অনলাইন ডেস্ক : শুধুমাত্র আলিঙ্গনের মতো গুরুতর ‘পাপ’ করায় তরুণী-তরুণীকে গণধোলাইর শিকার হতে হয়েছে। মার খেতে হয়েছে ‘নীতি পুলিশ’দের হাতে। সোমবার রাতে কলকাতা মেট্রোতে ঘটেছে এই ঘটনা।

দমদমগামী মেট্রো ট্রেনে আসছিলেন দুই তরুণ-তরুণী। ভিড়ের ট্রেনে ঝাঁকি থেকে রক্ষা পেতে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। আর এই দৃশ্য সহ্য হয়নি সহযাত্রীদের। ট্রেনের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় নানারকমের কটাক্ষ। প্রতিবাদ করেছিলেন ওই তরুণ। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সহযাত্রীরা।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেদককে জানান, ‘দমদমে মেট্রোর দরজা খুলতেই ওই যুগলকে হিড় হিড় করে টেনে প্ল্যাটফর্মে নামালেন অতি উৎসাহী জনতা। তারপর শুরু হলো গণধোলাই। প্ল্যাটফর্মের দেয়ালে ঠেসে ধরে শুরু হলো বেদম মার। সঙ্গী তরুণকে বাঁচাতে তখন অসহায়, উদভ্রান্ত তরুণী বাধা দিতে চেষ্টা করেন। কিল, চড়, ঘুষি, লাথির মাঝে ঢুকে পড়ে সামনে থেকে জাপটে ধরলেন তরুণকে, আড়াল করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাতেও থামল না অতি উৎসাহী জনতার ভিড়। তরুণীর পিঠের ওপরেই পড়তে থাকল কিল আর চড়। সেই ফাঁকফোকর দিয়ে মার চলল তরুণের ওপরেও। আমি নিজে মার খেয়েও ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি।’

তিনি আরো জানান, ‘যারা এই গণধোলাইতে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই কিন্তু মধ্যবয়সী বা প্রৌঢ় বা প্রবীণ। অনেক বেশি সংযত, পরিশীলিত আচরণ প্রত্যাশিত যাদের থেকে, তাদের আচরণই সবচেয়ে উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছিল। ওই সময় ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে এলেন কয়েকজন তরুণ এবং নারী। মেট্রোরই অন্য কামরায় ছিলেন ওরা। উত্তপ্ত ভিড়টার মাঝে ঢুকে পড়ে কোনও রকমে আটকে দিলেন মারধর। তারপর ভিড়ের মাঝখান থেকে উদ্ধার করে সিঁড়ির নিচের দিকে কিছুটা এগিয়ে দিলেন তরুণ-তরুণীকে।’

সামান্য আলিঙ্গনের জেরে এভাবে মেজাজ হারানোয় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে নাগরকি সমাজ অসহায়তা নিয়ে।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংগীত শিল্পী নচিকেতা বলেন, ‘আমি অনেক দিন আগেই গান লিখেছিলাম, প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ, ঘুষ খাওয়া কখনই নয়। এই যে লোকগুলো এই জঘন্য কাজটা করল, তারা নিজেদের কর্মজীবনে কোনও অপরাধ করেনি? তারা কখনও ঘুষ খায়নি? কোনও অন্যায় সুবিধা নেয়নি? পুলিশের উচিত, এই লোকগুলোকে খুঁজে বের করে জেলে ঢোকানো। এদের শাস্তি হওয়া দরকার।’