বিদেশ ডেস্ক:
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং শীর্ষ জেনারেল মিন অং হ্লাং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন নিরাপত্তা পরিষদের ৩০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল। জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, সোমবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে পৌঁছার পর ডি-ফ্যাক্টো সরকারের ওই দুই শীর্ষ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর থেকে বৈঠকের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানানো হয়নি।

শনিবার (২৮ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কুয়েত থেকে বিমানযোগে সরাসরি বাংলাদেশের কক্সবাজার বিমান বন্দরে পৌঁছান ৩০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল। কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে পৌঁছানোর পর হোটেলটির সম্মেলন কক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবসন কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ড পরিদর্শন করেন তারা। ৩০ এপ্রিল (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তারা মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে পৌঁছানোর পর সু চি ও মিন অং হ্লাং ছাড়াও সরকার, আইনপ্রণেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল। চীনা বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানায়, রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমারের নেত্রী সু চির এটাই প্রথম বৈঠক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী, ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সোমবার বিকাল বেলা। বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সেটা নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি এখনও। তবে আজ (মঙ্গলবার) রাখাইন সফর শেষে প্রতিনিধিদলটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলের সঙ্গে জাতিসংঘ দলের বৈঠক

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত লাখের মতো মানুষ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

চলতি মাসের শুরুতেই ভয়েস অব আমেরিকার খবর থেকে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের চলমান সফরের কথা জানা গিয়েছিল। পরিষদের বর্তমান প্রধান ও পেরুর রাষ্ট্রদূত গুস্তাভো মেজা-কুয়াদ্রা সে সময় জানিয়েছিলেন, চলতি মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আসবেন তারা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা এই সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। মিয়ানমার সরকার এই সফরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। আমরা অবশ্যই রাখাইন রাজ্যে যেতে চাই।’ পরে সফরের দিনক্ষণ জানানো হয়।