জামাল জাহেদ, চট্টগ্রাম থেকে:

যে কোন মুহুর্তেই আসতে পারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের কমিটি। পুনরায় চবির ছাত্রসংগঠনকে ত্বরান্বিত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

বিগত দিনের মতো এবারো সভাপতি পদে (সাবেক মহিউদ্দিন গ্রুপ) বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী পক্ষের জোর তদবির ।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদকের পদে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী পক্ষের নেতৃত্বের দৌড় । দুই অনুসারীতে দুই পদ যাবে এমনটি সর্বত্রেই গুঞ্জন উঠেছে।

যদিও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে উভয় পক্ষ থেকেই পদ প্রত্যাশী ৩৮জন নেতাকর্মীরা দৌড়ে রয়েছেন।

এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, গ্রুপিং ও মারামারির নানা অভিযোগের তকমা।

এছাড়া হত্যা মামলাসহ বিশৃঙ্খলার দায়ে অনেকে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তারপরেও নানা ছলচাতুরী ও লুকোচুরি ভাবে পদ ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে একটি অংশ।

কিন্তু কেন্দ্র তার পুর্বের সিদ্ধান্তেই অটল।  ক্লিন ইমেজের ত্যাগী ছাত্রদের হাতেই সভাপতি ও সম্পাদক পদ তুলে দিতে বদ্ধপরিকর।

বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার নওফেল গ্রুপের হয়ে সভাপতি হতে তোড়জোড় চালানো চবির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বী সুজন। যার বিরুদ্ধে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শত কোটি টাকার টেন্ডারবাজির অভিযোগ।

অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিও তিনি। আড়াই বছর ধরে কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ কমিটি দুইবার স্থগিত ও শেষ দিকে বাতিল করে দেয়।

যদিও ফজলে রাব্বী সুজন সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মিথ্যা আর উদ্দেশ্য প্রণোদিতের দোহায় দিয়ে।

অন্যদিকে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছে ২০০৮-০৯ সেশনের ছাত্র মুনতাসির মুন।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিটি মেয়র আজম নাছিরের অনুসারী ‘একাকার’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। গ্রুপ পাল্টে তিনি বর্তমানে সুজনের অনুসারী হয়ে রাজনীতি করছেন।

এ পদে প্রার্থী হয়েছেন ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী এসএম জাহিদুল আওয়াল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তাপস সরকার হত্যা মামলা চার্জশিটভুক্ত আসামি।

সভাপতি প্রার্থী মো. নুরুজ্জামান বিগত তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে দায়ের হওয়া অস্ত্র আইনের একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

এছাড়া আল মোকররম পলাশ বিবাহিত হয়েও চবি ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাইজিদ মিয়া সজলের নামে রয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পুলিশের উপর হামলার মামলা।

এসময় তিনি ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

এছাড়াও সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন রেজাউল হক রুবেল, আলামিন রিমন, জিয়াউর রহমান, এইচএম তারেকুল ইসলাম, জিয়াদ ইমন, আমিনুল ইসলাম রাসেল, মুনমুন আহমেদ ও সৌমেন দাস জুয়েল, জাহাঙ্গির আলম, মোহাম্মদ ইলিয়াস, মাহফুজুর রহমান, মিনহাজুল ইসলাম, সায়ন দাস গ্রুপ্ত ও শরিফুল ইসলাম।

এদিকে নগর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারিদের মধ্য থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন ১৭ জন।

এদের মধ্যে বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবু তোরাব পরশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলা আসামি।

একই পদের প্রার্থী মিজানুর রহমান বিপুল তাপস সরকার হত্যা মামলা চার্জশিটভুক্ত আসামি। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বিগত কমিটির আপ্যায়ন সম্পাদক মিজানুর রহমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি।

একই পদপ্রার্থী ইমাম উদ্দিন ফয়সাল পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হোসেনকে হত্যা প্রচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি।

এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রয়েছেন,রকিবুল হাসান দিনার, বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরনবী প্রিন্স, ইকবাল হোসেন টিপু, আমির সোহেল, মুসলে তুহিন, ইমতিয়াজ উদ্দিন অভি ও ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ।

তবে গ্রহনযোগ্যতা ও ক্লিন ইমেজের দিক দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন রকিবুল হাসান দিনার। যিনি নাট্যকলা বিভাগে অধ্যয়নরত।

সম্পাদক পদে অন্যান্য প্রার্থীরা নানা বিতর্কিত ও মামলার আসামী হলেও দিনার এক্ষেত্রে অত্যন্ত যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বলে তার হাতে সম্পাদকের নেতৃত্ব যেতে পারে।

যিনি কলেজ জীবন হতে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হয়ে ফতেপুর শাখা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি,টিপু -সুজন কমিটির সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক।

অপরদিকে তিনি চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী পরিবারের মরহুম এমএ ওহাবের নাতি। যিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যিনি এক সময় চউকের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ:লীগ এর সভাপতি ছিলেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক দেলাওয়ার শাহজাদা মুঠোফোনে বলেন, ‘আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিনের সাথে পরামর্শ করেই চবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক।

পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও যোগ্য ছাত্রের হাতেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চবি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দিবে।