ইমাম খাইর, সিবিএন:
বছরের পর বছর মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় অনেকেই। আবার মামলার নিষ্পত্তি হলেও বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে থেকে যায় শত্রুতা। মূলতঃ এসব কারণে জনগণকে মামলার গ্রাস থেকে রেহাই দিতেই ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’র (অলটারনেটিভ ডিসপুট রিসলিউশন) ব্যবস্থা চালু করেছে সরকার। সরকারের এই আইনি সহায়তা থেকে সুফল পাচ্ছে মানুষ। বিকল্প পদ্ধতিতে কক্সবাজার লিগ্যাল এইড অফিসে এ পর্যন্ত ১৭৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সুত্র জানিয়েছে, গত এক বছরে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’র আবেদন পড়েছিল ৪৫২টি। চলমান বিরোধ ২৭৭টি। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত জমা পড়া ১৮৮ আবেদন থেকে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৪৯ টি বিরোধ।
সুত্র জানায়, কক্সবাজারে লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম আরম্ভ হয় ২০১৪ সালে। সরাসরি ও জেলখানা থেকে প্রাপ্ত আবেদনসহ এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৯৪৩টি। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বাদে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৫৫টি। মধ্যস্থতার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ৪৬ লাখ ৬২ টাকা আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে এই সংস্থা।
সিনিয়র সহকারী জজ পদ মর্যাদার কর্মকর্তা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে মামলা পূর্ব বিরোধ (প্রি-কেস) এবং চলমান মামলা মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। মামলা পরিচালনার জন্য জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিভুক্ত ৪৬ জন প্যানেল আইনজীবী রয়েছে। সার্বিক তদারককারী হিসেবে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম। লিগ্যাল এইড অফিসের জন্য আলাদা লিগ্যাল এইড অফিসার নিয়োগ করেছে সরকার। বর্তমানে এ পদে আছেন বেগম মৈত্রী ভট্টাচার্য। লিগ্যাল এইডের শুরু থেকে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করেন-যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (অন্যত্র বদলী), যুগ্ম-জেলা জজ (২য় আদালত) সৈয়দ মুহাম্মদ ফখরুল আবেদীন, সিনিয়র সহকারী জজ বেগম তাওহীদা আক্তার, মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী। এ অফিসে কাজ করছে ১জন অফিস সহকারী ও একজন অফিস সহায়ক। তাদের সমন্বয়ে সুন্দর ও গুছালোভাবে সরকারী এই সেবার কাজ চলছে। সেবাপ্রার্থীদের সাধ্যমতো সেবা দেয়া হচ্ছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধীন ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যদি কোনও ব্যক্তি তার মামলাগুলো আপস মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চান, তাহলে তিনি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে শরণাপন্ন হতে পারেন। সেখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার বিরোধ বা মামলা নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন দায়িত্বে থাকা বিচারক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার লিগ্যাল এইড অফিসারকে মামলা নিষ্পত্তির আইনি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধান প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। এরপর লিগ্যাল এইড অফিসাররা ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে জেলা পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু করেন।
২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ এর ৮৯-এ ধারা সংশোধন করে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তির জন্য আদালত থেকে লিগ্যাল এইড অফিসারের কাছে মামলা পাঠানোর ক্ষমতা প্রদান করা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার আপসযোগ্য বিরোধ (প্রি-কেস) ও রেফার করা মামলা (পোস্ট কেস) মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে আসছেন।
এদিকে, আগামীকাল ২৮ এপ্রিল কক্সবাজারে পালিত হচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য -‘উন্নয়ন আর আইনের শাসনে এগিয়ে চলছে দেশ, লিগ্যাল এইডের সুফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ।’
দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষ্যে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গন থেকে র‌্যালী, সাড়ে ৯টায় লিগ্যাল এইড মেলা উদ্বোধন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিস উদ্বোধন, রক্তদান কর্মসূচি, ব্লাড গ্রুপিং ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা।
এরপর জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা সভা জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এবং জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম।