সিবিএন ডেস্ক:

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। শনিবার বিকালে কুয়েত থেকে সরাসরি কক্সবাজারে অবতরণ করবে নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল। রবিবার তারা জিরো পয়েন্ট ও কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

প্রতিনিধি দলে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ ১০ জন স্থায়ী প্রতিনিধি, পাচঁজন উপ স্থায়ী প্রতিনিধিসহ প্রায় ৩০ জন প্রতিনিধি থাকবেন। তাদের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করবে বাংলাদেশ। সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, এ সমস্যার মূল কারণ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে তাদের নাগরিকত্ব না থাকা। ফলে এর সমাধান একমাত্র মিয়ানমারই করতে পারে। সেজন্য এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে।

সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৭৮, ১৯৯২, ২০১২, ২০১৬, ২০১৭ সালে যা ঘটেছে তার মূল কারণ ছিল যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক না। আমরা এ বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলকে বিশদভাবে জানাবো।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শনিবার প্রতিনিধি দলকে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ব্রিফ করা হবে।’

ব্রিফে কী থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমরা আলোকপাত করবো। যেমন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া, প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা পরিষদ কী করতে পারে।

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহ থাকলেও একাধিক ভেটো ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদে কোনও প্রস্তাব আনা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রতিনিধি দলকে এই বার্তা দিতে চাই যে, তোমরা নিজেরা দেখে যাও, রোহিঙ্গারা কী অবস্থায় আছে।’

তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে হয়তো এখন কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটি নিয়ে বাংলাদেশ বারবার বললে তারা বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে হয়তো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। এ ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। আমরা আশাবাদী।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ সফরেরও ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হেলিকপ্টারে করে ঘুরে দেখতে আগ্রহী বলে মিয়ানমারকে জানিয়েছেন।

৬০-এর দশকে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করলে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও বৈষম্যের খড়গ নেমে আসে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৭৮ সালে প্রথম রোহিঙ্গা ঢল আসে বাংলাদেশে। এরপর ১৯৯২ সালে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। ২০১২ সালে জাতিগত দাঙ্গার অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।

২০১৬ সালে রাখাইনে পুলিশ চৌকিতে হামলার অজুহাতে আবার নতুন করে রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুরু হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এর আগে থেকে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে।