বিশেষ প্রতিবেদক:

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা সম্রাট টেকনাফের নুরুল হক ভূট্টোকে কক্সবাজার কারাগারের কারাফটক থেকে নিরাপত্তা দিয়ে গোপন আস্তিনায় নিয়ে গেলো সাংবাদিকেরা। ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে কক্সবাজারে সাংবাদিকদের একটি সিন্ডিকেট করাফটক থেকে ঐ ইয়াবা ব্যাবসায়ীকে নিজ আস্তানায় পৌছিয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিকদের সাথে কক্সবাজারের ৩ সরকারীদল নারী নেত্রীও ছিলো বলে জানাগেছে। অথচ এই ইয়াবা ব্যবসায়ী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলো সময় টিভির কক্সবাজার স্টার্ফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন রুবেল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের তৌফিকুল ইসলাম লিপু, একাত্তর টেলিভিশনের কামরুল ইসলাম মিন্টু ও তাদের ৩ ক্যামেরাপার্সন সহ ৬ সাংবাদিক। সেই ঘটনায় দেশব্যাপি তিব্র আন্দোলনে নেমেছিলো সাংবাদিকেরা।

সরকারী একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানাগেছে, আদালত থেকে ৮টি মামলায় জামিন নিয়ে শুক্রবার সকালে কারাগার থেকে বের হয় ইয়াবা সম্রাট ভূট্টু। কক্সবাজার কারাগার থেকে ভূট্টু বের হওয়ার খবরে তার গতিবিধি লক্ষ করতেই সরকারী ৫টি সংস্থার লোক কারা ফটকে আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছিলো । ভূট্টু কারাগার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সাংবাদিকেরা ক্যামেরা ধরে ৩ নারী নেত্রীর সহায়তায় তাকে গাড়িতে তুলে নিরাপদ আস্তানায় নিয়ে যায়। ইয়াবা সম্রাট ভূট্টুকে সাংবাদিক ও সরকার দলিয় নেত্রীর নিরাপত্তা দিয়ে সরিয়ে নেয়ার দৃশ্যের ভিডিও ও ছবি ধারণ করেন গোয়েন্দা সংস্থাসহ কয়েকটি আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকজন। বিষয়টি ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নেয়া ও একজন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদে গোপন আস্তানায় পৌছে দেয়ার ঘটনায় কক্সবাজার জুড়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আর এই ঘটনায় হতভাগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন আইশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানাযায়, শীর্ষ এই ইয়াবা সম্রাটকে নিরাপদে গোপন আস্তানায় পৌছে দেয়ার জন্য সাংবাদিকের সিন্ডিকেটটিকে ১০ লাখ টাকায় কন্ট্রাক্ট করা হয়। সূত্রটি জানিয়েছে, কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী কক্সবাজারে কর্মরত ৭টি টেলিভিশনের সাংবাদিক ও তাদের ৭ জন ক্যামেরাপার্সন, ২ জন স্থানিয় পত্রিকার সাংবাদিক শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে করাফটকে অবস্থান নেয়।

ঐসময় কারাফটকে উপস্থিত জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ভূট্টুর মতো ইয়াবা সম্রাটের জন্য লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে যদি সাংবাদিকেরা নীতি নৈতিকতার বিসর্জন দিলো। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কারফটকে সাংবাদিকদের এইধরনের লজ্জা জনক ঘটনা দেশে আর কোথাও হয়নি। সাংবাদিকরা যদি এইভাবে ইয়াবা সম্রাটদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়, তাহলে কিভাবে দেশ থেকে মরণ নেশা ইয়াবা রুদ করা যাবে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু বলেছেন, টেকনাফের ইয়াবা সম্রাট নুরুল হক ভুট্টো ও তার বাহিনীর হাতে আমি, সময় টিভির রুবেল, একাত্তর টিভির মিন্টুসহ আমাদের ক্যামেরা পারর্সনদের রক্ত ঝরেছিল। সে রক্তের উপর পারা দিয়ে আমাদেরই কয়েকজন সাংবাদিক সে কুখ্যাত ভুট্টোকে কারা ফটকে ক্যামেরা নিয়ে নিরাপত্তা দিতে গেলেন।

কক্সবাজারসহ সারা দেশের সাংবাদিকরা ভুট্টোর শাস্তির দাবিতে হয়েছিল সোচ্ছার। সেখানে সামান্য কিছু টাকার জন্য আমাদের কয়েকজন সাংবাদিক তাকে পাহারা দিতে গেলো। তিনি বলেন, সহকর্মীদের এই আচরনে এই মুহুর্ত্বে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করছে।

কক্সবাজার জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ জানান, টেকনাফের নাজির পাড়ার এজাহার মিয়ার পুত্র নুরুল হক ভূট্টো ৮টি মামলা নিয়ে কারাগারে আসে। তৎমধ্যে অধিকাংশই ইয়াবার মামলা। গত কয়েক দিন আগেই তার জামিন হয়। শুক্রবার সকালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তখন প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ছিল। পাশাপাশি ক্যামেরা সহকারে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও করা ফটকে ভিড় জমায়। কারফটক থেকে ২টি গাড়ি করে সাংবাদিক ও নারী নেত্রীরা ভূট্টুকে নিয়ে যায়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, ইয়াবা সম্রাট ভূট্টুর কারাগার থেকে বের হওয়ার খবরে গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হচ্ছিলো। তার গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্যই সরকারী একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কারাফটকে ছিলো। কারাফটক থেকে সাংবাদিক ও কয়েকজন নেত্রী ভূট্টুকে নিরাপত্তা দিয়ে আত্মগোপনে নিয়ে গেছে। এতেকরে ভূট্টুকে নজরদারি করা সম্ভব হয়নি। ইয়াবা ব্যবসা ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দমনে তিনি সাংবাদিক ও সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।