ডেস্ক নিউজ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। গত সাত দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৯৫০ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে নিয়মিত মামলা ও বাকিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দু’টি পৃথক অভিযানের মাধ্যমে ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ও সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ বন্ধের পরিবর্তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদকবিরোধী এই অভিযান কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে- এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান শুরু করেছি। স্টেপ বাই স্টেপ এই অভিযান চলবে। মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রি করছে যারা, এখন তাদের ধরা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে মাদক ব্যবসায়ী এবং যেসব এলাকা দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ করছে সেসব এলাকায় অভিযান জোরদার করা হবে।’

জানা যায়, ৩ মে ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব যেভাবে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, এখন মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে মাদকের ছোবল থেকে দূরে থাকতে পারে, ব্যাপকভাবে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

র‌্যাব সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাত দিনে র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ান প্রায় একশ’ মাদকবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। আর প্রায় ৮শ’ মাদকসেবীকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থ দণ্ডও করা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে ক্ষুদেবার্তায় জানানো হয়, গত ৩ মে টেকনাফ এলাকা থেকে ৪৯ হাজার ৯০০ ইয়াবা উদ্ধার ও এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭। ৪ মে রংপুর ও দিনাজপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৫ মে টঙ্গি থেকে ১১ হাজার ২৫০ পিস ইয়াবাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৬ মে রাজশাহীতে র‌্যাব-৫ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত গুরিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৪৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে এবং র‌্যাব-১৩ রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারীতে ৪৩ জনকে কারাদণ্ড দেয়। ৭ মে গাজীপুরে ৪৮ জনকে দুই মাস করে কারাদণ্ড এবং সারাদেশে ১৫৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত ৮ মে বিভিন্ন এলাকায় কারাদণ্ড দেওয়া হয় ৬৪ জনকে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্র বলছে, সারাদেশে এখন ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইয়াবা সেবন করে। অন্যান্য মাদকের চাইতে দেশে ইয়াবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মাদক হিসেবে ইয়াবার পরের অবস্থান ফেন্সিডিলের। মাঝখানে ফেন্সিডিলের চাহিদা কমে গেলেও নতুন করে আবারও ফেন্সিডিলের ব্যবহার বেড়েছে। ইয়াবা এবং ফেন্সিডিল, এই দু’টি মাদকই দেশে আসে পাশ্ববর্তী দুই দেশ- মিয়ানমার ও ভারত থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. জিয়া রহমান বলছেন, ‘শুধু সারফেস লেভেলে অভিযান করে মাদক বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব না। আমাদের স্ট্রাকচারটা বুঝে মূল জায়গায় আঘাত করতে হবে। যেসব এলাকা দিয়ে মাদক প্রবেশ করে সেসব জায়গাগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী যারা, তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সমাজের পাওয়ারফুল লোকেরা মাদক ব্যবসা করছে। তাদের সঙ্গে খোদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও লিঙ্ক আছে দেখা যায়। এদের ধরতে হবে। যদিও সারা পৃথিবীতে ড্রাগ ডিলাররা শক্তিশালী। এজন্য তাদের ধরতে হলে কঠোর আইন করে, সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। সার্বিকভাবে দীর্ঘ মেয়াদি বা স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। এডহক ভিত্তিতে অভিযান করে শুধু মাদকসেবীদের ধরলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়।’

অপরাধ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, ‘দেশের সব মাদকসেবীদের যদি আমরা ধরে ধরে জেলে ঢুকাই তাহলে তো জেলেও জায়গা হবে না। তাদের কাছে সরবরাহটা বন্ধ করতে হবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসার একমাত্র রুট হলো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। আর ভারত থেকে ফেন্সিডিল প্রবেশ করে দিনাজপুরের হিলি, যশোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, ফেনি, কুমিল্লা ও বি.বাড়িয়ার সীমান্ত দিয়ে। এসব এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করতে পারলে দেশে মাদক ঢোকা অনেকটা কমে যাবে। মাদকের সরবরাহ কমে গেলেও মাদক সেবনও কমে যাবে অনেকাংশে।