ডেস্ক  নিউজ:
নিজের দুই শিশুকন্যাকে ছুরির আঘাতে হত্যার পর মা জেসমিন আক্তার নিজেই আত্মহত্যা করেছেন- এমনটি ধারণা পুলিশের। অন্যদিকে পরিবার বলছে, জেসমিন আক্তার ছিলেন হতাশাগ্রস্ত। কোনো কিছুতেই মানসিক স্বস্তি অনুভব করতেন না।

‘হতাশা থেকেই এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হতে পারে’- বলছেন জেসমিন আক্তারের পরিবার ও তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

পরিবারের অভিমত, স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরি করায় দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে জেসমিন আক্তার ছিলেন হতাশায়। এছাড়া অনেক দিন ধরে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। এ কারণে দুই শিশুকন্যাকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

সোমবার সন্ধ্যার পর খবর পেয়ে রাজধানীর দারুসসালাম থানার পাইকপাড়া সি টাইপ সরকারি কোয়ার্টারের ১৩৪নং ভবনের চতুর্থতলা থেকে মা ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত মা জেসমিন আক্তার (৩৫) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোষাধ্যক্ষ পদে চাকরি করতেন। স্বামী হাসিবুল ইসলাম জাতীয় সংসদের সহকারী লেজিসলেটিভ ড্রাফটম্যান হিসেবে কর্মরত। হাসিবুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুর গ্রামে। জেসমিনের বাবার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।

নিহত দুই মেয়ের নাম হাসিবা তাহসিন হিমি (৮) ও আদিবা তাহসিন হানি (৪)। হাসিবা মডেল একাডেমিতে ক্লাশ টুতে পড়তো। মর্মান্তিক ওই হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল ইসলাম, মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আহমদ, দারুসসালাম জোনের সিনিয়র এসি জাহাঙ্গীর আলম ও দারুসসালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান।

ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনার মোটিভ অনুযায়ী, মা জেসমিন আক্তার নিজের দুই শিশুকন্যাকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন। রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল।

‘তবে ওই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ অথবা কোনোভাবে অন্য কারও যোগসাজশ রয়েছে কিনা- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে জানা যাবে আসল কারণ’- উল্লেখ করেন তিনি।

সুরতহালের সময় অংশ নেয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, মা জেসমিন ও এক শিশুর মরদেহ ফ্লোরে পড়েছিল। অপর মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ ছিল বিছানায়। জেসমিন আক্তারের গলা ও দুই হাতের কবজি কাটা এবং পেটে ৮-১০টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। বড় মেয়ের হিমির বুকে তিনটি ছুরির আঘাত, হাতের কবজি কাটা ও গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ছোট মেয়ে হানির পেটে একটাই ছুরির আঘাত এবং তার নাড়িভুড়ি বের হওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।

‘দেখে যে কারো মনে হবে অন্য কেউ হত্যা করেছে। কিন্তু রহস্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, দরজা ভেতর থেকে সিটকিনি লাগানো ছিল।’

রাত সাড়ে ১০টার পর পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আট সদস্যের সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

m

গত তিন বছর ধরে বোন জেসমিন আক্তারের সঙ্গে একই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন ছোট ভাই শাহিনুর ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বোনের মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। গত মাসেও ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। সবসময় দুশ্চিন্তা করতো। মানসিক চাপে থাকতো। আপার মানসিক সমস্যার কারণে চিকিৎসা চলছিল কলকাতায়। প্রায় নির্ঘুম কাটাতেন তিনি। আবার কখনও অঘোরে ঘুমাতেন। মাঝেমধ্যে অসংলগ্ন ও এলোমেলো কথা বলতেন।’

শাহিনুর ইসলামের ধারণা, আনুমানিক বিকাল ৪টা থেকে সোয়া ৫টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ‘আমি মাগরিবের নামাজে আগে বাসায় প্রবেশ করি। দুলাভাই বলছিলেন, তোর আপা দরজা খুলছে না। দেখ তো ডেকে। গিয়ে দেখি রুম আটকানো। টিভির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। প্রথমে ভাবলাম হয়তো ঘুমাচ্ছে। কিন্তু অনেক ডাকাডাকিতেও কোনো উত্তর না মেলায় টেনশন শুরু হয়। ভেবেছিলাম ফের ঘুমের কোনো ঔষধ খেয়ে বসলো কিনা। এর মধ্যে দুলাভাই মাগরিবের নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষ হওয়ামাত্র দুলাভাইকে ফোন করে ডাকি। ফিরে এসে তিনি দরজার ছিদ্র দিয়ে দেখেন মেঝেতে রক্ত। তিনি চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এরপর আর দেরি করিনি। পুলিশকে ফোন করি। দরজা ভেঙ্গে ভেতরে দেখি, সব শেষ।’

জেসমিনের খালাতো বোন রেহানা পারভীন জানান, আপার মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। সোহরাওয়ার্দীসহ ভারতেও চিকিৎসা নিয়েছে। মানসিক রোগী ছিলেন না, তবে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিলেন।

‘সন্তানদের জন্য সবসময় দুশ্চিন্তা করতেন। কিন্তু এমনটি কখনও হবে ভাবতে পারছি না’- যোগ করেন তিনি।