(প্রবীণ রাজনীতিবিদ সিরাজুল হক বিএ স্মরণে)

মো: আকতার হোছাইন কুতুবী ॥
আমার রাজনৈতিক পিতা হিসেবে আমি যাঁকে স্বপ্নে -চেতনায় অঙ্কিত করে রাখি তিনি হলেন বি.এ সিরাজ। দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীদের কাছে এই নামটি খুবই পরিচিত এবং প্রিয় একটি নাম। আমার সেই পিতৃতুল্য রাজনৈতিক গুরুর সাথে দেখা হয় না অনেক দিন। জীবনযুদ্ধে নিজেকে জয়ী করার জন্য ঢাকাতে অবস্থান করাতে অনেকখানি দূরত্ব ছিল। তবে মনের মিলটা এত বেশি গভীর থেকে ছিল লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। আজ থেকে ২৫ বছর আগে সেই আমি ছোট্ট কুতুবীর সাথে কুতুবদিয়াতে এক রাজনৈতিক জনসভায় পরিচিত হই। অল্পক্ষনে চম্বুকের মতো আমাকে আকর্ষিত করে। তার ভালোবাসা, ¯েœহ, মায়া-মমতায় আমাকে জয়ী করে ফেলে। আমি তার মতো একজন বিশাল মাপের নেতার এত উদারতা ও নিরহংকার অবলোকন করতে পেরে আমি তাকে, তার কথাকে, তাঁর বক্তব্যকে শ্রবণ করতে শুরু করেছি। দিন দিন হয়ে গেলাম তাঁর প্রতি আকর্ষিত। তিনি অনেক বড়মাপের একজন মানুষ। ¯্রষ্টা একজন মানুষকে এত বিশাল মন নিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন সেটা শ্রদ্ধেয় বি.এ সিরাজের সাথে একটুখানি মিশলেই বুঝা যেত। চাচা আজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আর কখনো বি.এ সিরাজ ফিরে আসবে আসবেনা, রাজনৈতিক ও সামাজিক গঠনমূলক বক্তব্য রাখতে আসবে না। আমাদের মতো রাজনৈতিক এতিমদের অভিভাবক হিসেবে দিকনির্দেশনামূলক মায়া-মমতা দিয়ে শাসন করবে না। তিনি হয়ে গেলেন ওই আকাশের তারা! তাই তো তিনি আর আসবেন না। চাচার এই লেখার একটু আগেই হঠাৎ যখন জনপ্রিয় অনলাইন সিবিএন-এ আপনার চলে যাওয়ার সংবাদটি চোখে পড়ে তখন আমার বুকফাটা আর্তনাদে দু’চোখ বেয়ে অজস্র পানিতে দেহের অনেকাংশ ভিজে গেলো টেরই পেলাম না! মৃত্যু অনিবার্য তবু মরতে চায় না। অন্য দশজনের মতো আমার মধ্যেও কেন জানি মৃত্যুচিন্তা এসে ভর করেছে। মৃত্যু মানুষের জীবনে অমোঘ এক নিয়তি। তাই মৃত্যুর সাথে আমাদের অহর্নিশ উঠা-বসা চলাফেরা। জন্মিলেই মৃত্যু হবে জেনেও মানুষ নিজকে কতনা ঊর্র্ধ্বে মনে করে। মৃত্যুর এমনই এক ক্ষমতা, যার ওপর জারি হয়ে যায় ফরমান, তাকে বাঁচাতে পারে এমন শক্তি সৃষ্টিকর্তা মানুষের হাতে রাখেননি। তারপরও জীবন ও মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টিকর্তার সাথে নিরন্তর লড়াই চলছে। তবে এটাই চিরন্তন সত্য যে, জন্ম থেকেই জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে চলে এক অসম প্রতিযোগিতা। শুধু মানুষ কেন কোনো প্রাণীই তাকে কোনোদিনই অতিক্রম করতে পারেনি, কোনোদিন পারবেও না। কাউকে জীবন দান করা ও কারো জীবন কেড়ে নেয়ার একছত্র অধিকার একমাত্র ওপরওয়ালার।
একদিন মৃত্যু আসবেই কিন্তু আমাদের জানা নেই মৃত্যুর স্বরূপ কেমন; জানি না তার অবয়ব আকৃতি কেমন। মৃত্যুই আমাদের ভালবাসারজনকে কেড়ে নেয় তখন সে হয়ে যায় নিরুপায়। মৃত্যু যে কী পরিমাণে পক্ষপাতদুষ্ট, প্রতিকুল এবং কঠোর বোধগম্য হয় যখন সে আমাদের পরিবর্তে আমাদের ভালবাসার মানুষকে নিয়ে যায়। মেহিকোর কবি হাবিয়ের বিইয়াররুতিয়া বলেছেন “মৃত্যুর প্রতি স্মৃতিকাতরতা নিয়ে তার জন্য অপেক্ষমান।” আমাদের জীবনকে আমরা নিরুপণ এবং তৈরী করতে সক্ষম কিন্তু এও জানি শেষমেশ মৃত্যুই হলো সার কথা।
তারপরও মানুষের জীবনের এমন একটা সময় আসে যখন তাকে মৃত্যু নিয়েও ভাবতে হয়। ভাবতে হয় পবিত্র কোরআনের বাণী ‘প্রত্যেক নর-নারীকেই মৃত্যুর কঠিন স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।’ একথা চিরন্তন সত্য জেনেও মানুষ বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রামে নিয়োজিত। বেঁচে থাকার মানুষের এই যে অনন্ত তৃষ্ণা এ তৃষ্ণা মেটাতে চায় সে তার নিজের সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে। সে দেখে যেতে চায়, যে জিন সে তার সন্তান-সন্ততির ও বংশধরদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছ তার ফলাফল কতটুকু সফল। এর ফলাফল যদি ইতিবাচক হয় তা হলে এতে সে যে প্রশান্তি লাভ করে সে প্রশান্তি তাকে আরো বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়।
ওয়াদারিং হাইটস্-এর ওপর লেখা এক প্রবন্ধে জর্জ বাতাইয়ে বলেছেন, মৃত্যু হলো ছদ্মবেশের মোড়কে একটি মৌল। ভালবাসার মূল সময়ে যখন ফেরা সম্ভব নয়, প্রেমিক-প্রেমিকার তীব্র অনুরাগ চূড়ান্তভাবে উপভোগ করার স্থান ও কাল হলো চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয় মৃত্যুপারের সময়। মৃত্যু হলো সীমাহীন সময়। কেন? কারণ আদি অর্থে মৃত্যুই হলো সকল লাভ-ক্ষতির হিসাবের ঊর্ধ্বে। মৃত কোনও ব্যক্তিই বলতে পারবে না, “এটাই আমার জন্য ঠিক”, কিংবা “এটা আমার জন্য ঠিক নয়,” “আমিই জয়ী” কিংবা “আমি পরাজিত”, “আমিই সবাইকে ছাড়িয়ে”, কিংবা “আমি শেষ।”
আমাদের চারপাশে এত যে, আতান্তর ভারবাহী জীবনের কঠিন বোঝা। অচেনা সব দুঃখ এর মাঝে প্রত্যেক মানুষকেই বেঁচে থাকার নিয়মেই বাঁচতে হয়। খোলা আকাশ, রেলস্টেশন, রাস্তার ফুটপাতে না খেয়ে উপোস করে দিন কাটায় তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, মরতে চায়না কখনো। তাই হয়তো জীবনের মতো মধুর কিছু নেই। কেন বাঁচতে চায়, কার জন্যে বাঁচতে চায়, কি উদ্দেশ্যে বাঁচতে চায় এসব প্রশ্ন মানুষের কাছে মূল্যহীন। সব কিছুই চুলায় যাক; শুধু একটি কথা, বেঁচে থাকার মধ্যেই পরম সুখ আমার প্রিয় ব্যাক্তিত্ব, আদর্শ, গুরু ছিলেন, বিএ সিরাজ। তাকে ধারন করার মত শব্দ আমার ভান্ডারে নেই। তবু শুধু এটুকুই বলতে চাই, উনার মৃত্যু’র সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি মানুষের ভালবাসা দেখে আমার দুঃখ সব উধাও হয়ে গেছে। এমন একটি জীবনাবসানে দুঃখ করার কিছুই নেই। মানুষ তো নয়ই, এমনকি, সকল প্রাণীর মাঝেও সার্বজনীন কোন মিল না থাকলেও সকল প্রাণী’র একমাত্র মিল হচ্ছে সবাই মরনশীল!!!
সুতরাং, মৃত্যু নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোন লজিক নেই!!! মৃত্যু’র চেয়ে বড় সত্য নাই!
কথা সাহিত্যিক বিএ সিরাজ এ কথাটি জানতেন, মৃত্যু নিয়ে তিনি ভাবতেন। তিনি মৃত্যু’র জন্য প্রস্তুত ছিলেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে দেশে এসে ঘুরে গিয়েছেন, মায়ের সাথে, প্রিয় মানুষগুলোর সাথে দেখা করে গেছেন, প্রিয় বাংলাদেশকে দেখে গেছেন, তার কথা বার্তা এমন লেখাগুলো দেখে সহজেই বুঝা যায় এই মানুষটি মৃত্যু’র ব্যাপারে সচেতন ছিলেন!
কক্সবাজারসহ সারাদেশে না হলেও অন্তত লক্ষ মানুষ তার জন্য প্রকাশ্যে বা মনে মনে কাঁদবে। একজন মানুষের জীবনে এর চেয়ে সুন্দর সমাপ্তি আর কি হতে পারে?
আমার একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি, প্রিয় মানুষের জন্য এত মানুষের ভালবাসা দেখে আমার অনেক গর্ব হচ্ছে!
বিএ সিরাজ এমনই একটি জীবন যাপন করে গেছেন, যার সামনে মৃত্যুও মলিন হয়ে গেছে!!!
এমন অবস্থায়, এই দুনিয়া থেকে এভাবে তার প্রস্থানে আমার কেন দুঃখ হবে? তার চেতনা ধারন করেই তাকে আমার সাথে রেখে দেব, যেমনটা ছিলেন এতদিন, আমি শপথ নিচ্ছি আমার মাঝেই তাকে বাঁচিয়ে রাখবো। আমাদের মাঝেই তাকে ধরে রাখবো। যতদিন পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকবো, বিএ সিরাজও আমার সাথেই, আমার মনে, আমার চেতনায়, আমার লেখায় থাকবেন!
কোন নক্ষত্র নিভে গেলে ঐ মহাকাশ কি এসব মনে রাখে। নিভে যাওয়া নক্ষত্রের মত মরে যাওয়া মানুষ-গুলোকে আমরা কি মনে রাখি? যদি রাখিই তবে কতদিন ? মানুষ মরে যায় কাঁদে শুধু তাঁরাই, যারা নির্ভরশীল। জীবিত নির্ভরশীলদের জন্য মৃত্যুটা হয়তোবা মৃত ব্যক্তির চেয়েও বড় বেশী ভয়ংকর। আমার চাচাত ভাই আবু বকর এর জন্য এখন সময়টা বড় বেশী ভয়ঙ্কর। হ্যাঁ আমার রাজনৈতিক পিতা সড়ক দুর্ঘটনায় আজ ২ মে সন্ধ্যায় চলে গেলেন। এ ছিন্নতা যে চিরদিনের, এ হারানোতো জীবনের তরে। বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর, মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে নাকি প্রিয় আপন মানুষগুলোকে দেখতে ইচ্ছে হয়, কাছে পেতে ইচ্ছে হয়।
… মৃত্যু কি ?? শাব্দিক ভাষায় মৃত্যু (Death) বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। অন্য কথায়, মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা  (state, condition ) যখন সকল শারিরীক কর্মকা- যেমন শ্বাসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোন জীবের মৃত্যু হলে তাকে মৃত বলা হয়।
মৃত্যু বিভিন্ন স্তরে ঘটে থাকে। সোমাটিক মৃত্যু হল সামগ্রিকভাবে কোন জীবের মৃত্যু। নির্দিষ্ট অঙ্গ, কোষ বা কোষাংশের মৃত্যুর আগেই এটি ঘটে। এতে হৃৎস্পন্দন, শ্বসন, চলন, নড়াচড়া, প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও মস্তিষ্কের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সোমাটিক মৃত্যু ঠিক কখন ঘটে তা নির্ণয় করা দুরূহ, কেননা কোমা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং ঘোর বা ট্রান্সের মধ্যে থাকা ব্যক্তিও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে থাকেন। সোমাটিক মৃত্যুর পর অনেকগুলি পরিবর্তন ঘটে যা থেকে মৃত্যুর সময় ও কারণ নির্ণয় করা যায়। মারা যাবার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়, যাকে বলে Algor mortis। মারা যাবার পাঁচ থেকে দশ ঘণ্টা পরে কংকালের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলে Rigor mortis, এবং এটি তিন-চার দিন পরে শেষ হয়ে যায়। রেখে দেয়া দেহের নীচের অংশে যে লাল-নীল রঙ দেখা যায়, তাকে বলে Livor mortis; রক্ত জমা হবার কারণে এমন হয়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়, তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন হারে মারা যায়। সোমাটিক মৃত্যুর ৫ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলির মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হৃৎপি-ের কোষগুলি ১৫ মিনিট এবং বৃক্কেরগুলি প্রায় ৩০ মিনিট বেঁচে থাকতে পারে। এই কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদ্যমৃত দেহ থেকে সরিয়ে নিয়ে জীবিত ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব
মৃত্যু জগতটা আসলে কেমন? জীবিত কোন মানুষই কখনও জানতে পারবে না এই অনুভুতি, এ এমনই এক শ্বাশ্বত ব্যাপার। হুমায়ূন আহমেদ এর উদ্ধৃতি দিয়েই বলি, মৃত্যুকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমরা যে ব্ঁেচে আছি এটাই একটা মিরাকল। অন্য ভুবনের দিকে যাত্রার আগে আগে সবাই প্রিয়জনদের দেখতে চায়। মৃত্যুর সময় পাশে কেউ থাকবে না, এর চেয়ে ভয়াবহ বোধ হয় আর কিছুই নেই। শেষ বিদায় নেয়ার সময় অন্তত কোনো একজন মানুষকে বলে যাওয়া দরকার। নিঃসঙ্গ ঘর থেকে একা একা চলে যাওয়া যায় না, যাওয়া উচিত নয়। এটা হৃদয়হীন ব্যাপার।”
মৃত্যুর পূর্বে ফরাসি লেখক কবি ও নাট্যকার ভিকটর হুগো নাকি মৃত্যু কি তা দেখে গেছেন। তিনি সেটিকে কালো রঙ্গের আলো বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাহিত্যিক ও হেনরি (উইলিয়াম সিডনি পোর্টার) মৃত্যুকে বাড়ি ফেরার সাথে তুলনা করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে তার চরম আকুতি ছিল, “আলোগুলো জ্বালিয়ে দাও। অন্ধকারে আমি বাড়ি ফিরতে চাই না।”
স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যু নিয়ে আছে সকলেরই ভয়। যারা পরকাল বা বেহেশত- দোজখ বিশ্বাস করেন না তাদেরও আছে মৃত্যুভীতি। যদিও নতুন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলছে মৃত্যুই জীবনের চূড়ান্তরূপ নয়।
কোয়ন্টাম পদার্থবিদরা বলেছেন, কোনো ঘটনার সবদিক একবারে হিসাব করা যায় না। বরং কয়েকটি ভিন্ন সম্ভবনায় ভাগ করে একটাকে অনির্দিষ্ট ধরে আরেকটা সম্ভাবনা যাচাই করতে হয়। কিছু মানুষ অবশ্য মৃত্যুকে ভয় পাননি, মেনে নিয়েছেন হাসি মুখে। মৃত্যু মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেজিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসন আপনজনদের বলেছেন, “আহা, কান্না করো না। ভালো মানুষ হও, দেখা হবে স্বর্গে।” বিবর্তনবাদের প্রবর্তক ডারউইন তার মৃত্যুর পূর্বে ঘোষণা দিয়ে গেলেন যে তিনি মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় পাচ্ছেন না। কিংবদন্তী বিপ্লবী চে গুয়েভারা মৃত্যুর পূর্বে জানিয়ে গেলেন যে, মৃত্যু কেবল মানুষকে শেষ করে, বিপ্লবকে নয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “মৃত্যু পরে” কবিতায় বলে গেছেন মৃত্যু মানেই সব কিছুর শেষ,
“আজিকে হয়েছে শান্তি, জীবনের ভুলভ্রান্তি, সব গেছে চুকে।
রাত্রিদিন ধুক ধুক, তরঙ্গিত দুঃখসুখ, থামিয়াছে বুকে।
যত কিছু ভালোমন্দ, যত কিছু দ্বিধা দ্বন্দ্ব, কিছু আর নাই।
বলো শান্তি, বলো শান্তি, দেহ সাথে সব ক্লান্তি, হয়ে যাক ছাই।”,
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা মৃত্যুকে সৃষ্টি করে ৭০ হাজার জিঞ্জীর দ্বারা আবদ্ধ করে ৭০হাজার পর্দার আড়ালে রেখে দিয়েছিলেন। সেই জিঞ্জীর এত বড় ছিল যে একটা তেজী ঘোড়া সহ¯্র বছর পাড়ি দিলেওতার একটি প্রান্ত অতিক্রম করতে পারবেনা। ফেরেশতাগন কেউই জিঞ্জীরের শব্দে ভয়ে মৃত্যুর কাছে যেতো না বলেই মৃত্যু যে কি জিনিস তারা সেটা জানতো না। একদিন আল্লাহ তাআলা সকল ফেরেশতাদের ডেকে মৃত্যুকে পর্দার আড়াল থেকে উন্মোচন করলেন। কিন্তু ফেরশতাগণ মৃত্যুর ভয়ানক আকৃতি দেখে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে অঞ্জান হয়ে পড়ে থাকলেন। তার পরমহান আল্লাহতা’লা হাজার বছরপর ফেরশতাদের জ্ঞান ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ এর থেকে বড় কিছু কি আপনি সৃষ্টি করেছেন ? তখন মহান আল্লাহ তাআলা বললেনঃ আমি মৃত্যুকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি এর চেয়েও বড়।”
সুতরাং, সৃষ্টির শ্বাশ্বত এই সত্যকে মেনে নিয়েই সত্য ও সুন্দর জীবন যাপন করাই হোক আমাদের সকল প্রত্যয়। সকল মৃত মানুষের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। তাদের পর কালের জীবনটা সুন্দর ও আনন্দময় হোক। আমার রাজনৈতিক গুরু, কথাসাহিত্যিক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব বি.এ সিরাজ এর আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান রাব্বুল আলামীন যেন আমাদের এই বিয়োগব্যাথা সইবার ক্ষমতা দেন এবং মরহুমকে জান্নাতবাসী করেন।
লেখক পরিচিতি : মরহুম বি.এ সিরাজের ¯েœহতুল্য প্রিয় রাজনৈতিক কর্মী মো: আকতার হোছাইন কুতুবী
সহ-সম্পাদক, জাতীয় দৈনিক আমার কাগজ, দি গুড মর্নিং, প্রধান সম্পাদক জাতীয় ম্যাগাজিন জনতার কণ্ঠ, উপদেষ্টা সম্পাদক জাতীয় ম্যাগাজিন জাতির আলো, ঢাকা। মোবাইল : ০১৮২২৮৫৮৪০০, ই-মেইল: akterkutubinews@gmail.com