ছিনতাইয়ের শিকার হোটেল শ্রমিক আবদুল হামিদ।

সিবিএন:
কক্সবাজার শহরজুড়ে ছিনতাইকারীদের দাপট বেড়েছে। অলিগলিতে ছদ্দবেশে প্রতিদিন আনাগুনা চোখে পড়ার মতো। টার্গেট করে হামলে পড়ছে সাধারণ মানুষের উপর। কিন্তু ছিনতাই দমনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে স্থানীয়দের ভীতি বাড়ছে আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৯টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র রক্ষিত মার্কেটের সম্মুখের শেখ রাসেল সড়কে আবদুল হামিদ (২৭) নামে এক হোটেল শ্রমিকের উপর হামলে পড়ে ছিনতাইকারীরা।
এ সময় তার পকেটে থাকা মোবাইল ও নগত টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। মারধর করার সময় সে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী খবর বিতানে গিয়ে প্রাণে বাঁচে। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।
ছিনতাইয়ের শিকার আবদুল হামিদ শহরের কলাতলী সৈকতপাড়ার সফর আলীর ছেলে এবং বাহারছড়া শাহ মজিদিয়া হোটেলের বাবুর্চি।
ছিনতাইকারীরা সংখ্যায় ৭/৮ জনের মতো ছিল। অধিকাংশের বাড়ী শহরের ঘোনারপাড়ায় বলে স্থানীয়রা জানায়। তাদের দু’য়েক জনকে সমিতি পাড়ার বাসিন্দা বলেও প্রত্যক্ষর্দীরা জানিয়েছে। তবে, কারো পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার ঘবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই এমরানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তবে, অপরাধী শনাক্ত না হওয়ায় কাউকে ধরতে পারেনি তারা।
জেলা হোটেল শ্রমিক লীগের সভাপতি রুহুল কাদের মানিক জানান, ছিনতাইয়ের শিকার আবদুল হামিদ তাদের সংগঠনের প্রচার সম্পাদক। ১ মে উপলক্ষ্যে দাওয়াতকার্ড নিতে তাকে একটি প্রিন্টিং প্রেসে পাঠানো হয়েছিল। ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়ে সব হারায়।
তিনি জানান, ছিনতাইকারীরা সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। তাকে মারধর করতে উদ্যত হয়। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে না গেলে হয়তো বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে বের করার দাবী জানিয়েছেন হোটেল শ্রমিক লীগের এই নেতা। পর্যটন নগরীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ওসি মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, ছিনতাইকারীসহ সব অপরাধীর বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থানে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। আটকও হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন ওসি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের ১৫টির বেশি স্পটে ছিনতাইকারীরা উৎপেতে রয়েছে। এসব স্পটগুলো হলো, কলাতলী এলাকার সী-ইন পয়েন্ট, সৈকতের হোটেল সী-ওয়ার্ল্ড রোড, বাহারছড়ার জাম্বুর মোড়, সার্কিট হাউসের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের চত্বর, লালদীঘির পাড়ের বিহারি গলি, হাসপাতাল রোড, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, খুরুশকুল রোডের মাথা, বিজিবি ক্যাম্পের নারিকেল বাগান, প্রধান সড়কের সাবমেরিন ক্যাবল এলাকা, সিটি কলেজের সামনে, হাশেমিয়া মাদ্রাসা পয়েন্ট, কলাতলীর প্রধান সড়কের টিএন্ডটি অফিসের সামনে, আদর্শ গ্রামের সামনেসহ শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্ট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলীরজাহাল কেন্দ্রিক একটি বড় ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এই চক্রের সবাই দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার। তারা বাসটার্মিনাল থেকে শহরের ঝাউতলা পর্যন্ত টমটমে করে চষে বেড়ায়।
সুত্র জানিয়েছে, টমটমের যাত্রীরাই ছিনতাইকারীদের অন্যতম টার্গেট। এই ভয়ংকর চক্রটি সন্ধ্যার পর থেকে তৎপর হয়ে উঠে। তারা টার্গেট করে যাত্রী বেশে টমটমে উঠে পড়ে। শহরের আসার পথে আলীরজাঁহাল থেকে হাশেমিয়া মাদ্রাসা ব্রীজ পর্যন্ত স্থানে সুযোগ বুঝে ছুরির মুখে টমটম চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। তবে ভীতি সৃষ্টির জন্য অধিকাংশ ঘটনায় ছুরিকাঘাত করে।