ডেস্ক নিউজ:

বজ্রপাত বাড়লো, বৃষ্টিতে ভিজে খেলার দিন ফুরালো বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া মুশফিক। সে মায়ের কাছে বায়না ধরেছে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলার। কিছুক্ষণ পর পরই মুশফিক মাকে বলছে মা যাই বৃষ্টি চলে যাবে মায়ের সাফ কথা কোনোভাবে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। মুশফিকের মতো এমন অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশের অনেক শিশুদের।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, আগে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতাম। বৃষ্টি শুরু হলেই বন্ধুর মিলে দে ছুট। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুটবল খেলে বাড়ি ফিরে গোসল করতাম। সে দিনগুলো এখন সোনালী হয়ে উঠেছে। কিন্তু যে হারে বজ্রপাত বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সন্তানদের বাহিরে খেলতে দেয়ারতো কথাই আসে না।

শাহজাহান ইসলাম নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ছোট বেলায় ছাদে ফুটবল খেলতাম। বন্ধুরা মিলে বৃষ্টিতে ভিজতাম কিন্তু এখন নিজের সন্তানকে বৃষ্টিতে ভিজতে দিতে ভয় পাই। বৃষ্টিও যেন এখন কেমন হয়ে গেছে ভিজলেও শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে, ব্যথা করে। তার উপর পত্রিকার পাতা কিংবা টেলিভিশন খুললেই দেখতে পাই নিত্যদিন বজ্রাঘাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বৃষ্টি হলেই সন্তান ও পরিবার নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। স্ত্রীকে বার বার ফোন দিয়ে বলি বাচ্চা যেন ঘর থেকে বের না হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, জলীয় বাষ্প, বায়ুর আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাত বেড়েছে। যার ফলে বজ্রপাতজনিত কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে। শুধু তা নয় উঁচু গাছ কমে যাওয়া ও রাজধানীর ভবনগুলোতে বজ্রপাত ঠেকানোর পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রাণ বাঁচাতে সাবধান থাকা উচিত। তাই এ মৌসুমে মাঠে ও ছাদে না খেলায় উত্তম। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বজ্রপাত ঠেকানোর জন্য উঁচু গাছ অনেক কাজে দেয়। কিন্তু সারাদেশে উঁচু গাছের পরিমাণ কমেছে। যার ফলে বজ্রপাতজনিত কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে। তাই উঁচু গাছ ও তাল গাছ রোপণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

বলেন, বৃষ্টির আগ মুহূর্তে যখন লাইটিং শুরু হয় সে সময় থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়া জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ভারী বৃষ্টিপাতের আগে নিরাপদ স্থান থেকে যায় না। এ মৌসুমে যেখানে বৃষ্টিপাত হয় সেখানে কয়েকঘণ্টা বৃষ্টিপাত হয়। তাই যখন বিদ্যুৎ চমকানো শুরু করবে তখন সে জায়গা থেকে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, বজ্রপাতে সারাবিশ্বের মানুষ আক্রান্ত হয়। এটা ঠেকানোর ক্ষমতা আমাদের কারো নেই। যেহেতু ঘনঘন বজ্রপাত হচ্ছে। তাই সচেতন হতে হবে। কারণ জনসংখ্যা বেড়েছে, বজ্র ঠেকাতো কিন্তু এখন উঁচু উঁচু গাছের সংখ্যাও কমেছে। মাঠে ঘাটে উঁচু গাছের পরিমাণও কমেছে। আগে বৃষ্টিতে ভিজে খেলার মতো পরিবেশ ছিল। আগে মাঠের আশপাশে গাছপালা থাকতো। কিন্তু এখন সেই পরিবেশ নেই। শুধু তাই না জাতীয় বিল্ডিং কোডে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড বা আর্থিং বাধ্যতামূলক করা হলেও রাজধানীর নব্বই ভাগ ভবনে বজ্রপাত নিরোধক কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ছাদে না খেলাও উত্তম।

তিনি আরও বলেন, উঁচু তালগাছ, খেজুরগাছ লাগানো ছাড়াও আর্থিংয়ের মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকা যায়। যে স্থানে বজ্রপাত হবে সেখানে সবচেয়ে উঁচু যে বস্তুটি থাকবে বজ্রপাত মূলত তার উপর গিয়ে পড়ে। মানুষের হাতে ব্যবহৃত মোবাইলসহ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বজ্রপাতের সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই এগুলোতে প্রটেক্টর ব্যবহার করলে বা চামড়ার আবরণ দিয়ে ব্যবহার করলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এছাড়া গাড়িতে বসে থাকার সময় যদি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে তাহলে ধাতব পদার্থ থেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে বসতে হবে।- আরটিভি অনলাইন