নুরুল ইসলাম হেলালী:
১১ মে ২০১৮। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের চতুর্থ মুক্তি দিবস। তিন বছর আগে গুম হওয়ার ৬২ দিন পর এই দিনে ভারতের শিলং রাজ্যে তাঁকে পাওয়া যায়। সেই থেকে সালাহউদ্দিন আহমদ সেখানেই (শিলং) নির্বাসন জীবণযাপন করছেন। ২০১৫ সালের ১১ মে আজকের এই দিনে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে একটি গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।

সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই দিন ভোরে একটি মাইক্রোবাস গাড়ী থেকে, সাদা পোশাকধারী একদল লোক শিলং শহরের গলফ লিংক মাঠের পাশে রাস্তার উপর তাঁকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ চোখের কাপড় খুলে সামনে হেটে লোকালয়ে গিয়ে একটি দোকানের সামনে পাকা বাংকুতে বসে পড়ে। ওই অবস্থায় মর্নিং ওয়ার্ক করতে আসা কিছু লোকের কাছ থেকে তিনি জানতে চায়, এটি কোন জায়গা?

উত্তরে তারা জানায়, এটি ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহর। ওই সময় তিনি তাদের কাছ থেকে আরো জানতে চায়. পুলিশ স্টেশন কোথায় ? পথিকরা জানায়, কাছেই পুলিশ স্টেশন। তখন তিনি পথিকদের কাছে অনুরোধ করে নিকটস্থ পুলিশের কাছে তার খবরটি পৌঁছে দেয়ার জন্য। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ এসে তাঁকে শিলং সদর থানায় নিয়ে গিয়ে, জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তার শিলং পৌঁছার বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদকে পুলিশ হেফাজতে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়ে ‘মিমহানস হাসপাতালে’ ভর্তি করা হয়।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং এ অবস্থান করছেন আজ দীর্ঘ তিন বছর। তিনি বর্তমানে শিলংএ অবস্থানকালে শারিরীকভাবে ভাল আছেন। যদিও চিকিৎসার জন্য দিল্লীতে আসা যাওয়া করেছেন বেশ কয়েকবার। ভারতীয় একটি পাসপোর্ট এ্যাক্ট আইন মামলায় জড়িত হয়ে দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ তিনি ভারতের শিলং এ অবস্থান করছেন এবং তিনি সেখানে জামিনে মুক্ত ও খোলা অবস্থায় জীবণ যাপন করছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সুত্রে জানা যায়, তিনি দেশে আসার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে মামলার রায় হলে তিনি খালাস পাবেন।

সূত্র আরো জানায়, তিনি বাংলাদেশে আটক পরবর্তী ঘটনার পর এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কাটিং, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও আন্তর্জাতির সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রমানাদি ভারতের বিচারাধীন আদালতে উপস্থাপন করেছেন। উক্ত উপস্থাপিত প্রমানাদি দেখে বিজ্ঞ বিচারক উক্ত মামলা থেকে খালাস দিবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। তিনি নামাজ দোয়া, কোরআন হাদিস, পত্র-পত্রিকা ও বই পড়ে মেঘালয়ের শিলং এ নির্বাসিত জীবণ কাটাচ্ছেন। সূত্র মতে, বিগত ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে একদল সাদা পোশাকধারী লোক, আইনশৃংখলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদকে আটক করে। ওই সময় তারা তাঁকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়ীতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে দীর্ঘ ৬২ দিন একটি অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার পর, পরবর্তীকালে ওই ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহরে একটি গাড়ী থেকে নামিয়ে রেখে গিয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়। ওই দিন কাকডাকা ভোরে শিলং শহরের গলফ লিংক মাঠের পাশে সড়কের উপর একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ীটি দ্রুত চলে যায়। এ সময় তিনি ওই এলাকার স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে সংবাদ পৌঁছালে পরে পুলিশ এসে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদকে চিকিৎসার জন্য শিলং এ অবস্থিত প্রথমে মিমহানস হাসপাতালে ভর্তি করে, পরে ২ দিন পর আবার স্থানীয় সরকারী সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী ১৫ দিন পর আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে স্থানীয় সরকারী নেগ্রিমস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। প্রায় এক মাস তিনি নেগ্রিমস হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে শিলং পুুলিশ স্থানীয় আদালতে মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে একটি মামলা দায়ের করে, উক্ত মামলায় তিনি নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন এবং তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। মেঘালয়ের একজন সিনিয়র আইনজীবী এসপি মোহন্ত এ মামলা পরিচালনা করছেন। বিগত ১৫ সালের ১১ মার্চ ভারতের শিলং এ মুক্ত হওয়ার পর আজ দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ ভারতে অবস্থান করছেন।

ভারতে অবস্থানকালে সালাহউদ্দিন আহমদের কিডনী, ঘাড় ও চর্ম রোগ এর সমস্যা দেখা দিলে তিনি একাধিকবার দিল্লী গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রথমবার দিল্লী গিয়ে ঘাড়ে অস্ত্রোপাচার করেন, দ্বিতীয়বার গিয়ে কিডনীতে অস্ত্রোপাচার করেন তিনি এখন আপাতত সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন। দিল্লীর হরিয়ানা রাজ্যের মেদান্ত হাসপাতালে তিনি উক্ত চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই রোগের চিকিৎসা নেওয়ার পর, তিনি এখন সুস্থ থাকলেও ঠান্ডাজনিত কারণে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন কারণ শিলং এ প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ শিলং এ একটি গেস্ট হাউজে অবস্থান করে থাকেন। শিলং মেঘালয়ের রাজধানী, শিলং এর কেন্দ্রস্থল পুলিশ বাজার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দুরে লাবান এলাকায় ওই গেস্ট হাউজ অবস্থিত। উক্ত গেস্ট হাউজটি দেখতে খুবই সুন্দর। এটি নির্মাণে যথেষ্ট নৈপুণ্যতা রয়েছে, উক্ত গেস্ট হাউজে সাতটি রুম রয়েছে। এর মধ্যে একটি রুমেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবস্থান করেন। সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমদ ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে বছরে দু’একবার দেখা করার জন্য শিলং এ যান। এছাড়াও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্খীরা সালাহউদ্দিন আহমদের সাথে দেখা করার জন্য ভারতের শিলং এ গিয়ে থাকেন।

অপর একটি সুত্র জানায়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে স্বল্প পরিসরে হলেও নিজ জেলা কক্সবাজার ও জাতীয় রাজনীতির খোঁজ খবর রাখেন।