রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় কাটার মহোৎসব চালাচ্ছে ৯ এনজিও

কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া:
কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রকাশ্য দিবালোকে পরিবেশ বিধংসী পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। পাহাড় ধ্বংসের জন্য ব্যবহার হচ্ছে অর্ধশতাধিক বুলডোজার। শত ফুট উচ্চতার প্রায় শতাধিক পাহাড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক তান্ডব চালাচ্ছে। দিনরাত পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করলেও দেখার বা বলার কেউ নেই।
বনভূমির সংরক্ষণে দায়িত্বরত বন কর্তা ব্যক্তিরা সরকারি দায়িত্ব পালনের বাধ্য বাধকতা থাকলেও পাহাড় নিধন ঠেকানোর বেলায় এসব সরকারি বনকর্মীদের দেখা মেলেনি। এক কালের ভয়াবহ গহীণ অরণ্য থাইংখালীর লন্ডাখালী, মধূরছড়া, লম্বাশিয়া এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কর্তনের দৃশ্য অভাক হওয়ার মত।
পরিবেশবিদদের মতে, এ পাহাড় নিধন বন্ধ না হলে ভুমি ধ্বসের মত মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংখা রয়েছে।
উখিয়ার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিন পালংখালী ইউনিয়নের গভীর অরণ্য তাজনিমার খোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অদূরে লন্ডাখালী, ময়নারঘোনা ঘুরে জানান, তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করছে।
তারা জানান, আইওএম, রেডক্রিসেন্ট, কারিতাস, অক্সফার্ম, ওয়াল্ড ভিশন,এমএসএফ, এসিএফ,
ডাব্লিউএফপি, ইউএনএইচসিআরসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী এনজিও সংস্থার বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্যে এসব পাহাড় গুলো কেটে ন্যাড়া করা হচ্ছে। উপজেলা সদর রাজাপালং ইউনিয়নের বন্যপশু প্রাণির অভয়ারন্য মধুরছড়া, লম্বাশিয়া এলাকায় অর্ধশত বুলডোজার দিয়ে পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করা হচ্ছে, আর অর্ধশত ডাম্পার গাড়ীতে করে মাটিগুলো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সরজমিন পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল ঘুরে সেখানে মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত রোহিঙ্গা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দৈনিক ৪শত টাকা মজুরীতে পাহাড় কাটছে।
এসময় সেখানে উপস্থিত এনজিও সংস্থা আইওএম এর সুপারভাইজার মোঃ শরীফ জানান, প্রতিদিন ৩হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছে। পাহাড় কাটার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই সুপারভাইজার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলে সেখান থেকে সরে পড়েন।
পরে মাটি কাটার শ্রমিকদের হেড মাঝি শরিফ জানান, এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক পাহাড় কাটার জন্য গত ১ মাস আগে থেকে কাজ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০-৩৫টি পাহাড় কাটার কাজ শেষ হয়েছে।
ঘটনাস্থল লন্ডাখালী থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সড়কপথে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে রাজাপালং ইউনিয়নের মধুরছড়া ও লম্বাশিয়া এলাকার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশত বুলডোজার পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করছে।
সেখানে স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওরা কারো বিধিনিষেধ মানছেনা। তাদের ইচ্ছামতো বনভূমির পাহাড় দখলও নির্বিচারে কর্তন করছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দিপু জানান, এনজিওরা যেভাবে পাহাড় কেটে মরুতে পরিনত করছে তাতে মনে হয় বনভূমি সংরক্ষণের কেউ এখানে নেই। তিনি জানান, যেভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে এতে এনজিওদের স্বার্থ সিদ্ধি হলেও এলাকার মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিনতির দিন ঘনিয়ে আসছে। এসময় কেউ পার পাবেনা। তাই এসব এনজিদের অপকর্ম ঠেকাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম জানান, ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে সরকার আরো ৫৪০ একর বনভূমি-পাহাড় বরাদ্দ দিয়েছে। তাই ওসব এলাকায় বর্ষার আগেই ঝুকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে এনজিওরা কাজ করছে। তবে ঢালাও ভাবে পাহাড় বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করেন।