বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার রেডক্রিসেন্টর তিন কর্মকর্তার ‘অপকর্ম’ নিয়ে লিফলেট বিলির ঘটনায় রেডক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরে তোলপাড় চলছে। এই বিষয়টি যাছাই করার জন্য কেন্দ্র থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই তদন্ত কমিটি কক্সবাজারে তদন্তে আসবেন। কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে ওই তিন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে অনেক জেরার মুখে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে সংবাদ মাধ্যমকে ‘গালি-গালাজ’ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে লিফলেট প্রকাশ হওয়ার পরে ‘নাজমুল-একরাম-সেলিম’ সিন্ডিকেটের আরো অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসছে।

প্রকাশ হওয়া লিফলেট মতে, এই ‘নাজমুল-একরাম-সেলিম’ সিন্ডিকেট কক্সবাজার রেডক্রিসেন্টকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা নিয়োগ বাণিজ্য, ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি, ত্রাণের টাকা আত্মসাৎ, চাকুরির প্রলোভন দিয়ে নারীদের ‘ভোগের সামগ্রী’তে পরিণত করেছে। এসব অপকর্ম এখন তাদের নিত্তনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর্থিক সুবিধা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ত্রাণ রেডক্রিসেন্টের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণ করে দিয়েছে নাজমুল আজম খান, একরাম এলাহী ও সেলিম আহামদ। প্রশিক্ষিত স্থানীয় যুুব রেডক্রিসেন্টর সদস্যদের বাদ দিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছে তারা। কিছু যুব সদস্যদের দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দিলেও নিয়মিত তাদের সম্মানী দেয়নি। এমনকি যুব সদস্যদের খাবারের টাকা পর্যন্ত আটকে রেখেছে। পালংগার্ডেনে রাখা রেড ক্রিসেন্টের কোটি টাকা মালামাল আত্মসাৎ করেছে এই সিন্ডিকেট। অতীতে অনিয়ম-দুর্নীতির অপরাধে নাজমুল আজম খান ও একরাম এলাহীর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা তদন্তাদীন রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য সম্প্রতি ৫৬ জন ডিস্ট্রিউশন সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানে ৩৮ জনই সেলিম আহমেদের এলাকা বরিশালের লোক। আবার ৩৮ জনের মধ্যে ১৫ জন সরাসরি তাঁর পারিবারিক আত্মীয়। এর মধ্যে রয়েছে ভাগিনা, ভাতিজা, সম্পর্কীয় ভাই ও ভগ্নিপতি। আত্মীয় ছাড়া অন্যান্যদের নিয়োগ দিতে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে নিয়েছেন সেলিম আহমেদসহ অন্যরা।

অভিযোগ উঠেছে, সেলিমের যে ১৫ জন আত্মীয়কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা ক্যাম্পে ঠিকমতো কাজ করছে না। তারা সেলিম আহমদের প্রভাব কাটিয়ে নিজেদের মতো চলাফেরা করছে। অন্যরা বললে উল্টো তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। এর মধ্যে সেলিমের বোনের জামাই ও ভাগিনা বেশি ক্ষমতার প্রভাব কাটাচ্ছে। তারা ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে অন্যান্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার নানাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। ত্রাণ লুটপাটেও জড়িত এসব সেলিশ আহমেদের এসব আত্মীয়রা।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, লিফলেট ও সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় অভিযোগ তুলে ‘নাজমুল-একরাম-সেলিম মিথ্যা অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কক্সবাজার ইউনিটের প্রতি। তারা কক্সবাজার জেলা কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে কমিটি ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে। মূলত লিফলেটসহ অন্যান্যভাবে নাজমুল, একরাম ও সেলিমের অনিয়মের থলের বিড়াল বেরিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে গেছে। তাই এখন জেলা ইউনিট নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

তবে অভিযোগের যোগাযোগ করা হলে সেলিম আহামেদ বলেন, একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই লিফলেট বিতরণ করছে। এটার কোনো ভিত্তি নেই। একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই চক্রান্ত করছে।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, অনিয়মের বিষয়টি অবহিত হয়ে কেন্দ্র থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছি তদন্তের ফলাফল কি হয় দেখার জন্য।