) কমিউনিকেশন অফিসার নায়না বোস জানান, বর্ষা মৌসুমে দুর্যোগকালীনসহ অন্যান্য জরুরী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্যপণ্য ও ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রী মজুদ অত্যন্ত জরুরী। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। কারণ এখন একটাই চ্যালেঞ্জ আগামী বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সার্বিক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বর্ষায় দুর্যোগকালীন সময়সহ অন্যান্য সময়েও খাদ্য সংকট সৃষ্টি আশঙ্কায় পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন দাতার সংস্থা পক্ষ থেকে দেয়া খাদ্যপণ্য নতুন স্থাপিত গোডাউনে মজুদ করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পর ৯লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। পুরাতন আছে ৩ লাখের বেশি। সব মিলে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালী এবং টেকনাফে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। নতুন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আসার পর থেকে খাদ্য ও বাসস্থানসহ সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে সরকার, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো।